Sylhet View 24 PRINT

এমসি কলেজের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম সাইফুর ও রণি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৯-২৮ ০০:১৩:২৬

নিজস্ব প্রতিবেদক :: এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনার মূলহোতা ছাত্রলীগ ক্যাডার সাইফুর রহমান ও শেখ মাহবুবুর রহমান রণি ক্যাম্পাসে ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। শিক্ষক, সাধারণ শিক্ষার্থী, নিজ দলের কর্মী ও কলেজের পাশর্^বর্তী টিলাগড় এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে ত্রাস ছিল তারা।

সাইফুর ও রনির ইভটিজিং ও নির্যাতনের শিকার হয়ে কলেজ ছেড়েছেন অনেক ছাত্রী। ক্যাম্পাসে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, কলেজে বেড়াতে আসা তরুণীদের ধর্ষণ ছিল তাদের নৈমিত্তিক কাজ। ক্যাম্পাসে আধিপত্য থাকায় দলের ‘বড় ভাই’দের কাছেও বিশেষ কদর ছিল তাদের। আর নির্যাতনের ভয়ে মুখ খোলার সাহস পেতেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গণধর্ষণের ঘটনার পর ধীরে ধীরে বের হয়ে আসতে শুরু করেছে সাইফুর-রনি ও তাদের সহযোগীদের নানা অপকর্মের কাহিনী।  

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে কারণে প্রতিদিন বিকেলে শত শত তরুণ-তরুণী বেড়াতে আসেন ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে। অনেকে অনেকে ঘুরতে ঘুরতে ক্যাম্পাসের নির্জন এলাকায় চলে যান। এরকম জায়গায় কোন দম্পতি বা প্রেমিকজুটিকে পেলে সাইফুর ও রনি তাদের সহযোগীদের নিয়ে চড়াও হতো। আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রের মুখে ছিনতাই করতো তারা। ছিনতাই করতে গিয়ে ছুরিকাঘাতেরও ঘটনা ঘটেছে বহুবার। সন্ধ্যার পর বা রাতে ক্যাম্পাসে প্রেমিকজুগল পেলে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সাইফুর-রনি চক্র তাদের তুলে নিত পাশর্^বর্তী ছাত্রাবাসে। সেখানে নিয়ে ধর্ষন করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতো। আত্মসম্মানের ভয়ে কেউই মুখ খুলতেন না। রাতে টিলাগড়-বালুচর সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী লোকজনকে ছাত্রাবাসে ধরে এনে নির্যাতন ও ছিনতাই করতো তারা। এসব অপকর্মে সাইফুর ও রনির সহযোগী ছিল গণধর্ষন মামলার আসামী অপর চার ছাত্রলীগ ক্যাডার তারেক, রবিউল, মাহফুজ ও অর্জুনসহ আর কয়েকজন।

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসকে কেন্দ্র করে সাইফুর ও রনি তাদের টর্চার সেল গড়ে তুলে। হোস্টেল সুপারের বাংলো দখল করে থাকতো সাইফুর। ভয়ে অন্যত্র থাকতেন হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন। হোস্টেলের নতুন ভবনের ২০৫ নম্বর কক্ষ ও বাংলাতে সাইফুরের নেতৃত্বে বসানো হয় ‘শিলং তীর জুয়া’র আসর। এছাড়া প্রতিদিন রাতে বসতো মাদকের আসর। করোনা পরিস্থিতির কারণে হোস্টেল বন্ধ থাকায় নিজের দখলে থাকা হোস্টেলের রুমকে মাদক সেবন ও ইয়াবা ব্যবসার আখড়ায় পরিণত করে সাইফুর। গণধর্ষণের ঘটনার পর শুক্রবার রাতে সাইফুরের দখলে থাকা হোস্টেলের ২০৫ নম্বর রুম থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সাইফুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলাও হয়েছে।

২০১৩ সালে কলেজে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির সময় চাঁদাবাজি শুরু করে সাইফুর ও তার সহযোগীরা। এতে বাঁধা দেওয়ায় নিজদলের কর্মী ছদরুল ইসলামের বুকে ছুরিকাঘাত করে সাইফুর। গুরুতর আহত ছদরুলকে সিলেট থেকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে। পরে নেতাদের চাপে ছদরুল বাধ্য হয় মামলা আপোস করতে।

কলেজ সূত্র জানায়, কলেজে মেয়েদেরকে প্রেমের প্রস্তাব দিত শেখ মাহবুবুর রহমান রনি। জোর করে সে ছাত্রীদের মোবাইল নাম্বার নিত। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে সে প্রকাশ্যে তাদেরকে লাঞ্ছিত করতো। রণির নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক ছাত্রী কলেজ ছেড়ে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রায় আড়াই বছর আগে ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে ছুরিকাঘাত করে রনি। কিন্তু দলীয় প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যায় সে।

শাহ রনি ও তার সহযোগী ধর্ষন মামলার অন্যতম আসামী তারেক নিজেদেরকে র‌্যাব-পুলিশ পরিচয় দিত বলেও অভিযোগ রয়েছে। র‌্যাব ও পুলিশ পরিচয় দিয়ে রাস্তা থেকে লোকজন অপহরণ করে ছাত্রাবাসে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া সাইফুর ও রনি চক্রের হাতে ক্যাম্পাসে একাধিকবার সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০/শাদিআচৌ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.