আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

সিলেটে পবিত্রর ‘অপবিত্র’ কাজ!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-১৮ ১৯:১৫:৩৩

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন পুলিন্দ্র মজুমদার।

সিলেট :: নাম তার পবিত্র মজুমদার। বাড়ি সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের চরইসবপুর গ্রামে। নামের সাথে ‘পবিত্র’ শব্দটি যুক্ত থাকলেও, তার বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ ওঠেছে, সেগুলো মোটেও পবিত্র নয়!

অবশ্য নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন পবিত্র মজুমদার। তার দাবি, অভিযোগগুলো ‘মিথ্যা, বানোয়াট’।

পবিত্র মজুমদারের বিরুদ্ধে তার ওমান প্রবাসী ছোট ভাইয়ের টাকা ও জায়গা-সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে। আজ মঙ্গলবার বিকালে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ তুলেছেন চরইসবপুর গ্রামের প্রেমানন্দ দাস বৈষ্ণবের ছেলে পুলিন্দ্র মজুমদার কাজল। তিনি তার মেঝো ভাই এবং ভাতিজাদের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পুলিন্দ্র মজুমদার কাজল বলেন, ‘ওমানে যাওয়ার পর থেেেক আমি কয়েক কোটি টাকা আমার বড় ভাই পবিত্র মজুমদারের কাছে পাঠাই। সে টাকা দিয়ে তিনি জায়গা সম্পত্তি ক্রয় ও বাড়িতে ভবন তৈরি করেন। প্রবাসে থাকাবস্থায় বড় ভাই পবিত্র ও মেঝো ভাইয়ের সন্তানদের ভরণপোষণ ও তাদের বিয়েশাদিতে সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করি। প্রবাসে থাকাকালে জানতে পারি আমার পাঠানো টাকা দিয়ে বড় ভাই ও তার স্ত্রী নামে-বেনামে জায়গা ক্রয় করেছেন। পৈত্রিক সম্পত্তির জটিলতা নিরসনে আমার কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা আনলেও জটিলতা নিরসন না করে টাকা আত্মসাৎ করেন বড় ভাই পবিত্র মজুমদার। আমার কাছে জায়গা বিক্রির কথা বলে মেঝো ভাই মনিন্দ্র মজুমদার আমার কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নেন। ওই জায়গা আমি ভোগ-দখল করলেও এখনও তা রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছেন না তিনি।’

তিনি বলেন, ‘‘গত ১৬ আগস্ট আমি দেশে এলে আমার বড় ভাই, মেঝো ভাই ও তাদের সন্তানরা আমার কাছে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি টাকা দিতে অপারগতা দেখিয়ে আমার বড় ভাইয়ের নিকট বিদেশ থেকে পাঠানো টাকার হিসাব চাই। তিনি টাকার হিসাব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘আমি টাকা দেবো না, আমি মুক্তিযোদ্ধা, আমি সব করতে পারি, আমার সাথে বেশি বাড়াবাড়ি করতে এসো না।’ প্রবাস থেকে আসার পর দেখতে পাই, বাড়িতে আমার অংশের জায়গা এবং গোয়ালাবাজার সংলগ্ন গ্রামতলায় আমার ক্রয়কৃত বাড়ি থেকে কয়েক লাখ টাকার গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ করলে বড় ভাই, তার ছেলে পংকজ কান্তি মজুমদার, মেঝো ভাই ও তার ছেলে মৃনাল কান্তি মজুমদার আমাকে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। নিরাপত্তাহীনতায় আমি সিলেটে ভাড়াটে বাসায় উঠি। বাড়ি থেকে বের করে দেয়ায় আমি গ্রামের মুরব্বি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বিচার প্রার্থী হই। কিন্তু বড় ভাই জনপ্রতিনিধি ও মুরব্বিদের কথা অমান্য করেন।’’

পুলিন্দ্র মজুমদার কাজল আরো বলেন, ‘গত ১০ অক্টোবর রাতে আমি বাড়িতে গেলে ভাই-ভাতিজারা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। অব্যাহত হুমকিতে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। গত ১৩ অক্টোবর এ ব্যাপারে ওসমানীনগর থানায় জিডি করি। আমার সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে বড় ভাই পবিত্র মজুমদার তার ছেলে পংকজ কান্তি মজুমদারের জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবা-মা হিসেবে আমি ও আমার স্ত্রীর নাম লিপিবদ্ধ করিয়েছেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেব আমি।’

তিনি বলেন, ‘গত ২৩ ডিসেম্বর আমার ভাইদ্বয় বাসায় এসে দেড় লাখ টাকা দাবি করে। আমি টাকা না দেয়ায় তারা হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরদিন গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখি, তারা আমার মালিকানাধীন পুকুরের মাছ লুট করে নিচ্ছে। আমি বাধা দিলে তারা হামলা চালায়। আমাকে রক্ষা করতে চাচাতো ভাই সুরেন্দ্র মজুমদার, মাহেন্দ্র মজুমদার ও তাদের ছেলেরা এগিয়ে এলে তাদের উপরও হামলা চালায়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরে লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ তা আমলে নেয়নি। আমার বড় ভাই উল্টো আমার নামে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছেন। তাদের ভয়ে পরিবার রেখে আমি প্রবাসে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছি।’

পুলিন্দ্র মজুমদার কাজল জানান, উদ্ভূত বিষয়গুলো নিয়ে গ্রামের মুরব্বিরা একাধিবার সালিশের উদ্যোগ নেন। তবে তার বড় ভাই সালিশে উপস্থিত না হয়ে তার কাছে চাঁদা দাবি করে যাচ্ছেন। মুরব্বিরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে একটি ‘অঙ্গীরকারমূলক স্মরণলিপি’তে স্বাক্ষর করেছেন। সেখানে তার বড় ভাইয়ের ছেলে কৃষ্ণ মজুমদারকে ‘মাদকসেবী, নেশাগ্রস্ত ও ধর্ষণ মামলার আসামি’ উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিন্দ্র মজুমদার ন্যায়বিচারের জন্য প্রশাসন ও সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন।

অভিযোগের বিষয়ে সিলেটভিউ থেকে যোগাযোগ করা হলে পবিত্র মজুমদার বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ওঠেছে, সেগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে বিভিন্নরকম ষড়যন্ত্র হয়। আমাদের দেশ এখনও রাজাকারমুক্ত নয়।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০/আরআই-কে

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন