আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ‘ধর্ষণকারীদের’ আত্মপক্ষ সমর্থন!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৯-২৬ ১৯:০২:০২

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের গর্ব ও ঐতিহ্যের বিদ্যাপীঠ এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় প্রথম থেকেই অভিযোগের তীর ছাত্রলীগের কতিপয় কর্মীর দিকে। তবে তারা বর্তমানে আত্মগোপনে থেকে নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এদের মধ্যে দুজন এই আলোচিত ধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামিও আছেন।

শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে দেখা গেছে এই মামলার দুই আসামিকে।  তারা হলেন ৫ নং আসামি রবিউল ইসলাম ও ৬ নং আসামি মাহফুজুর রহমান মাসুম। স্ট্যাটাসে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন।

রবিউল ইসলাম শনিবার সকাল ১১ টার দিকে ফেসবুকে লেখেন-

‘সম্মানিত সচেতন নাগরিকবৃন্দ
আমি রবিউল হাসান। আমি এম সি কলেজের একজন শিক্ষার্থী। আপনারা অনেকেই চিনেন, আমি কেমন মানুষ তা হয়তো অনেকেই জানেন। গতকাল এম সি ছাত্রাবাসে গনধর্ষনের সাথে, কে বা কারা আমাকে জড়িয়ে অনেক অনলাইন নিউজ করিয়েছেন, আমি এম সি কলেজ ছাত্র, কিন্তু আই হোস্টেলে কখনোই ছিলাম না, আমি বাসায় থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আপনাদের সকলের কাছে অনুরোধ করছি, আমি যদি এই নির্মম গনধর্ষনের সাথে জড়িত নই, আমাদের পরিবার আছে।যদি আমি এই জঘন্যকাজের সাথে জড়িত থাকি  তা হলে প্রকাশে আমাকে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেওয়া হোক। আমি কোনো ভাবেই এই কাজের সাথে জড়িত নই। সবার কাছে বিনীত অনুরোধ করছি সত্য না যেনে আমাকে এবং আমার প্রানের সংঘটন ছাত্রলীগের নাম কোনো অপপ্রচার করবেন না।
এমসি বিশ্ববিদ্যালের ছাত্রাবাসে গনধর্ষণকারী সকল নরপশুদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’




এদিকে, ধর্ষণ মামলার ৬ নং আসামি মাহফুজুর রহমান মাসুম ফেসবুকে লেখেন-
‘এরকম জঘন্য কাজের সাথে আমি জড়িত না। যদি জড়িত প্রমাণ পান প্রকাশ্যে আমাকে মেরে ফেলবেন। একমাত্র আল্লাহর উপর বিশ্বাস আছে। আল্লাহ আমাকে নির্দোষ প্রমান করবেন। তবে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার আগে আমাকে সুইসাইডের দিকে নিয়ে যাওয়া আপনাদের বিচার আল্লাহ করবেন।’

উল্লেখ্য, সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রবাসে ছাত্রলীগ কর্মীদের ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক গৃহবধূ। শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যারাতে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাত ১০টায় শাহপরাণ থানাপুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্যাতিতা গৃহবধূ ও স্বামীকে উদ্ধার করে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বামীকে নিয়ে এমসি কলেজে ঘুরতে গিয়েছিলেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী এলাকার এক গৃহবধূ। এসময় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে এম. সাইফুর রহমান ও শাহ মাহবুবুর রহমান রনির নেতৃত্বে স্বামী-স্ত্রীকে পার্শ্ববর্তী কলেজ ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের ছয় কর্মী। সেখানে একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। খবর পেয়ে রাত ১০টায় শাহপরাণ থানাপুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বামী-স্ত্রীকে উদ্ধার করে এবং নির্যাতিতাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন।

এই গণধর্ষণের ঘটনায় শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে ৯ জনকে আসামি করে শাহপরাণ থানায় ধর্ষিতার স্বামী বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ৬ ছাত্রলীগ কর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এজহারনামীয় আসামিরা হলেন- এম. সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লঙ্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান। তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আসামিদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত এবং বাকিরা এমসি কলেজের ছাত্র।

এদিকে, এ ঘটনার পরপরই অভিযানে নামে পুলিশ। গণধর্ষণ ঘটনার মূল হোতা ছাত্রলীগ ক্যাডার এম. সাইফুর রহমানের রুম থেকে দেশিয় ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে শাহপরাণ থানা পুলিশ এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে অভিযান চালায়। এসময় সাইফুরের রুম থেকে ১টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৪টি রামদা, ১টি ছোরা ও জিআই পাইপ উদ্ধার করা হয়।

এ বিষয়ে শাহপরাণ থানার ওসি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী জানান, ধর্ষণের ঘটনার পর রাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে অভিযান চালানো হয়। এসময় সাইফুর রহমানের রুম থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র ও ছোরা উদ্ধার করা হয়।  তবে  অভিযুক্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।

সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনেও আরেকটি মামলা হয়েছে বলে ওসি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী জানান।  

অপরদিকে, এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় ছাত্রবাস ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার মধ্যে ছাত্রবাস ছাড়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী- সিলেটের ঐ‌তিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ এমসি কলেজের ছাত্রবাসে স্বামী‌কে আটকে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৭ কার্যদিবসের মধ্যে এই কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এছাড়াও দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে ছাত্রাবাসের দুই নিরাপত্তাকর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।  

অধ্যক্ষ জানান, কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জীবন কৃষ্ণ আচার্য্য ও একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদের মধ্যে শেষের দু\\\'জন হোস্টেল সুপারের দায়িত্বে রয়েছেন।

অধ্যক্ষ আরও জানান, সার্বিক বিষয় তদন্তের জন্য এদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাত কার্য দিবসের মধ্যে এই কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে, দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে ছাত্রাবাসের দুই নিরাপত্তা কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে অধ্যক্ষ জানিয়েছেন।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ / ডালিম

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন