আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বোমার পর জঙ্গি, আতঙ্কের নগরী সিলেট!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৮-১২ ০১:১০:৫৬

মো. রেজাউল হক ডালিম :: সিলেটে আগের দিন সন্ধ্যা থেকে পরদিন বিকেল- প্রায় ২৪ ঘণ্টা কেটেছিলো সিলেটবাসীর রুদ্ধশ্বাস বোমাতঙ্কে। গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর চৌহাট্টায় পুলিশ সার্জেন্ট চয়ন নাইডুর মোটরসাইকেলে অজ্ঞাতদের ‘গ্রাইন্ডিং মেশিন’ রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুহূর্তেই সিলেটজুড়ে বোমাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ২০-২২ ঘণ্টা পর সেই আতঙ্কের অবসান ঘটে সেনাবাহিনীর ‘টাইলস বা রড কাটার যন্ত্র’ উদ্ধার অভিযানের মধ্য দিয়ে।

এদিকে, চৌহাট্টার আলোচিত গ্রাইন্ডিং মেশিনকাণ্ডের রেশ না কাটতেই সিলেটে রোববার দিবাগত (১০ আগস্ট) রাত থেকে শুরু হয় জঙ্গি আতঙ্ক। রোববার রাত থেকে শুরু করে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত চরম আতঙ্কে কাটে সিলেট নগরবাসীর। তবে মঙ্গলবার রাতে সিলেটে জঙ্গিদের দুই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মধ্য দিয়ে অনেকটাই সেই আতঙ্ক কেটেছে।

গত রোববার দিবাগত রাতে সিলেট নগরী এবং আশেপাশের কয়েকটি এলাকায় জঙ্গি ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানকালে সিলেট নগরীর মিরাবাজার উদ্দীপন-৫১ নম্বর বাসা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা নব্য জেএমবির সদস্য নাইমুজ্জামান নাইমকে গ্রেফতার করা হয়। নাইম নব্য জেএমবির ‘সিলেট আঞ্চলিক কমান্ডার’।

পরবর্তীতে নাইমের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার ভোরে পৃথক দুটি অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযানে গ্রেফতার করা হয় আরো চারজনকে। এর মধ্যে সিলেট নগরীর জালালাবাদ আবাসিক এলাকা থেকে সানাউল ইসলাম সাদী নামের একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এছাড়াও শহরতলির টুকেরবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে। নাইম ও সাদী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গ্রেফতারকৃত বাকি তিনজন হচ্ছে- মির্জা সায়েম, জুয়েল, ও রুবেল। এই পাঁচ ‘জঙ্গি’ সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে হামলার পরিকল্পনা করছিলো বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পরবর্তীতে এই পাঁচ জঙ্গির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) রাতে পৃথক অভিযান চালিয়ে সিলেট নগরীর জালালাবাদ ও টিলাগড়ের শাপলাবাগ আবাসিক এলাকার দুটি বাসা থেকে বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহৃত কম্পিউটার উদ্ধার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব।

মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টায় নগরীর জালালাবাদ আবাসিক এলাকার ৪৫/১০নং বাসার মুক্তিযোদ্ধা মইনুল আহমদের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় বাসা থেকে বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম এবং কয়েকটি কম্পিউটার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত কম্পিউটারে বোমা তৈরির বেশকিছু ভিডিও ছিলো।

অপরদিকে, জঙ্গি নাইম ও সায়েমকে নিয়ে রাত সাড়ে নয়টায় নগরীর টিলাগড়ের শাপলাবাগ আবাসিক এলাকার ৪০/এ ‘শাহ ভিলা’ নামের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। এসময় জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহৃত কয়েকটি কম্পিউটার জব্দ করা হয়।

সর্বশেষ এই দুই স্থানে অভিযান শেষে গ্রেফতারকৃত ৫ জঙ্গিকে নিয়ে মঙ্গলবার রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট চয়ন নাইডু তাঁর ঢাকা মেট্রো ১৪-৯২৭০ নম্বরের কালো রঙের পালসার মোটরসাইকেলটি চৌহাট্টা পয়েন্টে পুলিশ বক্সের পাশে রাখেন। তিনি পার্শ্বস্থ একটি দোকান থেকে ফিরে মোটরসাইকেলে লাল রঙের বোমাসদৃশ বস্তু (গ্রাইন্ডিং মেশিন) দেখতে পান। বিষয়টি তিনি জানান ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুলিশের ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি) ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই মোটরসাইকেলে ঘিরে ফেলে। বন্ধ করে দেওয়া হয় চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার সড়ক। মুহুর্তেই চৌহাট্টা পয়েন্টে মোটরসাইকেলে বোমা রাখা হয়েছে বলে গুঞ্জন ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে আসে র‌্যাব-৯ এর একটি টিমও।

সিলেট মহানগর পুলিশে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট না থাকায় খবর পাঠানো হয় ঢাকায়। পুলিশের সদর দপ্তর থেকে চৌহাট্টা পয়েন্টে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ও বোমা ধ্বংসকরণ টিম পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয় সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরকে। সেনা সদর দপ্তর নির্দেশনা পাঠায় সিলেটস্থ ১৭ পদাতিক ডিভিশনকে।

এ ডিভিশনের বোমা বিশেষজ্ঞ একটি টিম পরদিন (৬ আগস্ট) বেলা ২টার দিকে ঘটনাস্থলে আসে। তাঁরা প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে বোসামদৃশ বস্তুটি উদ্ধার করেন টিমের সদস্যররা। কিন্তু বস্তুটি বোমা ছিলো না, ছিলো স্রেফ একটি গ্রাইন্ডিং মেশিন (রড বা টাইলস কাটার যন্ত্র)।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১২ আগস্ট ২০২০/ডালিম

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন