আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং
মো. রেজাউল হক ডালিম :: সিলেটের ডা. শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। সিলেটের প্রাচীনতম একটি সরকারি হাসপাতাল। সদর হাসপাতাল বা সিলেটের গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে ‘কাজলাওর আসপাতাল’ নামেও পরিচিত।
সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনের আগে শামসুদ্দিন হাসপাতালই ছিলো এ অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসকার একমাত্র আশ্রয়স্থল। এরশাদের শাসনামলে ওসমানী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এটির কদর মানুষের কাছে দিন দিন কমতে থাকে। তবে চিকিৎসাসেবা চালুই ছিলো, সবসময়ই রোগীর সংখ্যা থাকতো কম। অনেকেই ভুলতে বসেছিলেন এই হাসপাতালের নাম। কিন্তু ভুলতে বসা হাসপাতালটিই এখন সিলেটের করোনা আক্রান্ত মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে।
বিশ্বব্যাপী থাবা বসানো প্রাণঘাতি করোনা শামসুদ্দিন হাসপাতালকে ফের পরিচিত করে তুলেছে সিলেটবাসীর কাছে। সিলেটের মানুষের সবার দৃষ্টি এখন এই হাসপাতালের দিকে। সিলেটের করোনাক্রান্ত মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল এখন এই হাসপাতাল। প্রতিদিনের খবরের কেন্দ্রবিন্দু শামসুদ্দিন।
সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পর এই হাসপাতালকেই করোনা আইসোলেশনের জন্য প্রস্তুত করেন। ফলে এখন করোনা আক্রান্ত ও সন্দেহজনক রোগীরাই এ হাসপাতালের বাসিন্দা। প্রতিদিনই করোনাক্রান্ত আর উপসর্গসহ রোগী ভর্তি হচ্ছেন এ হাসপাতালে। এখন বাড়তে বাড়তে ৬৫ জনে এসে পৌঁছেছে। আজ পর্যন্ত করোনা সন্দেহে ভর্তি রয়েছেন ৩৬, বাকি প্রায় ৩০ জনের শরীরে করোনার সকল উপসর্গ বিদ্যমান।
শামসুদ্দিনে এখন রোগী বাড়ছে, বাড়ছে ব্যস্ততাও। সিলেটের করোনার জন্য নির্ধারিত এ হাসপাতাল বলতে গেলে ‘মান্দাতার আমলের’। কেবিন, ওয়ার্ড সবই আছে, কিন্তু উন্নত প্রযুক্তির কোনো ছোঁয়া নেই এ হাসপাতালে। পুরাতন হওয়ার কারণে রোগীরা তেমন স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না।
তবে এই হাসপাতালে নতুন করে লাগছে প্রযুক্তি ছোয়া। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হাসপাতালে প্রস্তুত করা হয়েছে ১১টি আইসিইউ বেড। পুরো একটি ওয়ার্ডকেই আইসিইউ ওয়ার্ড করা হয়েছে। রয়েছে অক্সিজেন ও ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- সিলেটে সরকারিভাবে করোনা চিকিৎসকার জন্য শামসুদ্দিন হাসপাতাল ছাড়া বিকল্প কিছু ছিলো না। এ কারণে তারা এই হাসপাতালকে আইসোলেশনের জন্য প্রস্তুত করা হয়। ওসমানীতে করা হলে সাধারণ চিকিৎসা ব্যবসস্থায় ব্যাঘাত ঘটতো।
শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সুশান্ত কুমার মহাপাত্র বলেছেন- এ হাসপাতালে ১০০টি বেড ছিলো। করে এর মধ্যে ১২টি বেড কমে গেছে। কারণ- আইসিইউ সাপোর্টের জন্য একটি ওয়ার্ড পুরোটাই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান- শামসুদ্দিনে দিন দিন রোগী বাড়ছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মে) পর্যন্ত ৩৬ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। করোনা সন্দেহে রয়েছেন আরো প্রায় ৩০ জন।
সুশান্ত কুমার বলেন, ভর্তি রোগীদের ইতোমধ্যে ২ জনের আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন পড়েছে। প্রয়োজনমাফিক প্রতিদিনই অক্সিজেন ও ভেন্টিলেশন দেয়া হচ্ছে রোগীদের।
এদিকে, শামসুদ্দিন হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা চিকিৎসক, নার্স এবং সংশ্লিষ্টদের মধ্য থেকে অনেকেই সিলেট নগরের দরগাহ গেইটস্থ হোটেল হলি গেইটে থাকছেন। পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকিমু্ক্ত রাখতে তাদের গত ৬ মে থেকে সরকারি খরচে সেখানে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সুশান্ত কুমার মহাপাত্র সিলেটভিউ২৪-কে বলেন, শামসুদ্দিনের চিকিৎসক, নার্স এবং সংশ্লিষ্টদের মধ্য থেকে ডিউটি শেষে বাসায় ফিরলে যাদের পরিবারের সদস্যদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তাদেরই কেবল হোটেলে রাখা হয়েছে। আর যাদের বাসায় ফিরে আলাদা থাকার ব্যবস্থা রয়েছে, পরিবারের সদস্যরা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে না তারা ডিউটি শেষে নিজ বাসায়ই ফিরছেন।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / ২৮ মে, ২০২০ / ডালিম