আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

গোয়াইনঘাটে কোটি টাকার সৌর প্যানেল এখন গলার কাঁটা!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-২৭ ১০:৪৫:৫৫

এম,এ,মতিন, গোয়াইনঘাট :: অবকাঠামো উন্নয়ন কোম্পানি- ইডকলের সৌর প্যানেলের মান নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন সৌরবাতি ও ল্যাম্পপোষ্টের উপকারভোগী হাজার হাজার গ্রাহক। সরকার শহরের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকা গুলোকে আলোকিত করতে বিপুল বিনিয়োগে সৌরবাতি ও সৌরপ্যানেল স্থাপন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

সরকারের টিআর-কাবিখা প্রকল্পের মাধ্যমে সৌর প্যানেল স্থাপনের কাজ করা হচ্ছে। যার প্রায় সব কাজই করছে ইডকল। কিন্তু স্থাপনের পরপর এসব সোলার প্যানেল এবং ল্যাম্পপোস্ট অকেজো হয়ে পড়ছে। যার দায় এখন এসে পড়ছে উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও),ইউএনও,উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় সংসদ সদস্যদের কাঁধে। সম্প্রতি ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা ইডকল কোম্পানীকে প্রতারক ও মিথ্যাচার কোম্পানি হিসেবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আখ্যায়িত করে যাচ্ছেন। ইডকল কোম্পানিটি সূচনা লগ্নে ভালো কাজের মাধ্যমে মানুষের আস্তা অর্জন করে। ভাল কাজের স্বীকৃতি সরুপ সরকারের নিকট থেকে হাজার কোটি টাকার সৌরবাতি ও ল্যাম্প পোস্ট স্থাপন কর্যক্রম লাভ করে। হাজার কোটি টাকার কাজ পেয়ে বর্তমানে ইডকল কতৃপক্ষ উক্ত প্রকল্পটি নিজেরা বাস্তবায়ন না করে নামসর্বস্ব বিভিন্ন কোম্পানী দিয়ে সৌর প্যানেল ও ল্যাম্পপোষ্ট স্থাপন কার্যক্রম বাস্তবায় করছে। ইডকল গ্রাহকদের সাথে এই অভিনব প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও যেন দেখার কেউ নেই।

জানাযায় সৌর প্যানেল এবং সোলার ল্যাম্প পোস্টের জন্য বছরে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। বিগত ২০১৪ সাল থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইডকল ২০১৬-১৭ থেকে তিন বছর এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি তিন হাজার কোটি টাকার কাজ করেছে। এর আগের দুই বছর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় নিজ উদ্যোগে কাজ করেছে। বছরে চার লাখ সোলার সিস্টেম বসানো হচ্ছে এই বরাদ্দে।

জানাযায়, দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ের নিজ উদ্যোগে বসানো প্রত্যেকটি সোলার সিস্টেম এখনো পুরোপুরি কার্যকর রয়েছে। সরকার টিআর ও কাবিখাতে বরাদ্দ যে দিচ্ছে তার অর্ধেকই এখন সৌর এবং বায়োগ্যাস অর্থাৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বরাদ্দ দেয়া হয়। এই অর্থ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে খরচ করা হয়। অন্যদিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ইডকল। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা বলেন, ইডকল যে সোলার প্যানেল স্থাপন করে তার বেশিরভাগই কিছু দিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এগুলো দীর্ঘদিন চলার কথা। গ্রামে যেসব এলাকায় বিদ্যুত নেই সেইসব এলাকার মানুষকে বিনামূল্যে সৌর প্যানেল দেয়া হয়। একই সঙ্গে গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার বাতিও বসানোহয়। ইউনিয়ন পরিষদগুলো রাতে মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তায় কোন বাতির ব্যবস্থা করে না। কিন্তু টিআর কাবিখার এই বরাদ্দে গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো আলোকিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের চলাচলে সুবিধার পাশাপাশি, আলো থাকায় অপরাধ এবং দুর্ঘটনা কমে আসছে। কিন্তু এসব বাতির বেশিরভাগই লাগানোর পর পর নষ্ট হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ মনে করছেন কাজগুলো বিদ্যুত বিভাগ করছে। তাই জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা সঙ্গত কারণেই ইডকল এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্তদের নিকট এ বিষয়ে কৈফিয়ত চাওয়া সময়ের দাবি। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের মাসিক সভাসহ স্থানীয় উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে সৌর সোলার নিয়ে ভুক্তভোগীরা বারবারই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন। চলার পথে প্রায়ই দেখাযায় রাস্তায় লাগানো এসব বাতির মধ্যে অনেকটাই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুস সাকিব বলেন, মাঠপর্যায়ে আমরা যেহেতু কাজ করি সেহেতু চলার পথে বিভিন্ন সড়ক, হাটবাজার ও স্থানীয়দের বসতঘরে স্থাপিত সোলার প্যানেল চোখে পড়ে। ফলে মেঘাচ্ছন্ন ও অন্ধকার রাতে বেশিরভাগ সৌরবাতি বন্ধ দেখাযায়। তিনি মনে করেন সরকার যথাযথ ভাবে সৌরবাতি স্থাপনের জন্য ইডকলকে দায়িত্ব ভার ও পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু ইডকল যে মানের কাজ করার কথা ছিল সেই মানের কাজ করেনি। ফলে ইডকল স্থাপিত সৌরবাতি গুলো বসানোর কয়েক দিনের মাথায় নষ্ট হয়ে অকার্যকর হয়ে পড়ে। টিআর কাবিখার বরাদ্দ দিয়ে স্থানীয় কোম্পানীর মাধ্যমে সোলার ও ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হলে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে এবং স্থানীয় কোম্পানীটি সৌর সোলার প্যানেল ও ল্যাম্পপোষ্ট গুলোর বিষয়ে দায়বদ্ধতা থাকবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০/মতিন/মিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন