আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

দোয়ারাবাজারে ‘অবহেলিত’ গ্রামের নাম হরিপুর

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-২৫ ১৭:৪৭:১০

দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার অবহেলিত গ্রামের নাম ৬ নং দোহালিয়া ইউনিয়নের হরিপুর। উপজেলা সদরের কাছাকাছি হলেও স্বাধীনতার ৪৯ বছর পেরিয়ে বর্তমান ডিজিটাল যুগেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি ওই গ্রামে।

সেখানে নেই কোনো কাঁচা-পাকা রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা। হিন্দু অধ্যুষিত ওই গ্রামের ২২টি পরিবারে মোট জনসংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই পেশায় নরসুন্দর (শীল)। বাকিরা কাঠমিস্ত্রিসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই ভূমিহীন।

দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের সম্মুখস্থ সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়ের তীর ঘেঁষে মাত্র ১৫ মিনিট হেঁটে গেলেই চোখে পড়ে অবহেলিত হরিপুর গ্রামের করুণ দূর্দশার চিত্র।

মুলত: যাতায়াতক্ষেত্রে ওই গ্রামে নেই কোনো ভালো রাস্তা। মাত্র বছর দুয়েক আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রথমবারের মতো ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সুরমা নদীর তীরঘেষে সেখানে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করায় আশার সঞ্চার হয়েছিল হরিপুর গ্রামবাসীর মধ্যে। কিন্তু অধিক মুনাফার লোভে একটি বিশেষ মহল বোঁধের বিভিন্ন স্থানে বালু মওজুদ রাখায় অতিরিক্ত ধারণক্ষমতা সইতে না পেরে অতিবৃষ্টি ও নদীর উপচেপড়া ঢলের তোড়ে বেড়িবাঁধটির স্থানে স্থানে ফাটল ও ভাঙনের সৃষ্টি হয়।

অপরদিকে বাঁধের কুলঘেঁষে বোরো ফসলের পানির ড্রেনটিও ঝূঁকিপূর্ন হয়ে পড়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া চারপাশের গ্রামগুলোতে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় হেমন্তকালে বইখাতা কাধে ঝুঁলিয়ে ৫ কি.মি দূর্গম পথ পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতে হয় গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। বর্ষার কাদাজলে একেবারেই অচল হয়ে পড়ে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম। কিন্তু জরুরি রোগীদের হাসপাতালে নিতে একমাত্র কাধে বহন ছাড়া অন্য কোনো বাহন নেই।

হরিপুর গ্রামের নিপেন্দ্র মালাকারসহ গ্রামের প্রবীণ মুরব্বিরা বলেন, উপজেলা সদরের কাছাকাছি হলেও বর্তমান ডিজিটাল যুগেও শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগসহ সর্বক্ষেত্রেই আমরা ক্ষুদ্র হিন্দু জনগোষ্ঠী অনেক পিছিয়ে রয়েছি। বহু আবেদন-নিবেদন করেও কোনো ফল হয়নি। যুগ যুগ ধরে আমরা শুধু বঞ্চনারই শিকার হচ্ছি।

তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে সুদুর ধরমপুর ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানকালে বয়স্কদের নিয়ে বড়ই মুশকিলে পড়তে হয় আমাদের। তাই দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য পার্শ্ববর্তী দোহালিয়া বাজার ভোটকেন্দ্রে স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে আসলে আজো তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রতিবার নির্বাচন এলেই শুধু দায়সারা প্রতিশ্রিুতিতেই সীমাবদ্ধ থাকেন জনপ্রতিনিধিরা। এমনকি এসব দাবি-দাওয়া নিয়ে সম্প্রতি আমরা মানববন্ধনও করে থাকি। তবু কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি।

জানতে চাইলে দোহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আনোয়ার মিয়া আনু বলেন, তাদের চলাচলের জন্য পাউবো কর্তৃক ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ওই (হরিপুর) গ্রামের মাত্র ৭০-৮০টি ভোটের জন্য এর অতিরিক্ত আর কী করতে পারি আমরা।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০/টিআই/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন