আজ মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ইং

আরেকদফা ‘বাঁচলো’ সিলেট

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৩-২৯ ১৮:০৫:৪৭

নিজস্ব প্রতিবেদক :: একের পর এক বিপদ অতিক্রম করছে সিলেটের মানুষ। করোনাভাইরাস নিয়ে এসব বিপদের সম্ভাবনা সিলেটে দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত এ থেকে আপাতত: পরিত্রাণ পেলেন সিলেটবাসী। সর্বশেষ গতকাল শনিবার ফিনল্যান্ডের এক নাগরিককে ঘিরে সিলেটে চলছিলো করোনাভাইরাসের আলোচনা। আজ রবিবার সিলেট শহিদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের কোয়ারেন্টিন থেকে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ নিয়ে সিলেটে মোট ৮ জনকে করোনা আক্রান্তের সন্দেহ করা হলেও শেষমেষ ৫ জনের রিপোর্টে এ রোগ ধরা পড়েনি। আর ৩ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভাল আছেন বলে জানা গেছে। এজন্য সিলেটবাসী বলছেন, হযরত শাহজালাল ও শাহপরান (র.)’র পুণ্যভূমি সিলেটকে আল্লাহ হয়তো রেহাই দিচ্ছেন।
 
সিলেটে সর্বপ্রথম কানাইঘাটের দুবাই প্রবাসী এক যুবকের শরীরে করোনা সন্দেহে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সিলেটে প্রথম করোনা আক্রান্ত সন্দেহে এই যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করার পর গোটা সিলেট জুড়ে বিরাজ করছিল বড় ধরণের আতংক। দুবাই প্রবাসী এ যুবকের রিপোর্ট এসেছে নেগেটিভ। অর্থাৎ তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন।

আর করোনা সন্দেহে এক নারীর মৃত্যুর পর সারা সিলেটের মানুষের মাঝে ছিল বড় ধরনের আতংক। পরে ঢাকা থেকে আসা রিপোর্টে মৃত এই নারীর শরীরে করোনাভাইরাস ধরা  না পড়ায় সিলেটের মানুষ আপাতত যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।

এর আগে জ্বর, সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে আরেক যুক্তরাজ্য প্রবাসী নারী শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি ছিলেন। গত রবিবার ঢাকা থেকে আসা রিপোর্টে এই নারীর শরীরেও করোনাভাইরাস ধরা পড়েনি।

হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি ৮ জনকে নিয়ে সিলেটের মানুষ পার করছিলেন উদ্বেগ-উঠকন্ঠায়। তাদের শরীরে যদি এই ভাইরাস ধরা পড়ে তাহলে সিলেটে করোনার বংশ বিস্তার লাভ করবে এমন আতংকে সময় পার করেছিলেন মানুষ। 

এ পর্যন্ত সিলেটে ৮ জন হাসপাতালের আইসোলেশনে ছিলেন। এদের মধ্যে পাঁচ জনের শরীরে মহামারী করোনাভাইরাস ধরা পড়েনি। তাদেরকে হাসঅপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন দুই জন। একজন ঢাকার এক  বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। অপর জন এক বৃদ্ধ। তাদের নমুনা ঢাকায় আজ পাঠানোর কথা।  

বিষয়টি সিলেটভিউকে নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিছুর রহমান। 

তিনি জানান, শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন ৩ জনের মধ্যে একজন হলেন ঢাকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। গত শনিবার রাতে ঢাকা থেকে সিলেটে আসার পথে অসুস্থবোধ করলে তিনি বাড়ি না গিয়ে সোজা শামসুদ্দিন হাসপাতালে চলে আসেন এবং শনিবার রাত থেকেই এই হাসপাতলের কোয়ারেন্টিন বিভাগে তিনি চিকিৎসাধিন আছেন। 

অপরদিকে, ৮০ বছরের এক বৃদ্ধের নিউমোনিয়া জ্বর ও সর্দি-কাশি থাকায় তাকে সিলেট ওসমানী হাসাপাতাল থেকে শামসুদ্দিন হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার অবস্থাও উন্নতির দিকে আছে। এছাড়াও  শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের কোয়ারেন্টিন বিভাগে বর্তমানে আরেকজন চিকিৎসাধিন। পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে তাকে। তার অবস্থাও খারাপ নয়।

এদিকে, শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধিন থাকা যুক্তরাজ্য প্রবাসীর পরীক্ষার রিপোর্ট \'নেগেটিভ\' আসায় তাকে গতকাল (শনিবার) বাড়িতে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
গতকাল রবিবার নগরীর মীরবক্সটুলায় আচমকা অজ্ঞান হয়ে পড়া ফিনল্যান্ডের নাগরিক মি. মার্কোকে হাসপাতালে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে কোয়ারেন্টিন থেকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি ওসমানীতে চিকিৎসাধিন আছেন। তার শারীরিক অবস্থাও অনেকটা ভাল।

অজ্ঞান অবস্থায় ফিনল্যান্ডের নাগরিক মার্কোকে হাসপাতালের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল। তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসকরা করোনা ভাইরাসের কোন উপসর্গ না পাওয়ায় তাকে ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।


জানা গেছে, ফিনল্যান্ডের যুবক মি. মার্কো (৪৫) প্রায় দুই মাস আগে বাংলাদেশে ঘুরতে আসেন। গত প্রায় দেড় মাস ধরে তিনি সিলেটে অবস্থান করে হাওয়াপাড়াস্থ হোটেল নাজালের ৩০ নম্বর রুমে থাকছিলেন। শনিবার বিকালে অসুস্থতা অনুভব করায় মার্কো হোটেল থেকে বেরিয়ে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে মীরবক্সটুলাস্থ খায়রুন ভবনের পাশে রবি অফিসের সামনে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে বিকাল ৫টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল থেকে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
করোনা রোগ নিয়ে সাধারণত বিদেশীদের নিয়ে মানুষ সঙ্কিত। কারণ এ রোগ চীন থেকে ছড়িয়ে এখন সারা বিশ্বে বিস্তার লাভ করেছে। এজন্য শনিবার সিলেট নগরীতে ফিনল্যান্ডের নাগরিক মার্কোকে নিয়ে ছিল বড় ধরণের আতংক। তার শরীরে করোনার কোন লক্ষণ না থাকায় তাকে ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হলে আরেকদফা বাঁচলেন সিলেটের লোকজন। সাধারণ জনগণ বলছেন, সিলেটের মাঠিতে শুয়ে আছেন হযরত শাহজালাল ও শাহপরান (র.)সহ ৩৬০ জন ওলী-আউলিয়া। মহান আল্লাহ হয়তোএকের পর এক বিপদের সম্মুখ থেকে বাঁচাচ্ছেন সিলেটবাসীকে এমনটি বলছেন সাধারণ জনগণ।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ২৯ মার্চ ২০২০/ জুনেদ 

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন