আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

গোয়াইনঘাটে যে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন ইউএনও বিশ্বজিত কুমার

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১২-১১ ২১:০৪:৫৯

এম. এ. মতিন, গোয়াইনঘাট :: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় শিক্ষার গুনগত মান বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল। উপজেলায় নানা সমস্যায় জর্জরিত বিদ্যালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একাধিক বার পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের ফলে তাঁর সংগ্রহে চলে আসে একাডেমিক ভবন সমস্যা, শিক্ষকদের অনুপস্থিতি ও বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ একটি তালিকা। এছাড়াও বিদ্যালয়ের মধ্যে পাঠ চলাকালীন সময়ে শিক্ষকদের হাটবাজারে চলাফেরার অভিযোগ।

বিশ্বজিত কুমার পাল সুকৌশলে সমস্যা জর্জরিত বিদ্যালয়গুলো একাধিকবার পরিদর্শন করে শিক্ষকদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের আবারো বিদ্যালয়মুখী করতে নানা সভা সমাবেশ ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মাসিক সভায় অ্যাডভোকেসী করে অভিভাবকদের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। ফলে গোয়াইনঘাট উপজেলায় দিনে দিনে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ক্ষমতে থাকে। সরকারি নিয়মানুযায়ী বিদ্যায়ল গুলোতে আগমন ও প্রস্থানের উপর তিনি গুরুত্ব দিয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া উপজেলা সদরে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে নজরদারি বৃদ্ধি করে সফলতা অর্জন করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাকে তিনি প্রাধান্য দিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের অত্যাধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়তে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে অনেকটা সফলকামী হন তিনি।

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন বরাদ্দ থেকে বিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক ভবন নির্মাণ, সংস্কার, মেরামতসহ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আন্তরিক কাজ করেন। প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে জনসচেতনতামূলক সভার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের ঘোষিত জাতীয় দিবসগুলো যথাযথ সম্মানে পালনের কঠোরভাবে নির্দেশনা তামিল করান। প্রত্যেকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করে পাঠদানের উপর গুরুত্ব দিয়ে মাল্টিমিডিয়ার ব্যাবহারে সকল শিক্ষকদের উৎসাহিত করে তুলেন তিনি। ক্ষুদ্র, নৃতাত্তি¡্ক জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের আলাদা সম্মানী ভাতা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষায় উৎসাহিত করে সহযোগিতামুলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করেন। জাফলং, গুলনী ও ফতেহপুর চা বাগানের শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষায় এগিয়ে আনতে বাগানগুলোতে তিনি বেশ কয়েকটি সভা করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করেন। ফলে ওই বাগানের শ্রমিক পরিবারগুলোতে দিনে দিনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও তিনি উদ্যোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জাফলং চা বাগানের শ্রমিকদের ছেলে মেয়ে ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ছেলে-মেয়েদের জন্য মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে প্রায় দুইশো জন শিক্ষার্থী ওই প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার টাইপিং, সেলাই প্রশিক্ষন, বাটিকসহ নানা প্রশিক্ষণ গ্রহন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

গোয়াইনঘাট ইমরান আহমদ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় রয়েছে তার এক অনন্য অবদান। ইমরান আহমদ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় গোয়াইনঘাট উপজেলায় নারী শিক্ষার নবজাগরণ সৃষ্টি হয়। ইউএনও বিশ্বজিত কুমার পালের প্রচেষ্টায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হাওরাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাণের সঞ্চার সৃষ্টি হয়। ফলে বর্তমানে হাওরাঞ্চলের প্রতিটি পরিবারে এখন শিক্ষিত লোক পাওয়া যায়। বাঙালি জাতির অতীত ইতিহাস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে ধারণা দেওয়ার জন্য উপজেলার ১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য তিনি উপজেলার ১৩৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা কর্নার চালু করেছেন।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, মানসম্মত শিক্ষার ৪টি মূল উপাদান হচ্ছে প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। এই চারটি উপাদান মানসম্মত হলেই শিক্ষার গুনগতমান নিশ্চিত হয়। এই চারটি উপাদানকে লক্ষ্য করে গোয়াইনঘাট উপজেলায় আমরা মানসম্মত শিক্ষার বিষয়ে কাজ করছি। পাশাপাশি শারীরিকভাবে অক্ষম শিক্ষার্থীর ব্যাপারে আমরা যত্নবান। ফলে দিনে গোয়াইনঘাট উপজেলায় শিক্ষার গুনগত মান নিশ্চিত হচ্ছে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১১ ডিসেম্বর ২০১৯/মতিন/পিডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন