Sylhet View 24 PRINT

ওসমানী হাসপাতালের ওষুধ চোর সিন্ডিকেটের ৫ হোতা লাপাত্তা

প্রশ্নবিদ্ধ তদন্ত কর্মকর্তার ভূমিকা : চোরাই ওষুধ বিক্রি হয় ফার্মেসীতে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০১-১৯ ১১:১০:৩৪

ফোর ব্রাদার্স ফার্মেসীর পান্না দাস ও হাসপাতালের কর্মচারী শিপন আহমদ

পরশ তুহিন :  সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গরীব ও অসহায়দের একমাত্র ভরসাস্থল। দিনে দিনে সেই ভরসাস্থলের জায়গাটি কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে ওসমানী হাসপাতাল কেন্দ্রীক একাধিক দালাল চক্র। সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে রোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য আসা সরকারি ওষুধও হাসপাতালের বাহিরর ফার্মেসীতে বিক্রি করছে দালালরা। এছাড়াও চিকিৎসকদের পরামর্শে ক্রয় করা রোগীর ওষুধ প্রতিনিয়িত চুরি করে নিচ্ছে হাসপাতালের কতিপয় কর্মচারীরা।

সিলেটের বেশিরভাগ দরিদ্র জনগণ যেমন সরকারি ওষুধ পাচ্ছে না, তেমনি স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এসব বিষয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জানা থাকলেও পুলিশের সাথে তারাও নীরব রয়েছেন। শুধু তাই নয় এই হাসপাতালের বিভিন্ন সেক্টরে এমন অরাজকতা ও দুর্নীতি চলতে থাকলেও কোন ধরণের মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হচ্ছে না।

সিলেট ওসমানী মেডিকেলের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের ওষুধ চুরির মামলা চলছে ধীর গতিতে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনার দিন দুজনকে গ্রেফতার করলেও ২১ দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার আরও ৫ আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেননি। অধরা রয়েছেন ওসমানী মেডিকেল রোডের ফোর ব্রাদার্স ফার্মেসীর মানিক, খোকন ও শিপু। এছাড়াও ওসমানী মেডিকেল রোডের আতিয়া ফার্মেসীর বাবুল মিয়া ও ফেঞ্চুগঞ্জ ফার্মেসীর মালিক কয়েস মিয়া অধরা রয়েছেন। তবে গ্রেফতারকৃত পান্না দাস ও শিপন আহমদ ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।  

ওষুধ চুরির ঘটনায় গত ২৮ ডিসেম্বর কোতোয়ালি থানায় এটিএসআই জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৭ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। মামলার এজহার নামীয় আসামীরা হচ্ছে- কানাইঘাটের করগড়ী গ্রামের দিলিপ কুমার দাসের ছেলে পান্না দাস (২৮), মোগলাবাজার থানাধীন স্বর্ণগ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে শিপন আহমদ (২৩), ওসমানী মেডিকেল রোডের ফোর ব্রাদার্স ফার্মেসীর মানিক (২৮), একই ফার্মেসীর খোকন (২৮), একই ফার্মেসীর শিপু (২৮), ওসমানী মেডিকেল রোডের আতিয়া ফার্মেসীর বাবুল মিয়া (৩৮), একই রোডের ফেঞ্চুগঞ্জ ফার্মেসীর মালিক কয়েস মিয়া (৩৫)।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন থেকে ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিট থেকে রোগীদের ক্রয়কৃত ওষুধ চোরাইভাবে সংগ্রহ করে আসছে মেডিকেল রোডের ফোর ব্রাদার্স ফার্মেসী, আতিয়া ফার্মেসী ও ফেঞ্চুগঞ্জ ফার্মেসীসহ প্রায় ১০টি ফার্মেসী। গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে ওসমানী মেডিকেলের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগ থেকে চোরাই ওষুধ নিয়ে আসার সময় পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করে। এসময় পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে অপরাশেনের সুতা ৫টি, প্লাস্টার ব্যান্ডেজ ২৫টি, স্কষ্টেপ ৬টি, আইজি ইনঞ্জেকশন ৫টি, হেক্সিসক্রাব কপি ক্লিনার নামক সেনিটাইজার ৬টি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত ওষুধের বাজার মূল্য প্রায় ৮ হাজার ৮শত টাকা।

কোতোয়ালি থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর আব্দুল মান্নানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সার্বিক বিষয় শুনার পর এ বিষয়ে কোন মন্তব্য না করলেও ব্যস্ত আছেন বলে জানান।

আদালতে কানাইঘাটের কুউর বাড়ী গ্রামের দিলিপ কুমার দাসের ছেলে পান্না দাস ও মোগলাবাজারের স্বর্ণগ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে শিপন আহমদ যারা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর সিলেট অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আবদুল মোমেনের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন শিপন আহমদ। এসময় তিনি আদালতকে জানান, সিলেট ওসমানী মেডিকেলের জরুরী বিভাগে ওয়ার্ড বয় হিসেবে কাজ করে আসছেন। পরে কাজ শেখার জন্য হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে যাই। ওই বিভাগে বিভিন্ন সময়ে (শিফট অনুসারে) দায়িত্ব পালন করি। আমি রাত ৮ট থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত দায়িত্বপালন করি। আমি দায়িত্বপালন করার পূর্বে সুজন, সেলিম, মঞ্জু ও সোহেল দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে।

গত ২৮ ডিসেম্বর ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে দায়িত্ব পালন করার সময় সুজন একটি ব্যাগ দেখিয়ে বলেছে ব্রাদার্স ফামের্সী থেকে একজন লোক আসবে ব্যাগটি নিতে। কিছুক্ষণ পর ব্রাদার্স ফার্মেসী থেকে সুজন ও খোকন নামের দুজন লোক আসে ব্যাগটি নিতে। আমি তাদেরকে ব্যাগ দেখিয়ে দিলে তারা দ্রুত ব্যাগটি নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে শুনতে পাই ব্যাগসহ পান্না ধরা পড়েছে পুলিশের কাছে। এসময় খোকন পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ব্যাগের ভেতর থেকে অপরেশনের সুতা, প্লাস্টার ব্যান্ডেজসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ উদ্ধার করে। এই সকল ওষুধ রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসে।

একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন পান্না দাস। তিনি তার জবানবন্দিতে বলেন, হাসপাতাল থেকে ওষুধ নিয়ে আসার জন্য খোকন (ফোর ব্রাদার্স ফার্মেসী) মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে নিয়ে যায়। ওই বিভাগে দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ড বয় শিপনের কাছে ব্যাগের বিষয়ে খোকন জানতে চাইলে তখন শিপন ব্যাগটি দেখিয়ে দেয়। এসময় খোকন ব্যাগটি হাতে নিয়ে আমার হাতে ব্যাগটি ধরিয়ে দেয়। ব্যাগটি নিয়ে বের হওয়ার সময় হাসপাতালের গেইটে আসামাত্র পুলিশ আমাকে আটক করে। তখন আমি পুলিশকে সার্বিক বিষয় বলার পাশাপাশি শিপন ও খোকনের নাম বলি। এসকল ওষুধ হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের স্বজনদেরকে দিয়ে ফার্মেসী থেকে বেশী করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে অতিরিক্ত ওষুধ ওই ফার্মেসীতে পূনরায় বিক্রি করা হয়। আমার আটকের খবর পেয়ে খোকন পালিয়ে যায়। 


সিলেট ভিউ ২৪ ডটকম/ পিটি-৪

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.