আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলা: ১৯ বছরে ২২ সাক্ষ্য

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৯-২৫ ১৩:০৮:২৩

পরশ তুহিন :: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করে জঙ্গিরা। ২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাত আটটার দিকে আওয়ামী লীগের জনসভাস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের পাশ্ববর্তী এলাকা ফাজিলচিশতে ডা. আরিফ আহমদ রিফার বাসায় বোমা তৈরী করতে গিয়ে বিস্ফোরণে নিহত হয় দুজন জঙ্গি। ডা. রিফা সিলেট বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছেন বলে জানা যায়। আলোচিত এ মামলার ১৯ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ (শুক্রবার)। মামলাটি সিলেটের জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন বিশেষ ট্রাইবুন্যালে এখন সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে আছে।

আদালত সূত্র জানায়, আলোচিত এই মামলায় ৪৭ জন সাক্ষির মধ্যে ২২ জন সাক্ষির সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। জননিরাপত্তা আদালতে মামলাটি ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারিতে আসে। এ মামলার অন্যতম আসামী জঙ্গি মুফতি হান্নানকে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে মামলাটির ১৩০টি ধার্য্য তারিখ অতিবাহিত হয়েছে। সর্বশেষ এ বছরের ৪ মার্চ হোটেল আল আকসার কর্মচারী সেলিম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে সাক্ষ্য দেন।

এই মামলায় উল্লেখযোগ্য সাক্ষি হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল (কোতোয়ালি থানার সাবেক এসআই) ও অভিযোগপত্র দাখিলকারি সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক সিলেট ক্যাম্পের সাবেক পুলিশ পরিদর্শক প্রণব কুমার রায়সহ ৪ জন। ২০০৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আদালতে তিনি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। হত্যাচেষ্টা মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণ এ বছরের ১০ নভেম্বর। ওইদিন আদালতে সাক্ষ্য দিবেন মিজানুর রহমান ও সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার ডা.কামাল পারভেজসহ ৩ জন।

সূত্র জানায়, বোমা বিস্ফোরণ ও হত্যার ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করেন সিলেট কোতোয়ালি থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আল খায়ের মাতুব্বর। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার মাস দুয়েক আগে আবু আল খায়ের মাতুব্বর ডা. রিফার মানচুরিয়া কালার ল্যাবে অভিযান চালান। তখন তিনি ছিলেন সিলেট পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি। তার কাছে খবর ছিল, সেখানে বিপুল বিস্ফোরক মজুত ও সন্দেহজনক লোকজন ছিল। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার সময় সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন (ওসি) আবু আল খায়ের মাতুব্বর। তিনি আবু ওবায়দা ও শাকিলকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারের পর শাকিল ওই সময়ে স্বীকার করে, কয়েক মাস আগ থেকে তারা (জঙ্গিরা) সিলেটে অবস্থান করছিলো। সুরমা ভ্যালি  হোটেলে শাকিল একাধিকবার স্বনামে-বেনামে ছিলেন বলে এই কর্মকর্তা জানান।

জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন বিশেষ ট্রাইবুন্যাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মফুর আলী বলেন, সাক্ষীদের কারণে আলোচিত এই মামলাটি অনেকটা গতিহীন। আদালত থেকে সাক্ষীদের প্রতি সমন, ওয়ারেন্ট ইসুৎ করা হলেও তেমন কোন গতি নেই। যারা এসব কাজে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখবেন তারাই অনেক ক্ষেত্রে নীরব রয়েছেন। পুরাতন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হলে আদালতের কার্যক্রম আরও গতি পাবে।


আদালত সূত্র আরও জানায়, ২০০১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সিলেটে নির্বাচনী জনসভার দিন হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি)। ওই বছরে আদালতে স্বীকারোকিমূলক জবানবন্দি দেয় ঘটনাস্থল থেকে জনতার হাতে আহতবস্থায় আটক হওয়া হুজির সদস্য মাসুদ আহমেদ ওরফে শাকিল। ২০০৬ সালের ৫ অক্টোবর গ্রেফতারকৃত মাওলানা আবু সাঈদ সিলেট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা স্বীকার করে। জবানবিন্দতে সাঈদ বলেন, ২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরের মধ্যে শেখ হাসিনার শাহজালাল মাজারে সরাসরি যাওয়ার কথা ছিল। পরে তারা খবর পান শেখ হাসিনা শাহপরাণ মাজারে যাবেন।

দুই মাজারে ওৎ পেতে থাকার পর তারা জানতে পারেন শেখ হাসিনা জনাসভাস্থলে সরাসরি চলে যাবেন। এরপর জঙ্গিরা জনসভাস্থলের অদূরে ফাজিশচিশত এলাকায় তাদের ভাড়া করা মেসে গিয়ে ওঠেন। ওই মেসে রাত আটটার দিকে বোমাগুলো নাড়াচাড়া করার সময় বিস্ফোরণ হয়। ২০০১ সালের ২ অক্টোবর সিলেটের প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং একই বছরের ১১ অক্টোবর ঢাকায় জেইসিতে প্রায় একই তথ্য দেন শাকিল।

আদালতের জবানবন্দিতে শাকিল বলেছিলেন, ব্যবসার ফাঁকে ফাঁকে তাবলিগ জামাতে যেতাম। ২০০০ সালে এহেতশাম নামের একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। তার মাধ্যমে পরিচয় হয় ডা. আরিফ আহমদ রিফার সাথে। তিনি জানিয়েছিলেন সিলেটে তার এক বন্ধু ডাক্তার। নাম আরিফ আহমেদ রিফা। ডাক্তার সাহেব সিলেটে একটা হাসপাতাল ও সাভারে একটা কোল্ড স্টোরেজ করতে চান। এ জন্য লোক দরকার। সেই পরিচয়ের সুবাধে ২০০১ সিলেটে আসি ও সুরমা ভ্যালি রেস্টহাউসে উঠি। রুমটি ডা. রিফার নামে বুক করা ছিল।

সিলেটে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আবু সাঈদ ২০০৬ সালের ১৯ অক্টোবর সিলেটের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে তিনি ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ঢাকায় বসে করা হত্যা পরিকল্পনার বর্ণনা দেন।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, মুফতি হান্নান আমাকে জানায়, শেখ হাসিনা সিলেটে জনসভা করতে যাবেন। তাকে বোমা মেরে হত্যার বিষয়টি আলোচনা হয়। আলোচনায় মুফতি হান্নান, আবু মুসা, লোকমান, জাফর ও আমি ছিলাম। আবু সাঈদ বলেন, এ কাজের জন্য ছয়জনকে সিলেট আসার জন্য ঠিক করা হয়। আবু মুসা, লোকমান, জাফর, আমিসহ আরও দুইজন (নূর ইসলাম ও ওবায়দা), এই মোট ছয়জন। শাকিলই আমাদের বলে যে ডাক্তার রিফাকে চেনে, তার বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করবে। পরে মোট সাতজন সিলেটে আসি।

আবু মুসা ও লোকমান বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও মসল্লা সাথে নিয়ে আসে। রাতে সিলেটে পৌঁছাই। শাকিল আমাদেরকে রিকশায় করে ডা. রিফার বাড়িতে নিয়ে যায়।’ মামলার তদন্তে ও গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের জবানবন্দিতে ঘটনার সঙ্গে নানাভাবে সংশ্লিষ্ট হিসেবে মুফতি হান্নান (ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ড হয়), মাওলানা আবু সাঈদ, শাকিল, আবু ওবায়দা, শাহজাহান, ডা. আরিফ আহমদ রিফা, আকাশ, আবু মুসা, লোকমান, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের জাফর, আবু বকর, ডালিম, রাজু, অমিত, সবুজ, আলমগীর, এহ্তেশাম ও পুলিশ সদস্য নূর ইসলামের নাম আসে।


সিলেট ভিউ ২৪ ডটকম/ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০/পিটি

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন