আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং
ছবি : মো. মোজাম্মেল হক
মো. রেজাউল হক ডালিম :: ‘কতটুকু অশ্রু গড়ালে হৃদয় জলে সিক্ত/ কত প্রদীপ শিখা জ্বালালেই জীবন আলোয় উদ্দীপ্ত/ কত ব্যথা বুকে চাপালেই তাকে বলি আমি ধৈর্য/ নির্মমতা কতদূর হলে...’
হায়দার হোসেনের এই চির জ্বলন্ত পঙক্তিমালা যেন আজ রায়হানের মায়ের কণ্ঠে তীব্র সুরে বাজছে। ছেলে হারানোর ১৫ তম দিনে আজ রোববার (২৫ অক্টোবর) সালমা বেগমের চাওয়া- ‘আমার ছেলেকে এই ফাঁড়িতে নির্মমভাবে নির্যাতন করে মারা হয়েছে। এ ফাঁড়িতেই আমার ছেলের প্রাণ গেছে। আমিও আজ এ ফাঁড়িতে এসেছি। আমাকেও এখানে নির্যাতনে করে মেরে ফেলা হোক।’
ছেলে হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেফতার ও তাদের ফাঁসির দাবিতে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে রোববার সকাল ১১ টা থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন পুলিশি নির্যাতনে নিহত রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন, রায়হানের চাচা, চাচি, মামা, খালা ও আত্মীয়স্বজনসহ আখালিয়া এলাকাবাসী।
এ রিপোর্ট লেখা (বিকাল ৪টা) পর্যন্ত তারা ফাঁড়ির সামনে অনশনে রয়েছেন এবং তারা রায়হান হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন ধরনের ফেস্টুন প্রদর্শন করছেন। রায়হানের মা-কে ‘আমার ছেলে কবরে,খুনি কেন বাহিরে’ স্লোগান লেখা ফেস্টুন হাতে বসে থাকতে দেখা গেছে। অন্যদের হাতে থাকা ফেস্টুন লেখা- ‘বোন বলে ডাকবে কে? আমার ভাইকে ফিরিয়ে দে’ ও ‘ফাঁসি দিয়ে প্রমাণ করো, পুলিশ নয়- জনগণ বড়’ ইত্যাদি স্লোগান।
অনশনরত রায়হানের পরিবারের সদস্যরা মাথায় কাফনের কাপড় (সাদা কাপড়) বেঁধে রেখেছেন।
রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম এসময় সিলেটভিউ-কে দেয়া এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি যেখানে আমার আদরের ধনকে হারিয়েছি, সেখানেই আমরণ অনশন শুরু করেছি। আকবর গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবে।’
সালমা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেন, ‘রায়হান নিহতের ঘটনায় বরখাস্তকৃত ৮ পুলিশ সদস্যই তো পুলিশের জিম্মায় আছেন। তাদের কেন এক সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? দুইজন দুইজন করে আটক করে করে কি বছরের পর বছর চলে যাবে? এ জীবনে কি আমি আর আমার ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারবো না? তছাড়া নিহতের ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও কেন ঘটনার মূল হোতা এসআই আকবরকে গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ?’
অনশনকালে রায়হানের মা ও স্বজনদের কান্নায় ক্ষণে ক্ষণে ভারী হয়ে উঠছে অকুস্থল বন্দরবাজার ফাঁড়ির সামন ও আশপাশ এলাকা। সেই রাতে মৃত্যুর আগ মুহুর্তের রায়হানের আর্তচিৎকার আর আজ তার মায়ের আহাজারি মিলেমিশে একাকার হয়ে যেন চারপাশের প্রকৃতিকে করে তুলেছে তীব্র শোকাতুর- ব্যথাকাতর।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / ২৫ অক্টোবর, ২০২০ / ডালিম