আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে বাসা ভাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় কয়েক হাজার পরিবার

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-০২ ০০:০৩:৩৮

নিজস্ব প্রতিবেদক :: মার্চ মাস পেরিয়ে আজ এপ্রিল মাসের প্রথম দিন। করোনাভাইরাসে সার বিশ্ব এখন লন্ডবন্ড। সিলেটেও করোনার প্রভাবে মানুষ অনেকটা গৃহবন্দি। মানুষের আয় নেই বিগত কয়েকদিন থেকে। নিম্ন আয়ের লোকজন ও মধ্যবিত্তরা পড়েছেন বেশ বিপাকে। কিভাবে খাবার যোগাড় করবেন কিংবা নতুন মাসের বাসাভাড়া দেবেন। এমনি দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে সিলেটে বাসাভাড়া করে থাকা মানুষ দিনাতিপাত করছেন। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মানবিক দিক বিবেচনা করে বাসা ভাড়া মৌওকুফের আহবান জানিয়েছেন নগরীর বাড়ীর মালিকদের প্রতি। অনেকে বাসা ভাড়া না নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন ইতিমধ্যে।

সাধারণত বাসাভাড়া মাসের প্রথম দিকে দিতে হয়। নতুন মাসের শুরুতে সিলেটের ভাড়াবাসায় থাকা লোকজন পড়েছেন বেশ বিপাকে। কিভাবে দৈনন্দিন বাজার করবেন এই চিন্তার পাশাপাশি নতুন মাস শুরু হওয়ায় তাদের মাঝে এখন যুক্ত হয়েছে বাসাভাড়া নিয়ে।

নগরীর উপশহরের স্প্রিং টাওয়ারের বাসিন্দা জামাল আহমদ সিলেটভিউকে বলেন, একটি দোকান ও কিছু বৈদেশিক সাহায্য নিয়ে সংসার চলে তার কোনমতে। কিন্তু একদিকে দোকান বন্ধ অপরদিকে বিদেশ থেকে কোন টাকা আসছে না। এখন কিভাবে বাসাভাড়া দেবেন এই চিন্তায় তিনি এখন দিশেহারা।

মেন্দিবাগের একটি কলোনিতে বসবাস করেন রোকেয়া বেগম নামের এক নারী। তার স্বামী ঘরে অচল। ছেলে বাহিরে দৈনিক মজুরী হিসেবে কাজ করে। কিন্তু এখন বাহিরে কাজ নেই। সংসার চলেছে অনাহারে-অর্ধাহারে। এরমাঝে গতকাল মঙ্গলবার বাসার ৫ তারিখের মধ্যে ভাড়া পরিষোদের জন্য বলে গেছেন। এতে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে।

সিলেট নগরীতে মূলত ৪ শ্রেণীর লোক বাসাভাড়া দিয়ে বসবাস করেন। চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, প্রবাস নির্ভর ও বস্তিবাসী (রিকসা চালক, মজুরীর কাজ)।

যারা সরকারি কিংবা বড় বড় প্রতিষ্টানে চাকরি করেন তাদের বাসভাড়া নিয়ে তেমন কোন সমস্যা নেই। নগরীতে অনেকে ছোট-বড় ব্যবসা পরিচালনা করে বাসাভাড়া দিয়ে সংসার চালান। কিন্তু মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে নগরীর নিত্যপ্রয়জনীয় দোকান ছাড়া সব কিছু রয়েছে বন্ধ। এতে এসব ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। সংসার চালানোর পাশাপাশি নতুন মাসের বাসাভাড়া নিয়ে অনেকেই এখন রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।

নগরীর উপশহরের বাসিন্দা সুমেল আহমদ চৌধুরী সিলেটভিউকে জানান, উপশহরে কাপড়ের দোকান রয়েছে তার। এটির উপর নির্ভর তার পুরো সংসার। দোকান বন্ধ হওয়ায় সংসারের বাজার করবেন না দোকানের ভাড়া দেবেন। এর মাঝে বাসাভাড়ার চিন্তা। সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বাসাভাড়া মৌওকুফের যে আহবান করেছেন মানবিক দিক বিবেচনায় সবাইকে এতে সাড়া দেয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

প্রবাসী অধ্যুষিত এই সিলেট নগরীতে বড় একটি অংশ বাসাভাড়া করে বসবাস করেন প্রবাসী টাকার উপর নির্ভর হয়ে। করোনায় আক্রান্ত বর্তমানে সার বিশ্ব। অর্থনৈতিক মন্দায় বিদেশ থেকে বেশিরভাগ পরিবারে আসছে না কোন টাকা পয়সা। এতে হঠাৎ করে বিপদে পড়েছেন প্রবাসী নির্ভর এসব পরিবার।

বারুথখানায় বসবাস করেন আলেয়া খানম নামের বিয়ানীবাজারের এক নারী। বাচ্চাদের লেখাপড়া করানোর জন্য সিলেট শহরে বসবাস করেন তিনি। স্বামী থাকেন সৌদি আরবে। কিন্তু সেখানে করোনাভাইরাসের কারণে কাজ নেই। তার স্বামী নিজেও চলতে পারছে না। এখন কিভাবে বাসা ভাড়া দেবেন এই নিয়ে তার মাথা ব্যাথার যেন শেষ নেই।

সিলেট নগরীতে সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন বস্তিবাসী। এসব বস্তির লোকজন দিনে আনে দিনে খায়, এই অবস্থা তাদের। রিকসা চললেও যাত্রি নেই। অপরদিকে দৈনন্দিন যারা কাজ করেন তারাও এখন বাসাভাড়া নিয়ে দিশেহারা।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২ এপ্রিল ২০২০/জুনেদ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন