আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীতেও এক হতে পারেনি সিলেট জেলা বিএনপি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৫-৩১ ০২:০২:০১

জুনেদ আহমদ চৌধুরী :: সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। করোনাভাইরাসের এই মহামারীতেও কমিটির নেতারা এক হতে পারেনি। বিগত বেশ কিছু দিন থেকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে জেলা বিএনপি নেতাদের। শনিবার দলের প্রতিষ্টাতা জিয়াউর রহমানের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিবাদমান গ্রুপ আলাদা আলাদা মিলাদ ও  দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।  

গত বছরের দুই অক্টোবর সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণার পর থেকে শুরু হয় স্নায়ু দ্বন্দ্ব। কিছু দিন যেতে না যেতেই উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠন করাকে কেন্দ্র করে এ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ  নেয়। তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ৩ মাস সিলেটের ১৩ উপজেলা ও ৫ পৌরসভা কমিটি অনুমোদন দিতে পারেনি দলের হাইকমান্ড। শেষমেশ কেন্দ্র থেকে সবকটি ইউনিট কমিটি ঘোষণা দিলে একটি পক্ষ ইউনিট  কমিটির বিপক্ষে অবস্থান নেন। অবস্থা বেগতিক দেখে  দলের  সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ডা.  জাহিদ হোসেন সিলেটে এসে উভয় পক্ষের সাথে বৈঠক করে কিছুটা সমঝোতা করে দেন। কিন্তু সেটি বেশি দিন গড়ায়নি। তারা আবারো প্রকাশ্যে জড়িয়ে পড়েন দ্বন্দ্বে।

করোনাভাইরাস শুরুর আগে দলের একটি মাননবন্ধন কর্মসূচিতে জেলা বিএনপির আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার, আহবায়ক কমিটির আবুল কাহের শামিম, সদস্য আলী আহমদসহ কয়েকজন নেতা সেদিন উপস্থিত থাকলেও একটি অংশ এতে  উপস্থিত হননি। 

মরণব্যধি করোনার শুরু থেকেই সিলেট জেলা  বিএনপির আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদারকে ত্রাণ বিতরণ কিংবা দলের  কোন  কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। অসুস্থতার জন্য তিনি ঢাকায়  অবস্তান করছেন বলে সিলেটভিউকে জানিয়েছেন। কিছু দিন আগে সিলেট জেলা বিএনপি অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এতে আহবায়ক কমিটির সকলকে কামরুল হুদা ফোন করে সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু দলের একটি পক্ষ কোন আর্থিক সহযোগিতা কিংবা ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নেয়নি বলে জেলা বিএনপির আহবায়কের অভিযোগ। সেদিন জেলা বিএনপির ব্যানারে আহবায়ক  কমিটির  সদস্য আবুল কাহের শামিম ও আলী আহমদসহ কয়েকজন নেতারদের ত্রান বিতরণ করতে দেখা যায়।  

এর পাল্টা হিসেবে জেলা বিএনপির ব্যানারে ঈদ উপহার বিতরন করে আহবায়ক কমিটির অপর একটি অংশ। দলের এই বলয় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে প্রধান অতিথি করে গত ১৮ মে নগরীর কুমারপাড়া এলাকায় বিএনপির অঙ্গসংগঠনের প্রতিনিধির হাতে ঈদ উপহার সামগ্রী তুলে দেয়া  হয়। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন-সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এডভোকেট আশিক উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন লস্কর, ইসতিয়াক সিদ্দিকী, মাহবুবুল হক চৌধুরী, জকিগঞ্জ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ তাপাদার প্রমুখ।

তাদের এই ঈদ উপহার বিতরণ কর্মসূচিকে সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার বলেছেন, জেলা বিএনপির ব্যানার ব্যবহার করা তাদের ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, জেলা বিএনপি ত্রাণ বিতরণ করতে যে ফান্ড করেছিল সেখানে তিনি সকলের সহযোগিতা পাননি। কিংবা একটি ফোন করেও একটি অংশ যোগাযোগ রক্ষা করেনি। 

এদিকে দলের প্রতিষ্টাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জেলা বিএনপির বিবাদমান দুই পক্ষ আলাদা আলাদা মিলাদ ও দোয়া  মাহফিল করেছে। জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামিমের যতরপুরস্ত বাসায় ৮ জনকে নিয়ে একটি দোয়া মাহফিল অনুষ্টিত হয়। দোয়া মাহফিলে ৫/৬  জনের উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সিলেটভিউ এর এ প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জন্য ক্ষিপ্ত হন বিএনপির এই নেতা। এ ধরণের প্রশ্নের জন্য কৈফিয়তও চান তিনি। এ প্রতিবেদকের প্রশ্ন ছিল, দোয়া  মাফফিলে ৫/৬ জন ছিলেন কি-না। সেই উত্তর না দিয়ে কেন প্রশ্নটি করা হল বিএনপির এই নেতা ক্ষেপে যান এ প্রতিবেদকের উপর। তিনি এ  প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, কোথায় ৬ পেলেন? অথচ  গণমাধ্যমে পাঠানো ছবিতে ৮ জনের উপস্থিতি দেখা গেছে। এছাড়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও এই ৮ জনের নাম দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই জন জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির কেউ নয়। দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, আলী আহমদ, ফখরুল ইসলাম ফারুক, আব্দুল আহাদ খান জামাল, আবুল কাশেম ও শামীম আহমদ, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক বুরহান উদ্দিন, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক দুলাল রেজা।

দ্বিতীয় প্রশ্নে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আহবায়ক কমিটির সবাইকে জেলা বিএনপির আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার ফোন করে মিলাদের বিষয়ে জানিয়েছেন। 

কিন্তু জেলা  বিএনপির  আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার জানিয়েছেন, আমি  সবাইকে ফোন করিনি। কারণ  হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন,  বিগত তিনটি কর্মসূচিতে সবাইকে ফোন করে জানানো হলেও একটি অংশ এতে উপস্থিত হয়নি। যেহেতু দাওয়াত দিলে তারা  আসেন না সুতরাং তাদের  তাদের আর বলার  প্রয়োজন নেই বলে তিনি জানান। কামরুল হুদা আরো বলেন, শনিবার জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য কাইয়ুম চৌধুরী খাবার  বিতরণ করেছেন নিজ উদ্যোগে। অথচ তিনি জেলা বিএনপির ত্রাণ ফান্ডে একটি টাকাও দেননি। 

এদিকে জেলা বিএনপির  আহবায়ক কমিটির অপর অংশ শনিবার বাদ এশা  নগরীর শিবগঞ্জে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করেছে। এতে উপস্থিত ছিলেন  জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য  এডভোকেট আশিক উদ্দিন, আব্দুল  মান্নান, আহমেদুর রহমান মিলু, এমরান আহমদ চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন লস্কর,ইসতিয়াক  আহমদ সিদ্দিকী, হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন  ও মাহবুবুল হক চৌধুরী।

সিলেট জেলা  বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক  ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য  এমরান আহমদ চৌধুরী সিলেটভিউকে জানান, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের কেউ কিছু অবগত করেননি। সুতরাং আমরা আলাদাভাবে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছি। 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ৩১ মে /জুনেদ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন