আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

যেভাবে ‘অচিনপুরী’ হলেন সিলেটের জহিরুল

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০১-২১ ২১:১৪:৩৪

জুনেদ আহমদ চৌধুরী ::  কেউ ডাকেন জহিরুল ইসলাম, কেউ জহিরুল হক আবার কেউ বলেন অচিনপুরী হিসেবে। তবে অচিনপুরী নামে সিলেটের মো. জহিরল ইসলাম সারা দেশে ইতোমধ্যে বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। পেশায় তিনি একজন চক্ষু বিভাগের ডাক্তার। পাশাপাশি তিনি একজন রেটিনা বিশেষজ্ঞ। সিলেটের একমাত্র রেটিনা বিশেষজ্ঞ অচিনপুরী খ্যাত ডাক্তার জহিরুল ইসলাম। তিনি সারা দেশে সিলেটের আঞ্চলিক গানের এক ক্ষণজন্মা ব্যক্তি হিসেবে বেশ খ্যাতি লাভ করেছেন। গান গেয়ে যে আয় করবেন সেই টাকা দিয়ে সিলেটে একটি ফ্রি চক্ষু হাসপাতাল গড়ে তোলা তাঁর স্বপ্ন! সেই স্বপ্ন নিয়েই তাঁর এখন পথচলা।  

কোন উস্তাদ ছাড়া তিনি হয়ে উঠেছেন একজন শিল্পী। তার গাওয়া ২০০টির মত গানের মধ্যে  ‘খাউজানি’ নামের একটি গানে তিনি সারা দেশে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ‘মুই ভালা নায়, ধুন্দুর মুন্দুর’, ‘মাথা উঁচা করি দেশ বিদেশো ঘুরি’ গানও লাখ লাখ শ্রুতার মন কেড়ে নিয়েছে।

তাঁর সাড়া জাগানো গান ‘খাউজানি’ ফেসবুকে শ্রীহট্র নামের একটি পেজে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ দেখেছে। এরপরে ওই পেজে তাঁর অনেকগুলো গান ভাইরাল হতে থাকে অনবরত। 

১৯৬৯ সালের ১০ অক্টোবর সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বেতসান্দি গ্রামে জন্ম গহন করেন তিনি। তার বাবা ময়না মিয়াও ছিলেন একজন মরমী সাধক। তিনিও গান গাইতেন।

অচিনপুরী একাধারে একজন গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী। তিনি একজন ক্বারিও। ছোট বেলা মাদরাসা থেকে ক্বারিয়ানা পাশ করেছেন। ছাতকের সিমেন্ট ফ্যাক্টরি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে সিলেট এমসি কলেজে ভর্তি হন। পরবর্তীতে সিলেট এম এ জি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে একজন চক্ষু বিভাগের ডাক্তার হন। বর্তমানে তিনি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনিই সিলেটের এক মাত্র চোখের রেটিনার চিকিৎসা করেন। সপ্তাহে বৃহস্পতি ও শুক্রবার ঢাকা থেকে সিলেটে এসে তিনি রোগী দেখেন। তিনি শাহজালাল আই সেন্টার নামে একটি চ্যারিটি গঠন করে কাজ করছেন দীর্ঘদিন থেকে। গানের মাধ্যমে ফান্ড রাইজিং করে সিলেটে গরীব অসহায় মানুষের চোখের চিকিৎসার জন্য একটি চক্ষু হাসপাতাল গড়ে তুলতে চান। 

২০১৩ সালে ঢাকায় রানা প্লাজা ধ্বসে পড়ার পর তিনি একটি গান করেন ও বাবা জান নামে। আর তিনি হাছন রাজার একজন ভক্ত। তাঁর বেশিরভাগ গান সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সিলেটের স্বতন্ত্র ইতিহাস রয়েছে, রয়েছে সিলেটের নিজস্ব ভাষা ও ঐতিহ্য।

জহিরুল থেকে যেভাবে অচিনপুরী : ২০১০ দিকে তিনি যখন প্রথম গান গাওয়া শুরু করেন তখন বেশিরভাগ ভাগ গাইতেন আখেরাত নিয়ে। অচেনা জগত ছাড়তে হবে, অচিনপুরে যেতে হবে এমন গান গেয়ে তিনি মানুষের মন কাড়েন। পরবর্তীতে সমাজের বাস্তব কিছু সমস্যা নিয়ে গানও বের করেন। চেনা জগত নিয়ে এসব গান শুনে তাঁর এক সহকর্মী ডাক্তার মাসুম হাবিব তাঁকে অচিনপুরী হিসেবে আখ্যা দেন। এরপর থেকে সব গানের সাথে তিনি অচিনপুরী বলতে ভুলেন নি। সেই থেকে তিনি জহিরুল ইসলাম থেকে অচিনপুরী হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেন।

সিলেটভিউ২৪.কম/ ২১ জানুয়ারি ২০২০/জুনেদ

@

ভিডিও :

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন