আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

রায়হান হত্যা : লাপাত্তা আকবর, অধরা হাসান ও আশেক এলাহী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১০-২৮ ১১:২১:১০

নিজস্ব প্রতিবেদক :: আকবরের অপরাধ কর্মে সক্রিয় ভূমিকা ছিল এস আই হাসান ও এ এস আই এলাহীর। আকবর তাদেরকে দিয়েই নানা বিতর্কিত ঘটনা ঘটাতো বন্দরবাজার ফাঁড়িতে। রায়হানকে নির্যাতনের আগে ও পরে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকা ছিল বিতর্কিত। ইতিমধ্যে বিষয়টি ধরা পড়েছে পুলিশের তদন্তেও। এ কারণে এস আই হাসানকে সাময়িক বহিষ্কার ও আশেক এলাহীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই এখনো এই দুইজনের মধ্যে কাউকে গ্রেফতার করেনি। এ ছাড়া কনস্টেবল তৌহিদের মোবাইল ফোন থেকে কল দিয়ে টাকা চাওয়া হয়েছিলো রায়হানের মা সালমা বেগমের কাছে। সেই তৌহিদও এখনো গ্রেফতার হয়নি।

তবে পিবিআই বলছে, মামলার তদন্তকালীন সময়ে যাকে প্রয়োজন মনে করা হবে তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এখন তাদের সব মনোযোগ আকবরের দিকে। পলাতক থাকা আকবরকে গ্রেফতার করতে অভিযান চালানো হচ্ছে। ১১ই অক্টোবর ভোরে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় নগরীর নেহারী পাড়ার যুবক রায়হানকে।

এ ঘটনায় সিলেটজুড়ে ক্ষোভের অন্ত নেই। প্রথম দিকে আকবর ঘটনা নিয়ে ঊর্ধ্বতনদের বিভ্রান্ত করলেও পরে তদন্তে সবকিছু খোলাসা হওয়ার পর ঊর্ধ্বতনরা দোষী পুলিশের পক্ষ নিচ্ছেন না। বরং অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে তারা মূল্যায়ন করছেন। আলোচিত এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পিবিআই কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশীদকে গ্রেফতারর করেছে।

সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, পলাতক এসআই আকবরকে গ্রেফতারে সবাই চেষ্টা করছে, যত দ্রুত সম্ভব সে গ্রেফতার হবে। পুলিশ হেফাজতে রায়হান হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত, অনভিপ্রেত। এর সাথে পুলিশ সদস্যরা জড়িত থাকায় আমি লজ্জিত। এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার এসাইনমেন্ট নিয়েই আমি সিলেটে এসেছি। অন্যদিকে রায়হান হত্যা মামলার কার্যক্রম যথানিয়মে চলছে।

তিনি আরও বলেন, আমি নিজস্ব একটি পরিকল্পনা নিয়ে এসেছি। এছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কিছু নির্দেশনা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, সকল কিছু গোছানো সম্ভব। তিনি বলেন, এসআই আকবরকে কেউ যদি মদদ দিয়ে থাকে সবাইকে শনাক্ত করা হবে। সম্পৃক্ততা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারাও মামলার আসামি হবেন। পলাতক এসআই আকবর প্রসঙ্গে নবাগত কমিশনার বলেন, পলাতক এসআই আকবরকে গ্রেফতার করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ইউনিট কাজ করছে।

পুলিশের তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, রায়হানকে নির্যাতনের মূল হোতা বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বরখাস্ত হওয়া সাব ইন্সপেক্টর আকবর। আকবরই রায়হানকে বেশি নির্যাতন করেছে। তার নির্দেশে অন্যরাও নির্যাতন করেছে। ঘটনার দিন গভীর রাতে নগরীর কাস্টঘর থেকে গ্রেফতা করা হয়েছিলো রায়হানকে। আর এ গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলো এ এস আই আশেক এলাহী। সে রায়হানকে আটক করে ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু আশেক এলাহী প্রথমে ঊর্ধ্বতনদের কাছে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়।

এদিকে, রায়হানের পরিবারের অভিযোগের কাঠগড়ায় বরখাস্ত হওয়া এস আই আকবরের পাশাপাশি সহকারী সাব ইন্সপেক্টর আশেক এলাহীও।

রায়হানের মা সালমা বেগম জানানা, এখনো অনেক দোষী কর্মকর্তাকে রায়হান হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়নি। কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ। এ এস আই আশেক এলাহীর নেতৃত্বে তার ছেলেকে আটক করা হয়েছিলো বলে জানান তিনি। এ ছাড়া আকবরকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছিলো বন্দরবাজার ফাঁড়ির টুআইসি বরখাস্ত হওয়া এসআই হাসান উদ্দিন।

আকবরের পর একদিনের জন্য এস আই শাহীনকে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। পরবর্তীতে সমালোচনার মুখে শাহীনকে সরিয়ে নেয়া হলেও ফাঁড়ির দায়িত্ব দেয়া হয় পূর্বের টুআইসি হাসানকে। পুলিশ হেড কোয়ার্টারের তদন্ত কমিটির কর্মকর্তাদের মতামতের আলোকে এস আই হাসানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, এস আই হাসানের কাছে দায়িত্ব দিয়েই আকবর পালিয়েছে। এক্ষেত্রে হাসানের বিরুদ্ধে সহায়তার অভিযোগ মেলায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আকবর পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও এস আই হাসান সিনিয়র কর্মকর্তাদের অবগত করেননি। এদিকে রায়হান খুনের ঘটনার যে মোবাইল নম্বরটি নিয়ে তোলপাড় সেই মোবাইল নম্বরের মালিক বন্দরবাজার ফাঁড়ির কনস্টেবল তৌহিদ। ঘটনার পর তৌহিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে এখনো তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।

রায়হানের পরিবারের দাবি,তৌহিদের মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে মা সালমা বেগমকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথা জানানো হয়েছিলো। তৌহিদের মোবাইল ফোনে রায়হান শেষবারের মতো কথা বলেছিলেন পিতা হাবিবউল্লাহর সঙ্গে। এ সময় রায়হান টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে যাওয়ার আর্তনাদও করেন। ওই দিন ভোরে রায়হানের পিতা হাবিবউল্লাহ ফাঁড়িতে গিয়ে তৌহিদের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। এ সময় তৌহিদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবরও। এখনো পিবিআই তৌহিদকে গ্রেফতার করেনি।

পিবিআই ইন্সপেক্টর মুহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, তদন্তকালে ঘটনার সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা মিলবে সবাইকে গ্রেফতার করা হবে।



সিলেট ভিউ ২৪ ডটকম/ ২৮ অক্টোর ২০২০/পিটি



শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন