আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে মাশরাফির ম্যাচে জিম্বাবুয়ে হোয়াইটওয়াশ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৩-০৬ ২২:৪৮:৫৫

রফিকুল ইসলাম কামাল, স্টেডিয়াম থেকে :: সিলেটের মাঠে আজ ‘বৃষ্টি’ হলো দু’বার। একবার প্রকৃতির বৃষ্টি, আরেকবার চার-ছক্কার বৃষ্টি! প্রকৃতির বৃষ্টি শুধু দেরি করিয়েছে বাংলাদেশের হোয়াইটওয়াশ মিশনকে। আর লিটন-তামিমের বৃষ্টি ম্যাচ থেকেই ছিটকে দিয়েছে জিম্বাবুয়েকে। এ দুজনের বাউন্ডারির ঝড় আর রেকর্ড গড়া জুটিতে চোখে শর্ষে ফুল দেখলেন জিম্বাবুয়ের বোলাররা। রানের পর্বত গড়লো বাংলাদেশ। সেই পর্বতে চাপা পড়লো জিম্বাবুয়ে।

সিলেটে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে জিম্বাবুয়েকে ডার্কওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ১২৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ের মধ্য দিয়ে অধিনায়ক হিসেবে জয়ের হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন মাশরাফি।

শুক্রবার বেলা ২টায় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হয় ম্যাচটি। অধিনায়ক মাশরাফির বিদায়ী এ ম্যাচ জিতে জিম্বাবুয়েকে সিরিজে হোয়াইটওয়াশড করেছে বাংলাদেশ। দুরন্ত সেঞ্চুরি করে অধিনায়কের বিদায়ী ম্যাচ রাঙিয়েছেন লিটন দাস আর তামিম ইকবাল।
সিরিজের আগের দুই ম্যাচে টস জিতেছিলেন মাশরাফি। কিন্তু নিজের অধিনায়কত্বের বিদায়ী ম্যাচে হারলেন টস। কিন্তু জিম্বাবুয়ে বোলিং বেছে নেওয়ায় আগের ম্যাচগুলোর মতোই ব্যাটিংয়েই নামলো বাংলাদেশ। বৃষ্টির কারণে ম্যাচের আয়ু ৭ ওভার কমে নেমে আসে ৪৩ ওভারে। ওভার কমলেও বাংলাদেশের রান কমলো কোথায়! ৩ উইকেটে তামিমরা করলেন ৩২২ রান! ডার্কওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে জিম্বাবুয়ের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ালো ৩৪২ রান!

এই রান টপকাতে ওভারপ্রতি প্রায় ৮ রান করে প্রয়োজন ছিল। কিন্তু মাশরাফির অধিনায়কত্বের বিদায়ী ম্যাচে বাংলাদেশের জয় না হলে চলে! রানের চাপে জিম্বাবুয়ে তাই শুরু থেকেই খেই হারিয়ে ফেললো। আঘাত হানলেন মাশরাফিই। প্রথম ওভারেই লিটনের ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়ে দিলেন টিনাশে কামুনহুকামওয়েকে (৪)। বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের সফলতম ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেইলর (১৪) এই সিরিজে টানা তৃতীয়বারের মতো ব্যর্থ।

খানিকটা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন আফ্রিকার দেশটির অধিনায়ক শন উইলিয়ামস। তাঁকে (৩০) বোল্ড করে ফেরান অভিষিক্ত আফিফ হোসেন ধ্রুব। ইনিংস শুরু করা রেজিস চাকাভাও (৩৪) বোল্ড, এবার হন্তারক তাইজুল। ভালো খেলতে খেলতে বিদায় নেন তরুণ ওয়েসলি মাধেভেরে (৪২)। মিরাজের হাতে তাঁকে ক্যাচ বানান সাইফউদ্দিন। রিচমন্ড মুতুম্বামি (০) কাটা পড়েন রানআউটে। টিনোটেন্ডার মুতুমবদজি (৭) মোস্তাফিজের বলে ক্যাচ দেন আফিফের হাতে। মোস্তাফিজকে এক ওভারে দুই ছয়ে উড়ালে বেশিক্ষণ টিকতে পারেন নি ডোনাল্ড তিরিপানো (১৫)। তাইজুল তাঁকে বোল্ড করে পথ দেখান ড্রেসিংরুমের।

সিকান্দার রাজা পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেছেন। ৪৯ বলে ৫টি চার আর ২টি ছয়ে করেছেন ৬১ রান। ইনিংসের ৩৮তম ওভারের ২য় বলে সাইফউদ্দিনের তৃতীয় শিকার হয়ে ফিরে যান রাজা। পরের বলেই বোল্ড চার্লটন টিশুমা। জিম্বাবুয়ে ২১৮ রানে অলআউট।

৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার সাইফউদ্দিন। তাইজুল ২টি, মাশরাফি, মোস্তাফিজ ও আফিফ ১টি করে উইকেট পেয়েছেন।

এর আগে বাংলাদেশের ইনিংস পুরোটাই লিটন আর তামিমময়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ করে ৩২১ রান। লেখা হয় দলটির বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের নতুন ইনিংস। আগের সর্বোচ্চ ছিল ৩২০ রান, ২০০৯ সালে করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেই ৩২২ রান তুলে নতুন করে রেকর্ড লিখেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। আজ শেষ ওয়ানডেতে ৪৩ ওভারেই সেই ৩২২ রান ছুঁয়েছেন তামিম-লিটনরা।

দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন দাস আর তামিম ইকবাল। নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙে গেল মঙ্গলবার (৩ মার্চ) দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছিলেন তামিম ইকবাল। করেছিলেন ১৩৬ বলে ১৫৮ রান। যা বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য ছিল সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। সেই রেকর্ড আজ পেছনে ফেলে দিয়েছেন লিটন দাস। করেছেন ১৪২ বলে ১৭৬! তাঁর ইনিংসে ছিল ১৬ চার, ৮ ছক্কা! স্ট্রাইক রেট ১২৩.০৭।

৩৩.২ ওভার শেষে ম্যাচে ঝুম বৃষ্টি নেমেছিল, বিকাল তখন ৪টা ৬ মিনিট, বাংলাদেশের রান ১৮২। সেই বৃষ্টি থামলো প্রায় দেড় ঘন্টা পর। শুরু হলো মাঠ পরিচর্যার কাজ। কয়েক দফায় মাঠ পরিদর্শন শেষে আম্পায়াররা ম্যাচ পুনরায় শুরু করলেন সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে। তবে ৫০ ওভারের ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে এলো ৪৩ ওভারে। বৃষ্টির পর ‘তরবারি’ বনে গেল লিটন আর তামিমের ব্যাট! দুজনে মিলে যেন কচুকাটা করলেন জিম্বাবুয়ের বোলারদের। বৃষ্টির আগে ১১৬ বলে লিটনের রান ছিল ১০২। বৃষ্টির পর খেলা আরো ২৭ বলে করেন ৭৪ রান! তামিম ইকবালের রান বৃষ্টির আগে ছিল ৮৪ বলে ৭৯। বৃষ্টির পর আরো ২৯ বলে করেন ৪৯ রান! বাংলাদেশ ৩৫ ওভারে (২১০ বল) করে ২০০ রান। পরের ১০০ রান আসে মাত্র ৩৮ বলে! ৩৩.২ ওভারে ১৮২ রান করা বাংলাদেশ পরের ৯.৪ ওভারে করে আরো ১৪০ রান! লিটনের সবক’টি ছক্কা এলো বৃষ্টি থামার পর!

লিটন যখন ৪০.৫ ওভারে কার্ল মুম্বার বলে সিকান্দার রাজার হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নিচ্ছেন, তখন বাংলাদেশের রান ২৯২! উদ্বোধনী জুটিতে তো বটেই, যেকোনো উইকেট জুটিতে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। আগের সর্বোচ্চ ছিল ২২৪ রান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কার্ডিফে পঞ্চম উইকেট জুটিতে করেছিলেন সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহ, ২০১৭ সালের ৯ জুন। এছাড়া উদ্বোধনী জুটিতে আগের সর্বোচ্চ শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ আর মেহরাব হোসেন অপির ১৭০ রান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই তাঁরা করেছিলেন ১৯৯৯ সালে। ২১ বছর পর সেই জুটি আজ পেছনে পড়েছে।

লিটন আউট হয়ে ফিরে গেলেও তামিম ছিলেন অবিচল। জিম্বাবুয়ের বোলাদের উপর ঝড় বইয়ে শেষপর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১০৯ বলে ১২৮ রানে; তাঁর ইনিংসে চার ৭টি, ছয় ৬টি! ত্রয়োদশ ওয়ানডে সেঞ্চুরি করে তামিম বাংলাদেশের সবার ওপরে। এই সিরিজ শুরুর ম্যাচেও মন্থর ব্যাটিংয়ের কারণে চরম সমালোচনায় পুড়ছিলেন এই বাঁহাতি। কিন্তু টানা দ্বিতীয় ম্যাচে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরিতে সব সমালোচনাকে উড়িয়ে ফেললেন সুরমার জলে। এর আগে ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা দুই ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম; এবার করলেন আরেকবার। বাংলাদেশের আর কেউ টানা ওয়ানডে সেঞ্চুরি করতে পারেন নি।

তামিম-লিটনের সৌজন্যে এই প্রথম বাংলাদেশ উদ্বোধনী জুটিতে উভয় ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি পেলো। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতেই নয় শুধু, লিটন-তামিমের জুটি জায়গা করে নিয়েছে বিশ্ব রেকর্ডের পাতায়ও। তাঁদের ২৯২ রানের উদ্বোধনী জুটি বিশ্বের ওয়ানডে ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ। আর যেকোনো উইকেট জুটির বিবেচনায় তাঁদের এ জুটি ষষ্ঠ সর্বোচ্চ। তামিম আর লিটন মিলে এ দিন বলকে উড়িয়ে সীমানাছাড়া করেন ১৪ বার। বাংলাদেশের জন্য এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার নতুন রেকর্ড এটি। আগের রেকর্ড ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গেল বছর, ১১টি ছক্কা মেরেছিলেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। ছক্কা মারায় তামিমকে পেছনে ফেলেছেন লিটন। ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই এক ম্যাচে ৭টি ছক্কা এসেছিল তামিমের ব্যাট থেকে। আজ লিটন ৮টি ছয় মেরে তামিমকে পেছনে ঠেলে দেন।

এদিকে, লিটনের পরে উইকেটে আসা মাহমুদউল্লাহ (৩) দ্রুত আউট হয়ে ফিরে যান। ইনিংসের শেষ বলে ক্যাচ দেন অভিষিক্ত আফিফ হোসেন ধ্রুব (৭)।

বাংলাদেশ করে ৩ উইকেটে ৩২২। এই প্রথম টানা তিন ম্যাচে তিন শ’ ছাড়ানো রান করলো টাইগাররা। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩২১ আর দ্বিতীয় ম্যাচে ৩২২ রান করেছিলেন তামিম-মুশফিকরা।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৬ মার্চ ২০২০/আরআই-কে

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন