Sylhet View 24 PRINT

ফের আলোচনায় সিলেটের সেই দীঘি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০১-১৪ ০০:০২:৫৪

ছবি: ধোপাদীঘিতে সিসিকের নির্মিতব্য মার্কেটের নকশা।

রফিকুল ইসলাম কামাল :: কোনো এককালে সিলেট পরিচিত ছিল ‘দীঘির শহর’ হিসেবে। সেই সুখ্যাতি হারিয়ে গেছে অনেক দিন হলো। যে কয়টি এখনও ‘নিবু নিবু করে জ্বলছে’, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম ধোপাদীঘি।

কিন্তু এই দীঘির অস্তিত্বও যেন এখন হুমকির মুখে। সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) দীঘির পাড়ে বহুতল মার্কেট নির্মাণ করতে চাইছে। এ উদ্যোগে তারা বেশ খানিকটা এগিয়েও গেছে। তবে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, মার্কেট করার জন্য জায়গার অভাব নেই নগরীতে। কিন্তু দীঘি কিংবা খোলা জায়গার অভাব প্রকট। দীঘির পাড়ে তাই মার্কেট নির্মাণের যৌক্তিকতা দেখছেন না তারা।

জানা গেছে, ধোপাদীঘির পূর্বপাড়ে ‘সিটি বাণিজ্যিক ভবন’ নামে ১২ তলা বিশিষ্ট মার্কেট করতে চায় সিসিক। গত ৬ জানুয়ারি এই বহুতল মার্কেট ভবনের নকশা উন্মোচন করেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্তের বিষয়টি সিলেটভিউকে নিশ্চিত করেছেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘ধোপাদীঘির পাড়ে ১২ তলা বিশিষ্ট ভবন হবে। তবে এখন কাজ হবে ৬ তলার। এ কাজে ব্যয় হবে ২০ কোটি টাকা।’

জানা গেছে, সিলেটের পুরনো কারাগারের পার্শ্বস্থ ধোপাদীঘির নামেই ওই এলাকার নামকরণ হয়। একসময় ধোপা সম্প্রদায়ের লোকজন এই দীঘির পানি ব্যবহার করতেন। প্রায় ছয় একর জায়গা রয়েছে ধোপাদীঘিতে; তন্মধ্যে পাঁচ একরের মালিকানা সিসিকের, এক একন ধোপা সম্প্রদায়ের লোকদের। এই দীঘির উত্তর ও পূর্বাংশে মার্কেট, দোকানপাট গড়ে ওঠেছে; দক্ষিণে আছে ওসমানী শিশু পার্ক। দখল আর অবৈধ স্থাপনায় দীঘিটি মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছিল। ২০১৮ সালে দীঘিটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। নেওয়া হয় ‘বিউটিফিকেশন অব ধোপাদীঘি’ নামের একটি প্রকল্প।

ওই সময় সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছিলেন, ভারতীয় অর্থায়নে ধোপাদীঘিকে আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হবে। দীঘির চারদিকে হবে ৫০৬ মিটার ওয়াকওয়ে (হাঁটার পথ), বসার বেঞ্চ, শিশুদের খেলার জায়গা, পুকুরে দুটি দৃষ্টিনন্দন ঘাট, প্যাডেল বোট প্রভৃতি থাকবে। এছাড়া সবুজ বৃক্ষ দিয়ে নির্মল পরিবেশ আনয়ন করা হবে। সন্ধ্যায় যাতে নগরবাসী এখানে হাঁটাচলা করতে পারেন, সেজন্য করা হবে আলোর ব্যবস্থা।

ধোপাদীঘিকে ঘিরে সিসিকের নান্দনিক পরিকল্পনা ওই সময়ে বেশ আলোচিত হয়। মেয়র আরিফ ২০১৮ সালের শেষদিকে ধোপাদীঘি দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনে উচ্ছেদ অভিযান চালান। ধোপাদীঘি ঘিরে শুরু হয় সংস্কারকাজ। তবে আরিফের সেই ‘নান্দনিক পরিকল্পনা’র কাজ এখন অনেকটাই থমকে আছে। এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ধোপাদীঘিতে নান্দনিকতার কিছুই দৃশ্যমান হয়নি।

এরকম অবস্থায় ধোপাদীঘির পূর্বপাড়ে বহুতল মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিসিক। ১২ তলা বিশিষ্ট (শুরুতে হবে ৬ তলা) এই মার্কেটে আগে উচ্ছেদকৃত ব্যবসায়ীদেরও জায়গা দিতে চায় তারা। ইতিমধ্যে ধোপাদীঘির পূর্বপাড়ে মার্কেটের একটি নকশা সম্বলিত সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে।

জানা গেছে, ধোপাদিঘীতে মার্কেট নির্মাণের কাজ পেয়েছে ঢাকার ঢালী কনস্ট্রাকশন। তবে সিসিক এই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করাতে আগ্রহী নয়। ‘বিউটিফিকেশন অব ধোপাদীঘি’ প্রকল্পের কাজে এই প্রতিষ্ঠান দক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ এবং নির্ধারিত সময়ে কাজের উল্লেকযোগ্য অগ্রগতি হয়নি বলে জানা গেছে।

সিলেটভিউকে যেমনটি বলছিলেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, ‘এই প্রতিষ্ঠানের কাজ সন্তোষজনক নয়। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’

এদিকে, ধোপাদীঘিতে সিসিকের মার্কেট নির্মাণের বিষয়টিকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন সচেতন সমাজের প্রতিনিধিরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম সিলেটভিউকে বলেন, ‘মার্কেট করা হবে, ভালো কথা। কিন্তু ধোপাদীঘি আড়াল করে মার্কেট নির্মাণের যৌক্তিকতা কোথায়। এ দীঘি নিয়ে আগে সিসিক যে পরিকল্পনার কথা বলেছিল, তাও বাস্তবায়ন হয়নি। দীঘি সংরক্ষণে যে গার্ড ওয়াল দেওয়া হয়েছে, তার বাইরেও মাটি ভরাট করে দীঘিকে সংকোচিত করে ফেলা হয়েছে। দীঘি সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধন নিয়ে সিসিক আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আমার মনে হয় সেই প্রতিশ্রুতি থেকে তারা সরে এসেছে, যা দুঃখজনক।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৪ জানুয়ারি ২০২০/আরআই-কে

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.