আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

তামান্নার ‘হত্যাকারী’ স্বামীসহ পলাতকদের হন্য হয়ে খুঁজছে পুলিশ

মামলার তদন্ত শুরু, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১১-২৪ ২৩:১৮:২৬

নিজস্ব প্রতিবেদক :: ‘ঘাতক’ স্বামী আগের স্ত্রী ও সন্তানের কথা গোপন করে বিয়ে করেন সৈয়দা তামান্না বেগমকে। প্রতারণার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে তাড়াহুড়ো করেই বিয়ে করেন তিনি। কনেপক্ষকে দেন ভূয়া আইডি কার্ড। বিষয়টি সিলেটভিউ-কে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

এদিকে, তামান্নার মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃতি মামলার ২ নং আসামি মামুনের বোনের জামাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে বাকিরা এখনও অধরা। তাদেরকে পুলিশ হন্য হয়ে খুঁজছে বলে জানা গেছে।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে তামান্নার ভাই সৈয়দ আনোয়ার হোসেন রাজা বাদি হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা ( নং ৫৮) দায়ের করেন। মামলায় নিহতের স্বামী মো. আল মামুনসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন- এমরান, পরভীন, মাহবুব সরকার, বিলকিস ও শাহনাজ। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার তদন্তভার দেয়া হয়েছে কোতোয়ালি থানার এস.আই মান্নানকে। তিনি মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) রাতে সিলেটভিউ-কে জানান, মঙ্গলবার বিকেলে একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান তিনি। এসময় প্রতিবেশিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

তিনি বলেন, আসামিদের মধ্য থেকে এজাহারনামীয় ২নং আসামি (মামুনের বোনের জামাই) এমরানকে (৩০) সিলেট নগরীর সোবহানীঘাট এলাকা থেকে সোমবার রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকির এখনও অধরা থাকলেও তাদেরকে গ্রেফতার করতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

সোমবার (২৩ নভ্ম্বের) দুপুর দেড়টায় নগরীর উত্তর কাজীটুলার এলাকার অন্তরঙ্গ ৪/এ বাসার দুতলার তালাবদ্ধ একটি কক্ষ থেকে নববধূ সৈয়দা তামান্না বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের বক্তব্য, রোববার (২২ নভেম্বর) রাতের কোনো এক সময় তামান্নাকে শ্বাসরোদ্ধ করে খুন করে পালিয়ে গেছেন স্বামী আল মামুন।

মো. আল মামুনের জন্মস্থান বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার হোগলারচরে। তবে তার ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানায় রয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বারুতখানা এলাকার নাম। যেটি ভূয়া বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। আইডি কার্ডে বাবার নাম আবুল কাশেম সরদার ও  মা নাম আমম্বিয়া বেগম বলে উল্লেখ রয়েছে। তবে সিলেটে তার মা-বাবা থাকেন না। স্বামীসহ তার এক বোন ও সে বসবাস করতো সিলেটে। মামুন নগরীর জিন্দাবাজারস্থ আল-মারজান শপিং সেন্টারের ঐশি ফেব্রিক্সের পরিচালক। 

মামুনের নিহত স্ত্রী তামান্না বেগম দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়নের ফুলদি গ্রামের সৈয়দ ফয়জুল হোসেন ফয়লার মেয়ে। তবে তামান্নার ভাই-বোন এবং মা বর্তমানে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার এমসি একাডেমি সংলগ্ন একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। তার বাবা সৈয়দ ফয়জুল হোসেন ফয়লা তাদের সঙ্গে থাকেন না বলে জানা গেছে।

চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর আল মামুনের সঙ্গে বিয়ে হয় তামান্নার। ১৯ বছর বয়সেই তাকে বিয়ে দিয়ে দেন পরিবারের সদস্যরা। সিলেটের গোলাপগঞ্জের খান কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠান হয় তাদের বিয়ের। কিন্তু বিয়ের দুই মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই নিভে যায় তার জীবনপ্রদীপ। হাতের মেহেদির রং মুছে যাওয়ার আগেই মুছে যায় তামান্নার জীবনের রং।

তামান্নার খালাতো ভাই মো. ইকবাল সিলেটভিউ-কে জানান, রোববার রাত ৯টার দিকে তামান্নার সঙ্গে তার মা’র কথা হয়। তখন স্বাভাবিকভাবেই কথা বলেন তামান্না। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে তামান্না ও তার স্বামী আল মামুনের মোবাইল ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।

অপরদিকে, তামান্নাদের ভাড়াটে ঘরের (কাজীটুলাস্থ অন্তরঙ্গ ৪/এ) দরজা সকাল থেকে তালাবদ্ধ দেখে বাড়ির মালিকের সন্দেহ হয় এবং তিনি পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ সোমবার দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে দেখেন বিছানায় তামান্নার লাশ দেখতে পায়। এসময় তামান্নার গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যায় এবং মাথার কাছে পাওয়া গেছে খোলা একটা কেকের প্যাকেট।

বিয়ের আগের দিন অর্থাৎ ২৯ সেপ্টেম্বর আল মামুন কাজীটুলার এই বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন।

মামুন আগেও একটি বিয়ে করেন। সে স্ত্রীর বাড়ি বরিশাল। মামুনের বিরুদ্ধে সিলেট কোতোয়ালি থানায় আগের স্ত্রীর দায়ের করা মামলাও রয়েছে। আগের স্ত্রীর ঘরে একটি সন্তানও রয়েছে মামুনের। এসব বিষয় গোপন করে সে তামান্নাকে বিয়ে করে। এ ক্ষেত্রে মামুনকে সহায়তা করেন মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্সের শাহনাজ পারভিন নামের এক মহিলা কর্মকর্তা।

জানা গেছে, ওই মহিলা মামুনকে তার চাচাতো ভাই বলে পরিচয় দেন এবং তামান্নার পরিবারে বিয়ের জন্য পীড়াপিড়ি করতে থাকেন। বিয়ের সময় টাকা দিয়েও শাহনাজ পারভিন সাহায্য করেন তামান্নার পরিবারকে। এসময়ের শাহনাজ পারভিনের আচরণই আমাদের কাছে সন্দেহজনক ছিলো। এ বিয়েতে তামান্নার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যদের অসম্মতি ছিলো। কিন্তু শাহনাজ পারভিনের পীড়াপিড়িতেই এ বিয়েটি হয়।

এছাড়াও মামুনের ভূয়া আইডি কার্ড শাহনাজই তৈরি করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই শাহনাজের মূল বাড়িও বরিশাল। তিনি চাকরির সুবাধে সিলেটে বসবাস করেন। তবে তামান্নার মৃত্যুর দিন থেকে তাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকেও গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।

শাহনাজের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার মোবাইল ফোনে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ২৪ নভেম্বর, ২০২০ / ডালিম

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন