আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

লাশটা শেষবারের মতো দেখতে চান বালাগঞ্জের ফয়সলের মা-বাবা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-২৮ ০৯:২৫:৫৭

নিজস্ব প্রতিবেদক :: একেই বলে অমোঘ নিয়তি। জীবনের সফলতাগুলো আগামীর মুঠোয় বন্দি করার স্বপ্ন নিয়ে, পূর্ণতার মোড়কে স্বপ্নগুলোকে জীবনের আঙ্গিনায় ধরাশায়ী করতে গ্রিসে থিতু হতে চেয়েছিলেন বালাগঞ্জের এনামুল এহসান জায়গীরদার ফয়সল (৩০)। কিন্তু কে জানতো- গ্রিসে পা রাখতে না রাখতেই থেমে যাবে সব? গত ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রিসে বরফসমাধি ঘটেছে ভাগ্যাহত ফয়ছলের।  মৃত্যু ঘটেছে তার সব স্বপ্ন-বাসনার। এখন কেবল কলিজার টুকরো সন্তানের লাশের মুখটা একটা নজর দেখার জন্য পথপানে চেয়ে আছেন ফয়সলের বৃদ্ধ বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা।  ফয়সল বালাগঞ্জের বোয়ালজুড় ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মহুদ আহমদ জায়গীরদার ও খেলা বেগম চৌধুরীর ছেলে। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে ফয়সল দ্বিতীয় ছিলেন।

তুর্কি থেকে গ্রিসে যাত্রাপথে ৭ ফেব্রুয়ারি বরফঢাকা পাহাড়ে মৃত্যুবরণকারী বালাগঞ্জের এনামুল এহসান জায়গীরদার ফয়সলের লাশ শেষবারের মতো একনজর দেখার আকুতি জানিয়েছেন তার বৃদ্ধ বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যসহ স্বজনরা। লাশ দেশে আসার অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন তারা। 

গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন- বর্তমানে গ্রিসের আলেকজান্ডার পলি নামক হসপিটালে ফয়সলের লাশা রাখা আছে এবং দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

ফয়সলের ছোট ভাই রাজিমুল এহসান জায়গীরদার রুজেল এ প্রতিবেদককে জানান, ৪ ফেব্রুয়ারি ফয়সলসহ কয়েকজন গ্রিসের উদ্দেশে যাত্রা করে গ্রিসের সীমানায় পৌঁছলে ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রিসের সময় বেলা ২টার দিকে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ও ক্ষুধায় ফয়সলের দেহ নিস্তেজ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। সহযাত্রীরা মোবাইল ফোনে লাশের সঙ্গে ওই স্থানটির ছবি তুলেন। ৯ ফেব্রুয়ারি সহযাত্রীরা ফয়সলের বাড়িতে মৃত্যুর সংবাদটি জানিয়ে সেখানে তোলা ছবিগুলো পাঠান।

ফয়সলের ছোট ভাই বলেন, বেশ কয়েক বছর পূর্বে ভিসা নিয়ে উমান যান তিনি। তার বড় ভাই আলীমুল এহসান উজ্জ্বল সেখানে থাকেন। উমান থাকাবস্থায় কয়েকবার দেশে আসা-যাওয়া করেছেন। মাস ছয়েক পূর্বে তিনি উমান থেকে ইরাক হয়ে তুর্কি যান। সেখানে তিনি ভালোই ছিলেন, নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। সর্বশেষ ৪ ফেব্রুয়ারি বাড়িতে ফোন করে তার জন্য দোয়া করার কথা বললেও গ্রিসে যাওয়ার বিষয়টি জানাননি।

ফয়সলের সহযাত্রী তারই এলাকার এক যুবক জানান, তুর্কি থেকে গ্রিস যাত্রায় তাদের দলে ১৫-১৬ জন ছিলেন। গ্রিস সীমান্তে পৌঁছার পর তাদের জঙ্গলে রেখে কয়েকটি দলে ভাগ করা হয়। ফয়সল আর ওই যুবকের সঙ্গে দুই বাংলাদেশিসহ দু\\\'জন পাকিস্তানি নাগরিক ছিলেন। ৬ ফেব্রুয়ারি শেষ রাতে একটি গাড়িতে করে এই ছয়জনকে নিয়ে রওয়ানা দিলে ভোরে তারা আলেকজান্ডার পলি সীমান্তে বরফের পাহাড়ে পৌঁছান। রাস্তায় সীমান্তরক্ষীদের চেক থাকায় তাদের সেখানে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি চলে যায়। এর মধ্যে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে ঘুম, গোসল না করে অভুক্ত অবস্থায় ফয়সল অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঙ্গের লোকজনের সহযোগিতায় কোনোরকম তিনি ওই স্থান পর্যন্ত পৌঁছান।

সারা দিন বরফের ওপরে থেকে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ফয়সলের দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সহযাত্রীরা গাছের ডালের উপরে শুইয়ে তাকে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সন্ধ্যার দিকে গ্রিসের দালালের এক লোক সেখানে যান। ফয়সলের লাশ সেখানে রেখেই দালালের লোক তাদের নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করলে পথে আরও ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হন তারা।

মাফিয়ারা পিছন থেকে বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়লে তাদের এগিয়ে নিতে আসা ওই দালাল সহযোগীর পায়ে গুলি লাগে। তখন প্রাণে রক্ষার্থে তারা কখনও জঙ্গলে আবার কখনও বরফের পাহাড়ে আশ্রয় নেন। ভোরের দিকে একটি ঘরের ভেতর নিয়ে তাদের বন্দি করে রাখা হয়। বন্দি থাকাবস্থায় দালাল তার চুক্তির টাকা আদায় করে নেয়। গ্রিস যাত্রার আগেই সেই টাকা জামানত রেখেছিলেন তারা।

বন্দিখানায় তাদের মানসিক নির্যাতন করে ভয় দেখিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল, ডলার, দামি কাপড়, হাতের আংটি ও গলার চেইন দালালের লোকজন ছিনিয়ে নেয়। যে মোবাইল দিয়ে ফয়সলের মৃত দেহের ছবি তোলা হয়েছিল প্যান্টের ভিতর লুকিয়ে সেটি রক্ষা করেন তারা।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০/ডিজেএস/মিআচৌ


@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন