আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বর্ণাঢ্য আরেক রাজনীতিককে হারালো সিলেট

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৭-০৩ ১৫:০৬:৪০

নিজস্ব প্রতিবেদক :: এম এ হক। পুরো নাম মোহাম্মদ আব্দুল হক। সিলেটের মানুষ হক নামেই চিনেন তাকে। সকলের কাছে ‘হক ভাই’ নামেই পরিচিত তিনি। যেমন তাঁর দল, তেমন অন্য যেকোনো দল কিংবা সাধারণ মানুষের মাঝে তিনি ছিলেন বেশ সমাদৃত। সিলেটের যেকোনো সমস্যা মীমাংসা করতে যে কয়জন রাজনীতিবিদ এগিয়ে আসতেন সবার আগেই পাওয়া যেত এম এ হককে। কোন জনপ্রতিনিধি না হয়েও মানুষের বিপদে-আপদে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে দেখা যেত তাকে। 

১৯৫৪ সালের ১লা জুলাই সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানবাজারের কুলুমা গ্রামে জন্ম হয় এম এ হকের। বড় হয়ে সমাজসেবামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি যোগ দেন রাজনীতিতে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জন্মলগ্ন থেকেই জড়িত ছিলেন তিনি। ১৯৯৩ সালের দল তাকে মূল্যায়ন করতে শুরু করে। দায়িত্ব দেয় সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতির পদ। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বও অর্পিত হয় হকের কাঁধে। একধারে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

২০০২ সালে দেশে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হন সিলেটের কৃতি সন্তান মরহুম এম সাইফুর রহমান। সাইফুর রহমানের কাছে অত্যন্ত ঘনিষ্টজন ছিলেন বিএনপি নেতা হক। সে কারণে ও বিএনপিতে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য ২০০৩ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন তিনি। যদিও তিনি হেরে যান প্রয়াত সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের কাছে। সেই সময়ে নির্বাচনে বিএনপির আরও দুই জন প্রার্থী হয়েছিলেন। সিলেট পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আ.ফ.ম কামাল ও বিএনপির বর্তমান কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় এম এ হক মেয়র পদে জয় লাভ করতে পারেননি বলে সেই সময়ে সিলেট বিএনপি নেতারা মন্তব্য করেছিলেন। 

পরবর্তীতে ২০০৮ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পুনরায় মেয়র পদে নির্বাচন করে বিজয় লাভ করতে পারেননি হক।

২০১২ সালে সিলেট মহানগর বিএনপির কোন্দল মেঠাতে তাঁর উপর অর্পিত হয় দায়িত্ব। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রবীণ এই নেতার কাঁধে তুলে দেন মহানগর বিএনপির সভাপতির পদ। আন্দোলন সংগ্রামে বলিষ্ট ভূমিকা রাখার জন্য পরবর্তীতে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টার মত গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে নিজেকে নিয়োজিত করেন। নিজের নামে গড়ে তুলেন হক ফাউন্ডেশন। দাতব্য এই সংস্থার মাধ্যমে সিলেটের অসহায় অভাবগ্রস্থ মানুষকে সহায়তায় ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই সন্তানের জনক। তাঁর বড় ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায়  শিক্ষিত করে তুলেছেন। বড় ছেলে ব্যারিস্টার রিয়াশাত আজিম আদনান যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রী অর্জন করেছেন।

উল্লেখ্য, আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় সিলেট নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যায় বর্ণাঢ্য রাজনীতির অধিকারী এম এ হক। গত ৩০ জুন নিউমোনিয়া ও করোনার উপসর্গ নিয়ে তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। করোনা পরীক্ষার জন্য তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হলেও এখনো এর ফলাফল জানা যায়নি। এর আগেই জীবন যুদ্ধে হেরে যান তিনি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ৩ জুলাই ২০২০/ জুনেদ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন