আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

‘অঘটন’ পেরিয়ে সিলেট যুবদলে অন্য সুর

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-২৫ ০০:১৭:৩৩

রফিকুল ইসলাম কামাল :: দেড় যুগেরও বেশি সময় পর গেল বছরের শেষ দিকে নতুন কোনো কমিটি আসে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলে। কিন্তু শুরুতেই অঘটন! দুর্যোগের ঘনঘটা! তবে সেই ‘দুর্যোগ’ কাটিয়ে ওঠে সিলেট যুবদলে এখন শোনা যাচ্ছে অন্য সুর।

যুবদল নেতারা বলছেন, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে সিলেট যুবদলে গতি এসেছে। জেলা ও মহানগর যুবদলের আওতাধীন সকল শাখায় সম্মেলন করার কাজ চলছে। এরপর জেলা ও মহানগর যুবদলের সম্মেলনের মাধ্যমে আসবে নতুন কমিটি।

জানা গেছে, সিলেটে যুবদলের কমিটি গঠন হয় ২০০১ সালে। সেই কমিটি দিয়ে পার করে দেওয়া হয় প্রায় ১৯ বছর। নতুন কমিটির জন্য নেতাকর্মীদের সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটে গেল বছরের ১ নভেম্বর। ওইদিন সিলেট জেলা যুবদলে ২৯ সদস্যবিশিষ্ট এবং মহানগর যুবদলে ২৭ সদস্যবিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় যুবদল। জেলায় সিদ্দিকুর রহমান পাপলুকে আহবায়ক আর মকসুদ আহমদকে সদস্যসচিব এবং মহানগরে নজিবুর রহমান নজিবকে আহবায়ক ও শাহ নেওয়াজ বক্ত তারেককে সদস্যসচিব করা হয়।

এই আহবায়ক কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় সিলেট যুবদলে। ক্ষোভের অনলে জ্বলেন বিএনপির কয়েকজন নেতা। আহবায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেকেই ‘নিষ্ক্রিয়’ ও ‘সুবিধাভোগী’ বলে অভিযোগ তোলেন যুবদলের একাংশের নেতারা। এ অংশে ছিলেন জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ইকবাল বাহার চৌধুরী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাদিকুর রহমান, যুবদল নেতা শফি আহমদ খান, টিটন মল্লিক। জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মাহবুবুল হক চৌধুরী, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল মুর্শেদ, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক নেতা আবদুস সামাদ, জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা জয়দেব চক্রবর্তী প্রমুখও ছিলেন এই ‘বিদ্রোহী’ অংশে। কমিটি বাতিলের দাবিতে মিছিল করতে যেয়ে এই অংশ পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পরে এ অংশের ৩০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। এসব নেতাকর্মী বর্তমানে জামিনে আছেন।

এদিকে, জেলা ও মহানগর যুবদলের আহবায়ক কমিটি নিয়ে ক্ষোভ থেকে কেন্দ্রীয় পদ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক সামছুজ্জামান জামান ও নির্বাহী সদস্য শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী। গত ২ নভেম্বর পদত্যাগপত্র জমা দিতে তাঁরা ঢাকায় যান। তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে এসব নেতাকে ফিরিয়ে দেন। তিনি অনৈক্য ভুলে মিলেমিশে কাজ করার নিদের্শ দেন তাদেরকে।

এরপর গেল ৭ নভেম্বর ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবসের’ আলোচনায় বিএনপির এই চার নেতাকে ‘আওয়ামী লীগের এজেন্ট’ উল্লেখ করে তাদেরকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার আহবান জানান মহানগর বিএনপির সহসভাপতি জিয়াউল গণি আরেফিন জিল্লুর।

জানা গেছে, আহবায়ক কমিটি গঠনের শুরুর দিকের এই ঘটন-অঘটন পরে স্থিমিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যুক্তরাজ্য থেকে পাঠানো ‘কড়া বার্তা’ কাজ করে।

যুবদল সূত্র জানিয়েছে, গত ২০ নভেম্বর নিজেদের আওতাধীন পৌর ও উপজেলাসহ সকল কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে জেলা যুবদলের আহবায়ক কমিটি। এরপর কয়েক দফায় বর্ধিত সভা করে তারা। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি নিজেদের আওতাধীন ১৩টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভা তথা ১৮টি ইউনিটে দ্রুত সম্মেলন করতে ৬টি সাংগঠনিক টিম গঠন করে জেলা যুবদল।

সর্বশেষ সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ওই ৬টি সাংগঠনিক টিমের প্রধানদের নিয়ে জরুরি সভায় বসে জেলা যুবদল। সভায় প্রত্যেক টিমকে তিনটি ধাপে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

জেলা যুবদলের আহবায়ক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু জানান, জেলা যুবদলের সকল ইউনিটে দ্রুত সম্মেলন করতে ৬টি সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটিকে আগামী ৩০ মার্চের মধ্যে সম্মেলন শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সিলেট যুবদল এখন ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী। খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন, নিরপেক্ষ নির্বাচনসহ গণতান্ত্রিক সকল দাবি নিয়ে সিলেট যুবদল সোচ্চার রয়েছে।’

এদিকে, সিলেট মহানগর যুবদলও সম্মেলনের বিষয়ে তৎপরতা শুরু করেছে। তাদের আওতাধীন মহানগরীর ২৭টি ওয়ার্ড শাখায় নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ৯টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগর যুবদলের আহবায়ক নজিবুর রহমান নজিব।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে যুবদলকে ঢেলে সাজাতে প্রকৃত জিয়ার সৈনিকদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে প্রত্যেক নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন।’

এদিকে, সিলেট যুবদলকে আরো গতিশীল করতে গেল ১৮ ফেব্রুয়ারি সিলেট সফর করে কেন্দ্রীয় যুবদলের একটি প্রতিনিধি দল। যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শহীদ উল্লাহ তালুকদারের নেতৃত্বে এ দলে ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আনসার উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিপু সরকার, সহসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, সহসাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস মিয়া, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল আহমদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন উজ্জ্বল। এ প্রতিনিধি দল জেলা ও মহানগর যুবদলের সাথে পৃথক বৈঠক করে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে যায়।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন