আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

শিক্ষাব্রতী শওকত আলী স্মারকের মোড়ক উন্মোচন

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-২৪ ২২:৫৬:০৮

সিলেট :: শওকত আলী শুধু শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদেরই শিক্ষক নন, তিনি সমাজেরও শিক্ষক। তাঁর আলোকপ্রভায় সময় এবং সমাজ দুই-ই আলোকিত হয়েছে। দীর্ঘ পাঁচ দশক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে তিনি এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যা তাঁকে আসীন করেছে অনন্য এক উচ্চতায়। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, শিক্ষাব্রতী শওকত আলীর কর্ম-সাধনার পঞ্চাশপূর্তি উপলক্ষে সুহৃদ আড্ডা ও স্মারক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

নগরীর উপশহরে সীমান্তিক আইডিয়াল টিচার্স ট্রেনিং কলেজে সোমবার সন্ধ্যায় এ উপলক্ষে সুহৃদ-স্বজনদের ব্যানারে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি ছিলো এক কথায় অনন্য। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শওকত আলীর সুযোগ্য কণ্যা জনপ্রিয় বাচিক শিল্পী মুনিরা পারভীন। অনুষ্ঠানের সূচনাতেই স্বজন-শুভার্থীদের পক্ষ থেকে শওকত আলীর হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি সম্মাননা স্মারক। 

স্বজন-সুহৃদ আড্ডায় মো. শওকত আলীর বন্ধুরা যেমন উপস্থিত ছিলেন তেমনই উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন সহকর্মী। পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন তাঁর আলোয় আলোকিত ছাত্র-ছাত্রীরা। উপস্থিত ছিলেন স্বজন-শুভার্থী এবং পরিবারের সদস্যরা।

তাঁর জীবন সঙ্গিনী শাহানা সুলতানার আবেগঘন বক্তব্য অন্ষ্ঠুানে যুক্ত করে ভিন্নমাত্রা। তাঁর মতো করেই বক্তারা শওকত আলীর নানা গুনের বর্ননা করেন। শওকত আলীর দুই বাল্যবন্ধু নির্মল কৃষ্ণ মহারত্ম ও এ.এইচএম লতিফুজ্জামানের বক্তব্য অনুষ্ঠানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি করে।

কবি, লেখক লাভলী চৌধুরী, মদন মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, রবীন্দ্র গবেষক মিহিরকান্তি চৌধুরী, অধ্যাপক গ.ক.ম আলমগীর, উদীচী সিলেটের সভাপতি এনায়েত হাসান মানিক, শিশু একাডেমির সাবেক জেলা সংগঠক জামান মাহবুব, হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজের উপাধ্যক্ষ শাহনাজ পারভীন, সিলেট নজরুল একাডেমির সভাপতি সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন, হবিগঞ্জ সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, কবি আবিদ ফয়সাল, শিক্ষক সঞ্জয় নাথ সঞ্জু, শিক্ষক জয়নাল আবেদিন, শিক্ষক আবদুল ওয়াদুদ তফাদার এবং অদিতি মহারত্নের বক্তব্যে ওঠে আসে শওকত আলীর নানা গুনের কথা।

তারা বলেন, প্রখর স্মরণশক্তি এবং মুখস্থবিদ্যায় সমকালে তাঁর মতো আর একজন শিক্ষক খোঁজে পাওয়া কঠিন। তাঁর সময়ের শীর্ষ সাহিত্যিকদের অনেক রচনাই শওকত আলীর মুখস্থ। যাপিত জীবনের স্মরণীয় ঘটনার দিন তারিখ তাঁর ঠোটস্থ। ঢাকা-সিলেট, সিলেট-চট্টগ্রাম রুটের সকল ট্রেন স্টেশনের নাম বলতে পারেন তিনি এক নিঃশ্বাসে। ইংরেজি, ফারসি, উর্দু, সংস্কৃত, আরবি ও বাংলা ভাষায় তাঁর পাণ্ডিত্য সর্বজন বিদিত। প্রায় এক হাজারের উপরে কবিতা তাঁর মুখস্থ। এমন আরও বহুগুণের সম্মেলন তাঁকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করলেও সেই উচ্চতা কখনও তাঁকে আবিষ্ট করতে পারেনি। কর্মপ্রচারে তিনি বরাবরই থেকেছেন অনাগ্রহী। বিরল গুনের অধিকারী এই শিক্ষাব্রতী আজও মূল্যায়িত হননি সেভাবে। অনুষ্ঠান থেকে তাঁকে যথাযথ মূল্যায়ণের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি শওকত আলীকে তাঁর কর্মময় জীবনের স্মৃতিকথা লিখতে অনুরোধ করেন বক্তারা।

পঞ্চাশ বছরে শিক্ষকতা জীবনের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে মো. শওকত আলী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘সুদীর্ঘ ৫০ বছরে ছাত্রছাত্রীদের জীবন গঠনে যতটুকু কাজ করেছি এর কোনও প্রতিদান তাদের কাছ থেকে খুব একটা আশা না করলেও এ যাবৎ যতটুকু পেয়েছি তা আমার মনে চির অম্লান হয়ে আছে। সময়ে অসময়ে দৈনন্দিন জীবনে নানা কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাদের অনেকের স্মৃতিই মনের মুকুরে ভেসে ওঠে।

আজ সারা বিশ্বের আনাচে-কানাচে আমার আত্মার আত্মীয়রা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এর মধ্যে অনেকে আবার পরপারে পাড়ি জমিয়েছে। অনেক ছাত্রছাত্রী দেশ-বিদেশের নানা উঁচু পদে অতীব সম্মানের সঙ্গে অধিষ্ঠিত। একদিন যে বাগানের পরিচর্যা করেছিলাম, সে বাগানেরই প্রস্ফুটিত ফুল এরা, যে বাগানের তুলনা বাস্তবিকই বিরল। আমার ছাত্রছাত্রীরা দেশ-বিদেশে নানা দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকেও আমাকে যতটুকু শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা প্রদর্শন করে, তাতে আমি এক স্বর্গীয় সুখ অনুভব করি। তখন যে অনুভূতির সৃষ্টি হয় এর তুলনা ইহ জগতে নেই।’

অনুষ্ঠানে মো. শওকত আলীর জীবন এবং কর্ম নিয়ে অপূর্ব শর্মা ও মুনিরা পারভীন সম্পাদিত ‘শিক্ষাব্রতী শওকত আলী’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। স্মারকটি সম্পর্কে অনুষ্ঠানের পূর্বে কিছুই জানতেন না শওকত আলী। তাঁকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এই উদ্যোগটি গ্রহণ করেন মুনিরা পারভীন। অনুষ্ঠানে প্রত্যেক বক্তাই এজন্য তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন। উপস্থাপনার এক পর্যায়ে এর প্রতি উত্তর দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে মুনিরা। তার আবেগঘন বক্তব্য চোখে জল আসে সকলের। তিনি সকলের কাছে, তার পিতা-মাতা যেনও দীর্ঘজীবন লাভ করেন সেই দোয়া কামনা করেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০/ প্রেবি/ শাদিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন