আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

জকিগঞ্জে হাওর শুকিয়ে মৎস্য আহরণ, মা মাছের প্রজাতি বিলুপ্তির আশঙ্কা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০১-২৫ ১৮:৫৯:০০

জকিগঞ্জ প্রতিনিধি :: সিলেটের জকিগঞ্জে শীত মৌসুমে মইলাট হাওরসহ বিভিন্ন স্থানে খাল, বিল শুকিয়ে অবাদে মৎস্য আহরণ চলছে। আইন লঙ্ঘন করে সেচের মাধ্যমে খাল, বিলসহ ছোট-বড় জলাশয় শুকিয়ে এভাবে মাছ শিকারের ফলে জীববৈচিত্র্য ও বুরো ফসল হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

তাদের মতে, এভাবে মাছ শিকারের ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে জলজ জীববৈচিত্র্য। মাছের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। পাশাপশি বুরো ফসলের চাষেও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জকিগঞ্জ উপজেলার মইলাট হাওর ও সংলগ্ন জলাশয়গুলোর পানি সেচে শুকিয়ে মৎস্য আহরণ করা হচ্ছে। কাদাপানিতে লুকিয়ে থাকা মাছও ধরা হচ্ছে। ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে জলজ জীববৈচিত্র্য। মাছের প্রজাতি বিলুপ্ত হতে পারে। পানির অভাবে বুরো চাষীরাও হতাশ রয়েছেন। বিলে পানি না থাকায় বুরো চাষের উৎপাদন কমে যেতে পারে।

তাছাড়া শুকনো মৌসুমে কৃষকরা মইলাট হাওরে গরু-মহিষ চরাতে দেন। কিন্তু হাওর সেচ দেয়ার কারণে গরু-মহিষের খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিতে পারে।

এ নিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমী আক্তারের কাছে লিখিত দিয়েছেন লিমন আহমদ, জামিল আহমদ, আব্দুল মতিন, বাহার উদ্দিন, মঈন উদ্দিন, লুকু মিয়া ও ছালিক আহমদ।

তারা অভিযোগে উল্লেখ করেন, মইলাট হাওর সূর্যমুখী সমবায় সমিতি ইজারা এনে শর্ত ভঙ্গ করে নিলাম্বরপুর গ্রামের নবাব আলীর ছেলে নিজাম উদ্দিন, ইসলামপুর গ্রামের আবজর আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ আহমদসহ তাদের লোকজনের কাছে ২২ লক্ষ টাকায় সাব ইজারা দিয়েছে। যা জলমহাল শর্তের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সাব ইজারাদাররা গত একমাস থেকে সেচের মাধ্যমে বিল শুকিয়ে অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ করছেন। কাদাপানিতে লুকিয়ে থাকা মাছও ধরা হচ্ছে। এতে একদিকে মাছের প্রজাতি বিলুপ্ত হতে পারে।

অন্যদিকে কৃষকরা পানির অভাবে বুরো চাষে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন। এই মৌসুমে হাওর এলাকার গরু-মহিষরাও খাবার পানির সঙ্কটে পড়বে। এ নিয়ে কৃষকরা হতাশ হয়েছেন।

তারা আরও উল্লেখ করেন, মইলাট হাওর-বিল পুরোপুরি সেচ না দিতে কৃষকরা বাঁধা দিতে গেলে সাব ইজারাদারের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাড়িয়ে দিয়ে মামলার হুমকি দিচ্ছেন। অবৈধভাবে মৎস্য আহরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তারা আহবান জানিয়েছেন।

বারহাল ইউনিয়নের কোনাগ্রামের বোরো চাষী কামাল আহমদ, মসনু মিয়া ও নিজ গ্রামের লেকু মিয়া, বাটইশাইল গ্রামের হানাই মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মইলাট হাওর সেচে শুকিয়ে ভুয়া ইজারাদার সেজে সূর্যমুখী মৎস্য সমবায় সমিতির নামে মাছ আহরণ করা হচ্ছে। এ কারণে হাওরে পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বুরো চাষীরা দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন।

তবে এ ব্যাপারে সাব ইজারাদার রঞ্জিত রায়ের বক্তব্য জানতে বার বার মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এলাকাবাসী জানান, ইজারাদাররা প্রভাব খাটিয়ে জলমহাল বন্দোবস্তের নীতিমালা ভঙ্গ করে মাছের মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছেন। জলমহাল নীতিমালার আলোকে বাংলা সন অনুযায়ী বিভিন্ন শর্তে জলমহালগুলো বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। প্রতি বাংলা বছরের মাঘ ও ফাল্গুন মাসের মধ্যে জলমহালের মাছ আহরণ করেন ইজারাগ্রহীতারা। মৎস্য সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী জলমহালগুলোতে তিন ফুট পর্যন্ত পানি রেখে মাছ ধরার শর্ত রয়েছে। কিন্তু এই শর্তের কোন তোয়াক্কা না করে ইজারাদারেরা শর্ত লংঙ্ঘনের পাশাপাশি মৎস্য সংরক্ষণ আইন অমান্য করে বিলের পানি সেচ দিয়ে শুকিয়ে মাছ ধরছেন। বিল শুকিয়ে মাছ ধরার ফলে বিলের নিচে থাকা বোয়াল, কৈ, মাগুর, শিং, পুঁটি, টেংরা, শোলসহ দেশীয় প্রজাতির ছোট-বড় মা মাছ ও মাছের ডিম নষ্ট হচ্ছে। এতে মাছের প্রজনন ও উৎপাদনে এর বিরূপ প্রভাব রয়েছে। বিল শুকিয়ে মাছ ধরার ফলে মাছের বংশবৃদ্ধির স্বাভাবিকধারা ব্যাহত হবে। এতে মানুষ তার খাদ্যতালিকায় প্রোটিনের চাহিদা থেকে বঞ্চিত হবে। অথবা যতটুকু প্রোটিন পাওয়ার কথা ছিলো ততটুকু পাবে না। মাছের প্রজনন রক্ষার্থে মা-মাছগুলোকে অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রশাসনকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে। মা মাছের প্রজনন বাড়াতে মৎস্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা আরও বাড়ানো দরকার।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমী আক্তার বলেন, আইন লঙন করে মৎস্য আহরণ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। মাছের প্রজনন রক্ষায় ও অভিযোগ বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/এএইচটি/এসডি-১০

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন