Sylhet View 24 PRINT

ওসমানীনগরের উমরপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করোনাকালেও ফুটছে আলো

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৬-২৯ ২২:৪০:৩৭

রনিক পাল, ওসমানীনগর :: সিলেটের ওসমানীনগরে উমরপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ ভবনটি এখন আলো ঝলমল। যে ভবনে ঢুকতে এক সময় মানুষ ভয় পেত, সেখানে এখন প্রতিদিনই ঘটছে কোনো না কোনো নবজাতকের আগমন। শিশু, কিশোরীসহ মায়েদের স্বাস্থ্যসেবার ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে কেন্দ্রটি। বাড়ছে তৃণমূল পর্যায়ে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী সেবাপ্রার্থী মায়েদের ভিড়। হাওরবেষ্টিত ও জনবহুল জনপদের স্বাস্থ্যচিত্রের চরম দুরাবস্থার মাঝেও আশার আলো জাগিয়েছে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। তবে অভিযোগ রয়েছে, ওই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অধিনে কর্মরত পরিদর্শিকা নিয়মিত তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও স্বাস্থ্য বিভাগের অধিনে কর্মরত সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল অফিসার ও উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার জনবল সংকটসহ না অজুহাতে দিনের পর দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় একজন ফার্মাসিস্ট দিয়েই চলছে স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রম। ফলে প্রসুতি মায়েরা ব্যতিত হাসপাতালে নানা রোগ নিয়ে আসা রোগীরা হচ্ছেন সেবা বঞ্চিত। চিকিৎসকরা কর্মস্থলে না আসায় অনেক সময় গর্ভবতী মায়েদেরও সঠিক সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মরত পরিদর্শিকাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় সন্তান প্রসব তো দূরের কথা, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা না মিললেও এখন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কিবিরিয়ার তত্বাবধানে তাঁর ব্যাক্তিগত ও সরকারী উন্নয়ন বরাদ্দ থেকে আসবাবপত্র সরবরাহ, নিরাপদ যাতায়াত ও পানির ব্যবস্থাসহ ভবন সংস্কারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিকে এসেছে আধুনিকায়নের ছোঁয়া। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত পরিদর্শিকা সম্পা রানী ঘোষের তত্বাবধানে পরিচালনা করা হচ্ছে মায়েদের মাতৃত্ব ও প্রসবকালীন সেবাসহ নিরাপদ প্রসব কার্যক্রম। ফলে শুধু এই ইউনিয়নের বাসিন্দারাই নয়, আশপাশের এলাকা থেকেও মায়েরা ছুটে আসছেন। উপজেলার অনান্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রেগুলোতে পরিবার কল্যান বিভাগের সেবার মান নি¤œমুখি ও বেহাল দশা থাকলেও জরেজমিনে গিয়ে পুরো উল্টোচিত্র দেখা গেছে ওই কেন্দ্রটিতে। আগতদের পরামর্শ দিতে ব্যস্ত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা। পরিপাটি করে সাজানো নবজাতক প্রসবের কক্ষটি। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে পুরানো ভবনটি সংস্কার করায় দেখে বোঝাই যাচ্ছে না পূর্বে এটা পরিত্যক্ত ছিল। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনের ফাঁকিবাজিতে সাধারণ রোগীরা থেকে যাচ্ছেন সেবা বঞ্চিত এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

একাধিক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কর্মরত চিকিৎসকরা র্দীঘদিন অনুপস্থিত থাকায় জটিল ও সাধারণ রোগীরা সেবা বঞ্চিত হলেও পরিদর্শিকার তত্বাবধানে ২৪ ঘন্টা সন্তান প্রসবসহ কিশোরী ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতসহ অব্যাহত রয়েছে টিকাদান কার্যক্রম। গত দুই বছর আগেও যেটা ছিল অসম্ভব। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মরতদের মতো স্বাস্থ্য বিভাগের অধিনে কর্মরত চিকিৎসকরাও যদি নিয়মিত আসতেন তাহলে পোরোপোরি প্রাণ ফিরে পেত স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি।

পরিদর্শিকা সম্পা রাণি ঘোষ জানান, পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এইচপিএনএসপি প্রোগ্রামের আওতায় মাতৃমৃত্যু রোধ, সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজ করছি। ২০১৮ সালে আমি ওই কেন্দ্রে যোগদানের পর এলাকার গর্ভবতী মায়েদের তালিকা প্রণয়ন, প্রসবকালীন সময়ে ফলোআপ চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহিতকরণ, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও সন্তান প্রসবের সুব্যবস্থার বিষয়ে স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করেছি। প্রথম দিকে নরমাল ডেলিভারি রোগীর স্যংখ্যা কম হলেও বর্তমানে কেন্দ্রটিতে প্রতিমাসে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন মায়েদের নিরাপদ সন্তান প্রসব কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। চিকিৎসকসহ কেন্দ্রটির অনান্য শূন্য পদগুলোর নিরসন হলেও কার্যক্রমে গতি আরও বৃদ্ধি পাবে।   

উমরপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ ইউনিয়নে থাকা তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিকের পূর্বের অবস্থা খুব নাজুক ও জরাজীর্ণ ছিল। বিশেষ করে প্রাচীনতম ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের ভবনটি পরিণত হয়েছিল অনেকটা গোয়ালঘরে। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ইউনিয়নবাসীর স্বাস্থ্য ও প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ব্যক্তিগত ও উন্নয়ন বরাদ্দ থেকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনগুলোকে সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করেছি । নিজ উদ্যোগে স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বার বার যোগাযোগের পর কেন্দ্রটিতে একজন এমবিবিএস ডাক্তার পদায়ন করা হলেও বেশ কিছু দিন ধরে অজানা কারনে তিনি কর্মস্থলে আসছেন না। বিষয়টি তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অবগত করেছেন। তবে পরিবার কল্যান পরিদর্শিকার তত্বাবধানে গর্ভবতি মায়েদের প্রাথমিক চিকিৎসা পরামর্শসহ অব্যাহত রয়েছে নরমাল সন্তান প্রসব কার্যক্রম।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত মেডিক্যাল অফিসার ডা. নুসরাত নাদিয়া বলেন, উপজেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের অধিনস্থ অধিকাংশ পদের জনবল না থাকায় আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ একাধিক কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এরপরও আমি যথাযথভাবে সিকন্দরপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দ্বায়িত্ব পালন করে আসছি। সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আদেশে গত দুই সপ্তাহ পূর্ব থেকে করোনাকালিন সময়ে সিলেট শহরতলীর খাদিমনগর করোনা আইসোলেশন সেন্টারে দায়িত্ব পালন করে আসায় কিছু দিন ধরে উমরপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে যেতে পারছেনা না তিনি। ওই কেন্দ্রসহ স্বাস্থ্য বিভাগের অধিনস্ত জনবল সংকট নিরসন হলেও স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কার্যক্রম আরোও এগিয়ে যাবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৯ জুন ২০২০/রনিক/পিডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.