আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বিশ্বনাথে ১৬ দিন ধরে অধরা মাদ্রসাছাত্র হত্যার আসামী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১০-৩০ ১০:৩৩:৫৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : এগারো বছর বয়সী মাদ্রাসাছাত্র রবিউলকে অপহরণের পর পৈশাচিক ও বর্বর নির্যাতন চালিয়ে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। এমনকি রবিউলের পুরুষাঙ্গ কেটে, চোখ দুটি নষ্ট করে, গাড় ভেঙ্গে, পুরো শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে হত্যা করা আধিযুগের সেই বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। এ নির্মম হত্যাকান্ডকে ধামাচাপা দিতে এক শ্রেণীর বখাটেরা কাজ করে যাচ্ছে।  ঘটনাটি গত ১৩ই অক্টোবরের। কিন্তু ঘটনার ১৬ দিন পেরিয়ে গেলেও মূল ঘাতককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

খুনিদের বিচার দাবিতে সোচ্চার এলাকার সর্বদলীয় নেতারা। গঠন করা হয়েছে সংগ্রাম কমিটিও। মূল ঘাতক সাদিকুর রহমানকে গ্রেফতার ও রবিউলের খুনীদের শাস্তির দাবি তাদের। গত ১৩ই অক্টোবর বিশ্বনাথের করপাড়া হাওড়ের মধ্যখানে নির্জন একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে। এগারো বছরের রবিউল স্থানীয় গোয়াহরী লতিফিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। আদরের ছেলে হওয়ার কারণে স্থানীয় রহমাননগর গ্রামের দরিদ্র আকবর হোসেন ছেলেকে শখ করে মাদ্রাসায় পড়তে দিয়েছিলেন। কিন্তু ঘাতকদের নির্মমতার কারণে পিতার সেই স্বপ্ন পূর্ণ হলো না। তার আগেই নির্মমভাবে খুন করা হলো রবিউলকে। পিতা আকবর হোসেনের সঙ্গে গৃহস্থালী কাজে সময় দিতো রবিউল। এ কারণে পিতার কৃষিকাজের দেখাশোনা করতো সে।

প্রায় দেড় বছর আগে রবিউল এলাকার গাঙের পাড়ে নিজের গরু চড়াতে যায়। এ সময় দেখে এলাকার প্রভাবশালী সাদিকুর রহমান ধান খাওয়ার কারণে স্থানীয় কামরান মিয়ার গরুর পা কেটে ফেলেছে। পরবর্তীতে এ নিয়ে গোয়াহরি গ্রামে ইউপি সদস্য গোলাম হোসেনের বাড়িতে বৈঠক হলে মাদ্রাসা ছাত্র রবিউল তাতে সাদিকুরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়। আর এই সাক্ষ্যই কাল হয়ে গেল রবিউলের জন্য। ওই বৈঠকের পর থেকে স্থানীয় সাদিকুর রহমান প্রতিশোধ নিতে রবিউলের ওপর বার বার হামলা চালায়। এসব হামলার ঘটনায় এলাকায় সালিশ বৈঠক হয়।

নিহত রবিউলের পিতা আকবর আলী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, গত ৬ই অক্টোবর সাদিকুর রহমান তার ছেলে রবিউলকে গ্রামের মধ্যে একা পেয়ে মারধর করে। এ ঘটনায়ও এলাকায় সালিশ বৈঠক হয়। পরে সেটি মীমাংসা করে দেন এলাকার মানুষ। গত ১২ই অক্টোবর রবিউল নিজেদের বর্গা নেয়া ধানক্ষেত দেখতে স্থানীয় করপাড়া হাওরে যায়। এ সময় সেখানে রবিউলকে একা পেয়ে সাদিকুর রহমান তাকে অপহরণ করে হাওরের মধ্যখানে থাকা আব্দুল কাদিরের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে রবিউলকে মুখে চাপা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। এরপর রাতের অন্ধকারে রবিউলের লাশ ধানের জমিতে গুম করে ফেলে রেখে দেয়।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, নিখোঁজ হওয়ার পর রবিউলকে তারা কোথাও খুঁজে পাননি। পরে ওইদিন রাতেই রবিউলের মামা শওকত হোসেন বাদী হয়ে বিশ্বনাথ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। সাধারণ ডায়েরি করার পর পুলিশ এসে তদন্ত করে যায়। পরদিন বাল্লা ব্রিজ সংলগ্ন ধানের ক্ষেতের জমিতে রবিউলের লাশ পাওয়া যায়।

ঘটনার পরপরই প্রধান আসামি সাদিকুর রহমান ও হাওরের বাড়ির মালিক আব্দুল কাদির পালিয়ে গেছে। ঘটনার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ ইতিমধ্যে মামলার আসামি মাজেদা বেগম ও সন্দেহভাজন হিসেবে জামাল মিয়াকে গ্রেফতার করেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই দেবাশীষ শর্মা জানান, দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে তাদের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আর পলাতক থাকা আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

এদিকে, আলোচিত এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিশ্বনাথের বৈরাগীবাজার ও আশপাশের এলাকার মানুষ। এরই মধ্যে তারা কয়েক দফা এলাকায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করে প্রধান আসামি ছাদিকুর রহমানকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। তারা ইতিমধ্যে আলোচিত এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট আলমগীর হোসেনকে আহ্বায়ক ও সাবেক মেম্বার আনিসুজ্জামান খানকে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি গঠন করেছেন।

কমিটির সদস্য সচিব সাবেক মেম্বার আনিসুজ্জামান খান জানিয়েছেন, রবিউলকে যেভাবে নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে সেটি কোনো মানুষ করতে পারে- আমরা কল্পনা করতে পারছি না। অথচ মানুষরূপী দানব ছাদিকুর, কাদির ও মাজেদা বেগম মিলে রবিউলকে নির্মমভাবে খুন করেছে। লাশ উদ্ধারের পর রবিউলের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট ছিল। যারাই লাশ দেখেছে তারাই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছে।

তিনি বলেন, এ ঘটনার মূল ঘাতক সাদিকুর রহমান সহ সব আসামিকে গ্রেফতার ও শাস্তি নিশ্চিত না করলে এলাকার ক্ষোভ কমবে না। এ ঘটনার পর অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেন তিনি।


সিলেট ভিউ ২৪ ডটকম/ ৩০ অক্টোবর ২০২০/পিটি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন