আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

জাপা নেত্রী শিউলীর একের পর এক প্রতারণার ফাঁদ, অবশেষে শ্রীঘরে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-০৬ ০৯:৫৫:১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক :: নিজেকে পরিচয় দেন লন্ডনি কন্যা হিসেবে। বিয়ের আলোচনার সময় বাড়ির ঠিকানা দেন ভুয়া। কাবিন হিসেবে পাত্রপক্ষের কাছে ডিমান্ড করেন মোটা অংকের নগদ টাকা ও প্রয়োজনমতো ৫-১০-২০ ভরি স্বর্ণালংকার। বিয়ের কিছুদিন পরই পূর্ব পরিকল্পনা মতো স্বামী বা স্বামীর বাড়ির মানুষের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া করে চলে আসেন স্বামীর বাড়ি ছেড়ে। পরে স্বামীকে \'তুমি ভালো নও, তোমার বাড়ির লোকজনও ভালো নয়\' এই অজুহাত দেখিয়ে- \'গুড বাই- আমি লন্ডন চলে যাচ্ছি\' বলেই স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

কিছুদিন পর আবার নতুন আয়োজনে পুরনো পরিকল্পনায় খুঁজেন অন্য পাত্র। এভাবেই তিনি পাতেন একের পর এক প্রতারণার ফাঁদ। তবে শেষ পর্যন্ত গত শনিবার (৪ এপ্রিল) তিনি ধরা পড়েছেন পুলিশের জালে, যেতে হয়েছে শ্রীঘরে। 

তিনি আর কেউ নন, মহিলা জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শিউলী বেগম। লন্ডনি কন্যা সেজে বিয়ে করা এবং পরর্তীতে স্বামীর বাড়ির সঙ্গে প্রতারণার জন্য শিউলী বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন তার দুই কাজের মেয়েও।

শিউলী বিশ্বনাথ উপজেলার কোনারাই গ্রামের তৌহিদ উল্লার মেয়ে। আর দুই কাজের মেয়ের একজন হলেন সুনামগঞ্জের ছাতক থানার দোয়ালিয়া গ্রামের মৃত কাচা মিয়ার মেয়ে সুমনা আক্তার (১৯) আর অন্যজন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ঘোলডুবা গ্রামের মৃত আজাদ মিয়ার মেয়ে সিমা আক্তার (১৯)। গতকাল রবিবার (৫ এপ্রিল) তাদেরকে সুনামগঞ্জ জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে আশরাফুল রহমান নামের একজনের মামলার প্রেক্ষিতে শনিবার রাতে জগন্নাথপুর উপজেলায় আশারকান্দি ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলার লোহারগাঁও গ্রামের আশরাফুল রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয় সিলেটের ওসমানীনগর থানার করমসী গ্রামের রহিম উল্লাহর। পরিচয়ের সূত্রধরে গত ফেব্রুয়ারি মাসে আশরাফুলের সঙ্গে সিলেট নগরীর উপশহর এলাকায় একটি বাসায় লন্ডনি পাত্রী হিসেবে শিউলী বেগমকে দেখান রহিম উল্লাহ। ওই সময় শিউলী বেগম তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার জিলপাইয়ে বলে জানান। পাশাপাশি শিউলী নিজেকে লন্ডনি কন্যা পরিচয় দেয়।

এরপর গত ১০ ফেব্রুয়ারি সিলেটে একটি হোটেল নগদ ৫ লাখ টাকার কাবিন ও ৭ ভরি স্বর্ণালংকার দিয়ে শিউলী বিয়ে করেন আশরাফুল। বিয়ের পর তারা জগন্নাথপুরেই বসবাস করছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই শিউলী শশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে ঝগড়া করে তার বাবার বাড়ি চলে যায়। বাবার বাড়ি যাওয়ার কয়েকদিন পর শিউলী আশরাফুলকে মুঠোফোনে জানায় সে লন্ডন চলে যাচ্ছে। একই সাথে তাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ বলেও জানায়।

এ ঘটনার কিছুদিন পর আশরাফুল রহমান জানতে পারেন শিউলী বেগম লন্ডন নেয়ার কথা বলে সম্প্রতি জগন্নাথপুরের আশারকান্দি ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের কামরুল ইসলামকে বিয়ে করেছেন। এরপর আশরাফুল জগন্নাথপুর থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ শনিবার (৪ এপ্রিল) রাতে কামরুল ইসলামের বাড়ি থেকে ভুয়া লন্ডনী কন্যা শিউলী বেগমসহ তার অপর দুই কাজের মেয়ে গ্রেপ্তার করে।

মামলার বাদি আশরাফুল রহমান জানান, আমাকে ফাঁসিয়ে বিয়ের কাবিনের মাধ্যমে নগদ ৫ লাখ টাকা ও সাত ভরি স্বর্ণ নিয়ে কৌশলে পালিয়ে যায় শিউলী বেগম। আমি জানতে পারি আমার মতো আরেকটা ছেলেকে প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ের নামে প্রতারিত করা হচ্ছে। বিষয়টি থানায় লিখিতভাবে জানাই।

জগন্নাথপুর খানের ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী এ নিয়ে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রতরণাচক্রের ভুয়া লন্ডনী কন্যাসহ গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে গতকাল সুনামগঞ্জ জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ৬ এপ্রিল, ২০২০ / ডালিম

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন