আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে ছাড়ের ছড়াছড়ি!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৮-১৩ ১৬:৫৪:৫৫

পরশ তুহিন: সিলেটের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগের মত ব্যবসা নেই। দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতনসহ অন্যান্য ব্যয় বহন করে কোনভাবে চলছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লোকসান কমাতে ইতোমধ্যে কর্মচারীদের ছাটাই করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে গত কয়েকমাস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ইতোমধ্যে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেছেন। আর যারা ব্যবসা করে যাচ্ছেন তারা কোনভাবে দোকানের খরচ তুলার জন্য ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দিয়েছেন বিশেষ ছাড়।

সিলেট নগরীর জেলরোড, নয়াসড়ক, কুমারপাড়া, লামাবাজার, বারুতখানা, জিন্দাবাজার, উপশহর, বন্দরবাজার, সোবহানীঘাটে পোশাকের দোকানসহ গৃহস্থালি, আসবাবপত্র, প্রসাধনী, জুতা, শাড়ি, খেলনা, খাবার, হস্তশিল্প, জুয়েলারি দোকানে চলছে অফারের ছড়াছড়ি।

ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখার জন্য তারা ছাড় দেয়া হয়েছে। ছাড় দেয়ার পরেও তারা ক্রেতাদের টানতে পারছেন না। এবারের ঈদেও তেমন ব্যবসা হয়নি। সেই সাথে ব্যবসা করে লাভ হচ্ছেনা প্রতিমাসে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এভাবে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা দিনে দিনে কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা চাচ্ছেন দোকানের মালামাল ছাড় দিয়ে বিক্রি করে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে কিংবা অন্য ব্যবসা ধরতে।

আর ক্রেতারা জানান, ব্যবসায়ীরা খুবই চালাক। তারা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে লাগিয়ে রেখেছেন শতকরা ৫০ ভাগ ছাড় কিন্তু দোকানের ভেতরে গেলেই বুঝা যায় বাহিরে ছাড়ের লেখাটি প্রলোভন। ভেতরে ভালো মানের কাপড়ে ১০-২০ পার্সেন্ট আর নিম্নমানের কাপড়ে রয়েছে শতকরা ৩০-৫০ পার্সেন্ট ছাড়। বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার, বারুতখানা, নয়াসড়কে দেখা যায় শতাধিক দোকানে রয়েছে ছাড়। ছাড়ের ছড়াছড়ি থাকলেও দোকানে নেই ক্রেতা। 

সিলেট নগরীর নয়াসড়কে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য কাপড় কিনতে আসেন তাহিয়া চৌধুরী। তিনি জানান, যেসব কাপড়ের দোকানে ছাড় দেয়া হয়েছে সেগুলোতে ভালো মানের কাপড় নেই। ভালো কাপড় সরিয়ে রেখে ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের কাপড়গুলোতে ছাড় দিয়েছেন। প্রায় দুই ঘণ্টা ছাড় দেয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘুরে কাপড় কিনতে পারিনি। পরে যেসব প্রতিষ্ঠান ছাড় দেয়নি সেগুলো ঘুরে কাপড় ও জুতা কিনেছি, ছাড় দেয়া দোকানের চেয়ে অনেক কমে। তখন বুঝলাম এটা একটা প্রলোভন।

বারুতখানার একটি পাঞ্জাবির দোকান থেকে ১৪শ টাকা দিয়ে একটি পাঞ্জাবি কিনলেন সিলেটের একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাহইয়ান ইসলাম। তিনি জানান, বাহিরে ৫০ পার্সেন্ট লেখা দেখে পাঞ্জাবি কিনতে যাই। কিন্তু যেগুলো পছন্দ হয় সেগুলোতে ১০-২০ পার্সেন্ট ছাড় রয়েছে। ভালো মান ও সুন্দর কাপড়ে তেমন কোন ছাড় নেই।

বারুতখানাস্থ কাপড়ের দোকান বার্টনের দায়িত্বে থাকা ছাদিকুর রহমান বলেন, ক্রেতাদের টানতেই মূলত ছাড় দেয়া হয়েছে। ভালো কাপড়ে একটু ছাড় কম দেয়া আছে। কারণ এসব কাপড় কিনা হয়েছে একটু বেশী দাম দিয়ে। আমরা লাভ চাচ্ছি না ছাড় দিয়ে ব্যবসাকে ধরে রাখাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। তিনি জানান, দোকানের খরচ তুলতে ছাড় দিয়েছি। করোনার কারণে ব্যবসায় বেশ ক্ষতি হয়েছে। ঈদেও তেমন ব্যবসা করতে পারিনি। যার কারণে আমরা আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৫০ পার্সেন্ট ছাড় দিয়েছি। অনেকেই কিনছেন আবার অনেকেই দেখে যাচ্ছেন।

পূর্ব জিন্দাবাজারের হার্ডসনের ক্যাশিয়ার পরাগ বলেন, ব্যবসাকে ধরে রাখতেই ছাড় দেয়া। আমাদের প্রতিষ্ঠানে শার্ট, পাঞ্জাবিতে ৫০ পার্সেন্ট, প্যান্টে ৩০ পার্সেন্ট, গোলগলা ও কলার লাগানো টি শার্ট কিছুর মধ্যে রয়েছে ছাড়। আগের তুলনায় এখন বিক্রি ভালো হচ্ছে।

বন্দরবাজার চুড়িপট্টির জালালাবাদ ক্রোকারিজের সত্ত্বাধিকারী মাহবুব চৌধুরী বলেন, আমরা দোকানের বাহিরে ছাড় লিখে না রাখলেও আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে কম লাভ করেই মাল বিক্রি করছি। তবে পুরাতন কিছু মালে নির্দিষ্ট করে ছাড় দেয়া আছে।

সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন বলেন, ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ছাড় দিয়েছেন। এতে যদি তারা উপকৃত হন তাহলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব। করোনা কারণে সিলেটের সবকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা হয়নি বললেই চলে। এখন ব্যবসা ধরে রাখাই একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 



সিলেট ভিউ ২৪ ডটকম/ ১৩ আগস্ট ২০২০/ পিটি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন