আজ মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে ১৮ দিনে করোনা রোগী বেড়েছে সাড়ে ৪ গুণ!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৫-২৮ ১৯:৪৯:০৬

রফিকুল ইসলাম কামাল :: থামাথামির কোনো লক্ষণ নেই। বরঞ্চ প্রতিদিন যেন নতুন শক্তি সঞ্চয় করে ঝাঁপিয়ে পড়ছে করোনা নামক মহামারি। ফলে প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে করোনাক্রান্ত রোগীদের তালিকা। এর মধ্যে সর্বত্র বিপণিবিতান, দোকানপাট খুলে যাওয়া, মানুষের অসচেতনতা বাড়িয়ে দিচ্ছে বিপদ। সর্বশেষ ১৮ দিনে তাই সিলেটে করোনা রোগী বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ গুণ!

স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, ১০ মে’র পর থেকে সিলেটে করোনাক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। ঈদকে সামনে রেখে ওই দিন থেকে সব ধরনের দোকানপাট, বিপণিবিতান বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। এর পরপরই বানের জল যেভাবে বাঁধ ভেঙে দেয়, সেভাবেই যেন ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যায় এক শ্রেণির মানুষের। এই শ্রেণির মানুষের ঢল নামে বিপণিবিতানে।

শত শত মানুষ মাস্ক ও গ্লাভস ছাড়াই কেনাকাটা করতে বেরিয়ে পড়েন। সিলেটে ঈদের আগে খোলা রাখা হাসান মার্কেট, হকার্স মার্কেট প্রভৃতি বিপণিবিতানগুলোতেও ছিল না স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো তৎপরতা। ফলে প্রচণ্ড ভিড় জমে বিপণিবিতানগুলোতে।

ঘরের বাইরে মানুষের ঢলই বাড়িয়ে দেয় বিপদ। বাড়তে শুরু করে আক্রান্তের সংখ্যাও। সর্বশেষ গতকাল বুধবার সিলেট জেলায় এক দিনে রেকর্ডসংখ্যক ৪২ জন করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ১০ মে সিলেট জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৮৬ জন। এর মধ্যে ২৯ জন ছিলেন হাসপাতালে। ওই দিন পর্যন্ত সুস্থ হন ৯ জন, মারা যান ২ জন।

আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মে) সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেটে করোনাক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৮৫ জন। এর মধ্যে ৭২ জন হাসপাতালে ভর্তি। সুস্থ হয়েছেন ৪০ জন আর মারা গেছেন ১১ জন।

অর্থাৎ, ১৮ দিনের ব্যবধানে সিলেট জেলায় করোনা রোগী বেড়েছে ২৯৯ জন। গত ১০ মে’র তুলনায় যা প্রায় সাড়ে ৪ গুণ বেশি।

এছাড়া একই সময়ে মারা গেছেন আরো ৯ জন করোনা রোগী। এর বাইরে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন কয়েকজন।

এদিকে, সিলেটে করোনাক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হন গত ৫ এপ্রিল। শনাক্ত হওয়া প্রথম রোগী ছিলেন ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মঈন উদ্দিন। তিনি মারা যান ১৫ এপ্রিল।

৫ এপ্রিল থেকে ১০ মে, এই ৩৬ দিনে সিলেটে করোনা রোগী ছিল ৮৬ জন। আর পরের ১৮ দিনে রোগী বেড়েছে আরো ২৯৯ জন! এ তথ্য বলছে, প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ৩৬ দিনে সিলেটে গড়ে ২.৩৮ জন করোনা রোগী পাওয়া যায়। কিন্তু পরের ১৮ দিনে গড়ে ১৬.৬১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন!

ভয়ঙ্কর এই অবস্থার জন্য মানুষের অসচেতনতাকেই মূল কারণ বলে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মানুষকে অবশ্যই ঘরে থাকতে হবে। অপ্রয়োজনে বাইরে বেরোনো মানেই বিপদকে বাড়িয়ে দেওয়া।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান সিলেটভিউকে বলেন, ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের কারণে সিলেটে এখন করোনা রোগী বাড়ছে। একজন থেকে আরেকজন, আরেকজন থেকে অপরজন—এভাবে ভাইরাস ছড়াচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে বিপণিবিতানে মানুষের ভিড় বিপদকে বাড়িয়ে দিয়েছে। মানুষ যদি এখন সতর্ক না হয়, সচেতন না নয়, তবে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে।’

সিলেটের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়া, সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল, ওসমানী মেডিকেল কলেজের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়—এঁরা প্রত্যেকেই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাইরে না বেরোতে মানুষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। একইসাথে জরুরি প্রয়োজনে বের হলে মাস্ক পরে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেও আহবান জানান তাঁরা।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৮ মে ২০২০/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন