আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

দেশে ৩০ রুট ও ৫১২ পয়েন্টে মাদকের ‘পোর্ট’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-২০ ১১:৪২:৩৪

ওমর ফারুক নাঈম, মৌলভীবাজার :: দেশের ৩০টি রুটে ও ৫১২টা পয়েন্টে মাদকের ‘পোর্ট’ হিসেবে ব্যবহার হয়। এমনকি প্রতিদিন ইয়াবার পিছনেই ১শত ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। বছর শেসে যা দাঁড়ায় ৪৮ হাজার ৬শত কোটি টাকায়। মৌলভীবাজারে এসে সারাদেশে মাদকের ভায়বহতার চিত্র পরিসংখ্যানে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ পুলিশের সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. কামরুল আহসান।

তিনি বলেন, “বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশে ৭০ লক্ষ মাদকসেবী। একটি পরিবারে যদি একজন মাদকসেবী থাকে, তাহলে কিন্তু সে পরিবার শেষ। দেশের পরিবারের গড় সদস্য যদি ৫জন হয়। তাহলে ৭০ লক্ষ কিন্তু সাড়ে ৩ কোটি মানুষকে স্পর্শ করছে। এটি শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা। মানে একটি পরিবার কেন্দ্রীক সমস্যা। আরো তো রাস্ট্রীয় পর্যায়ের নানাবিধ সমস্যা তো রয়েছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটা সাইজেবল ফিগার কিন্তু চলে আসে কিন্তু এই ৭০ লক্ষ। সিঙ্গাপুরের জনসংখ্যাও কিন্তু ৭০ লক্ষ নাই। পৃথীবীর অনেক দেশেই জনসংখ্যা ৭০ লক্ষ নাই। অন্তত ১শতটা দেশ পাওয়া যাবে যাদের জনসংখ্যা ৭০ লক্ষ নাই। কাজেই এটা কোন হেলাফেলার সংখ্যা না। এবং এটা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৬লাখ, বর্তমানে ৭০ লাখ। এই ৭০ লাখের মধ্যে ৩০ লাখ ইয়াবা আসক্ত। মোট মাদবসেবীর প্রায় ৪২ পার্সেন্ট। এটা রাষ্ট্রের জন্য বিরাট একটা হুমকি”।

ডিআইজি কামরুল বলেন, বাংলাদেশে ৩০টা রুটে, ৫১২টা পয়েন্টে মাদক ঢুকে। মৌলভীবাজারে কিন্তু চারদিকে বর্ডার আছে। যা সহজে আসা যাওয়া করা যায়। এই মৌলভীবাজার জেলা যে কত ঝুঁকিপূর্ণ তা আপনারা সহজেই অনুধাবন করতে পারেন। শুধু চা-বাগানের পাট্রা না, ইয়াবা এখন বড় সমস্যা। প্রতিবেশী দেশ থেকে ইয়াবা সহজেই ঢুকতে পারে। এটা বুঝার জন্য খুব বেশী লেখাপড়া ও গবেষার দরকার হয় না।

কামরুল আহসান উদাহরণস্বরুপ বলেন, কয়েকদিন আগে শায়েস্তাগঞ্জে দুই মহিলার কাছ থেকে ৬১ হাজার ইয়াবা ধরা হয়েছে। চিন্তা করা যায়। ৬১ হাজার দিয়ে ৬১ হাজার মানুষকে মাদকাসক্ত করা যায়। ভয়াবহ চিত্র। আরো ভয়াবহ হচ্ছে এক যুগে ২৭৩ জন মাদকাসক্ত ছেলের হাতে মা বাবার মৃত্যু হয়েছে। স্বামীর হাতে প্রায় ৩শ স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। পিতার হাতেও সন্তানের মৃত্যু হয়েছে ১১জন। এটাই তো একটা ভয়বহ বিষয়। সুতরাং আমরা সবাই ঝুঁকির মধ্যে আছি। আমি জানি না আমার সন্তান যে, মাদকের সাথে যুক্ত হয়েছে কি না। না কু-চক্রে পরে ভবিষতে মাদকের সাথে যুক্ত হয়ে পরবে কি না। চারদিকে যদি মাদকের প্রাচুর্য থাকে তাহলে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে আমার পরে যাব”।

কামরুল আহসান বলেন, “এই মাদক রাষ্ট্রের উন্নয়ন জন্য বিরাট একটা সমস্যা, বিরাট একটা ঝুকি। জঙ্গিবাদ হয়তো নিমূল হয়নি কিন্তু নিয়ন্ত্রণে এনেছি। কিন্তু মাদক এটি উত্তোরোত্তর বেড়ে যাচ্ছে। এখন মাদককে যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি। তাহলে ২০৪১ সালের যে রূপকল্প বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পরবে। একটি মাদকাসক্ত ব্যক্তি গড়ে সর্বোচ্চ ৫শত টাকা ও সর্বনিম্ন ৫০ টাকা ব্যয় করে। কারণ একটা ইয়াবার দাম কিন্তু অনেক। তাহলে দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রতিদিন ইয়াবার পিছনে ১শত ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। সেটা যদি সারা বছরে হিসাব করি তাহলে বিভিন্ন রিসার্চে বলা হয়েছে ৪৮ হাজার ৬শত কোটি টাকা হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট পদ্ম সেতুতে ব্যয় হচ্ছে ৩০হাজার কোটি টাকা। তো ৪৮ হাজার কোটি টাকা দিয়ে তো দুইটা পদ্মা সেতু বানাতে পারি প্রতিবছর”।

বুধবার সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার মডেল থানায় পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি কামরুল আহসান ছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফজলুল আলী, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জামাল উদ্দিন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহউর রহমান, পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সালেহ এলাহী কুটি প্রমুখ। এসময় জেলা পুলিশ কনকপুর ইউনিয়নকে মাদকমুক্ত ঘোষণা করে ১৭জন মাদকসেবীকে আলোর পথের যাত্রী কর্মসূচির আওতায় আনা হয়।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০/ওফানা/ডিজেএস

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন