আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

মোমেনের হাত ধরে সিলেটে যতো মেগা প্রকল্প

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০১-২১ ০০:০২:১৮

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক :: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ভাই আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে সরিয়ে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে ছোট ভাই ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক ‘অভিজ্ঞতাহীন’ মোমেন রাজনীতির ময়দানে এসে কতোটা কী করতে পারবেন, এ নিয়ে তখন সিলেটে ছিল নানা কানাঘুষা। তবে নির্বাচিত হয়ে নিজের অভিজ্ঞতা আর কর্মদক্ষতা দিয়ে সব সংশয় দূর করে দিয়েছেন ড. মোমেন, এমনটাই মনে করেন বিশ্লেষকরা। এক বছরের মধ্যে সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অন্তত তিনটি মেগা প্রকল্পের সুসংবাদ নিয়ে এসেছেন তিনি। এর বাইরে তাঁর সময়ে সিলেটের বিভিন্ন খাতে লেগেছে উন্নয়নের নতুন হাওয়া।

ড. এ কে আব্দুল মোমেন ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে সেখান থেকে দেশে নিয়ে আসেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মোমেনকে রাজনীতিতে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। শেখ হাসিনার পরামর্শে আওয়ামী লীগের সদস্য পদ গ্রহণ করে সিলেটে সক্রিয় হন মোমেন। এরপর নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী দলটির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে পরাজিত করে সাংসদ হন ড. মোমেন। কূটনৈতিক অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ মোমেনকে পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।

জানা গেছে, সাংসদ কিংবা মন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই সিলেটের যোগাযোগব্যবস্থা নিয়ে উচ্চকিত ছিলেন এ কে আব্দুল মোমেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নয়ন ঘটাতে পারলে সিলেট জাতীয় পর্যায়ে আরো অগ্রসর হতে পারবে, এমন ধারণা নিয়ে সচেষ্ট ছিলেন তিনি। সাংসদ ও পরবর্তীতে মন্ত্রী হওয়ার পর তাই যোগাযোগ খাতে বিশেষ দৃষ্টি দেন মোমেন। গেল এক বছরে তাঁর হাত ধরে সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থায় তিনটি মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে। এগুলো হলো সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ছয়লেন প্রকল্প, সিলেট-আখাউড়া রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্প এবং ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প।

জানা গেছে, দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক বর্তমানে দুই লেনে আবদ্ধ। সিলেট অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে এ মহাসড়কটি কমপক্ষে চার লেনে উন্নীত করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও এ মহাসড়ককে চার লেন করার জন্য সচেষ্টা ছিলেন। কিন্তু অগ্রগতি তেমন হচ্ছিল না। সাংসদ হওয়ার পর ড. মোমেন বিষয়টিতে জোর দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে দেনদরবার করে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক দুটি সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীত করার বিষয়টি পাস করান মোমেন। মেগা এই প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থায়ন করবে বলে জানিয়েছেন ড. মোমেন।

এদিকে, সিলেট থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ২৩৯ কিলোমিটার রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর করার প্রকল্পও পাস হয়েছে। এ প্রকল্পের জন্যও সিলেট-১ আসনের সাংসদ ড. এ কে আব্দুল মোমেন সরকারের উচ্চপর্যায়ে নিয়মিত কথা বলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় গেল বছর ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের আখাউড়া-সিলেট সেকশনের মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজ রেললাইনে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের সভায় পাস হয়। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। ড. মোমেন জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সিলেট-ঢাকা কিংবা সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথে ব্রডগেজ ট্রেন ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার ও মিটারগেজ ট্রেন ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। দ্রুততম সময়ে মানুষ ভ্রমণ করতে পারবেন।

জানা গেছে, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও মেগা প্রকল্পের ছোঁয়া লেগেছে। বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ ও নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। নতুন চারটি বোর্ডিং ব্রিজও যুক্ত হচ্ছে এ বিমানবন্দরে। রানওয়ে সম্প্রসারণে ৩৮৭ কোটি টাকার প্রকল্প এবং নতুন টার্মিনাল ভবনসহ অবকাঠামো উন্নয়নে আরো প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ বর্তমানে চলমান। মোমেনের উদ্যোগে বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য ফ্রি ওয়াইফাইও চালু করা হয়েছে। যাত্রীসেবা বাড়াতে এ বিমানবন্দরকে পরিপূর্ণ আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ড. মোমেন।

এদিকে, সিলেট-১ আসনের আওতাভুক্ত এলাকার উন্নয়নে আরো বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এ কে আব্দুল মোমেন। সম্প্রতি সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার উন্নয়নে এক হাজার ২২৮ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়েছে। ৮৭ কোটি টাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ তলা বিশিষ্ট ‘আবুল মাল আব্দুল মুহিত ভবন (হাসপাতাল-২)’ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, শুরু হয়েছে আরেকটি ১০ তলা ভবন নির্মাণের কাজ। এছাড়া হাসপাতালে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এনআইসিইউ চালু ও সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে আইসিইউয়ের। সিলেট নগরীকে তারবিহীন করতে ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি পাইলট প্রকল্প এবং প্রায় ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার কাজও চলমান। পাইলট প্রকল্পের আওতায় নগরীর প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকায় সকল বৈদ্যুতিক তার নেওয়া হবে মাটির নিচে (আন্ডারগ্রাউন্ড)। এসবের বাইরে নিজের সংসদীয় এলাকার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপসনালয়ে বড় অঙ্কের বরাদ্দ দিয়েছেন ড. মোমেন।

সামগ্রিক বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সরকার উন্নয়নের সরকার। আওয়ামী লীগ দেশ ও মানুষের জন্যই কাজ করে। সিলেটে যে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চলছে, তা আরো বেগবান হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের উন্নয়নে আন্তরিক। তিনি ভবিষ্যতে এখানকার উন্নয়নে আরো বড় প্রকল্পের অনুমোদন দেবেন।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২১ জানুয়ারি ২০২০/শাদিআচৌ/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন