আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে শ্রুতির পিঠা পার্বণের অষ্টাদশতম অনুষ্ঠিত

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৩-০৫ ১৪:০৫:৩৪

সিলেট :  হিম হিম কুয়াশার আবরণে ষড়ঋতুর পরম্পরায় বাংলার প্রকৃতিতে আজ ফিরে আসে পিঠা পার্বণের উৎসব। বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠা উৎসব শুরু হয় অগ্রহায়নের শুরু হতে। অগ্রহায়ন মানেই কৃষকের গোলায় নতুন ধান। কৃষাণির ব্যস্ততা দিনভর।নতুন চালের পিঠার ঘ্রাণে আমোদিত চারদিক। গ্রামজুড়ে উৎসবের আমেজ। পিঠা উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস, ঐহিত্য ও সংস্কৃতি। বাংলার কৃষিজীবী সমাজের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব নবান্ন। অনাদিকাল থেকে কৃষিসভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম বাংলায় পালিত হয়ে আসছে এ উৎসব। পূর্বে অত্যন্ত সাড়ম্বরে উদযাপিত হতো নবান্ন উৎসব।

সকল মানুষের সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে নবান্ন উৎসব সমাদৃত ছিলো। অগ্রহায়ণের শুরু থেকেই আমাদের গ্রামবাংলায় চলে নানা ৎসব-আয়োজন।  বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এ যেন সত্যি হৃদয়ের বন্ধনকে আরো গাঢ় করার উৎসব। এবছর শীত শেষে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। করোনা ক্রান্তি লগ্ন শেষে আবারো নতুন ভাবে জেগে ওঠার আহ্বানে শুক্রবার (৫ মার্চ) কবি নজরুল অডিটোরিয়াম রিকাবীবাজারে প্রতিবারের মতো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতি সিলেট আয়োজন করেছিল দিনব্যাপী পিঠা পার্বণ ১৪২৭ বাংলা। দিনব্যাপী আয়োজনে উদ্বোধন করেন আবৃত্তিশিল্পী,সংগঠক এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের মুখ্য সচিব দেওয়ান সাঈদুল হাসান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শ্রুতি সদস্য সচিব সুকান্ত গুপ্ত। এসময় উপস্থিত ছিলেন শ্রুতি সম্মাননা ১৪২৬ বাংলা প্রাপ্ত গুণীজন সালা উদ্দিন আহমেদ, ভারতীয় হাই কমিশনের সহকারী কমিশনার নিরাজ কুমার জশওয়ান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমেদ।  আলোচনা সভা এবং কথা মালায় অংশনেন  সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ শামীমা চৌধুরী,  সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, গৌতম চক্রবর্তী, সম্মিলিত নাট্যপরিষদের মিশফাক আহমেদ মিশু, রজত কান্তি গুপ্ত, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য শামসুল আলম সেলিম, রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী অনিমেষ বিজয় চৌধুরী শ্রুতি সমন্বয়ক সুমন্ত গুপ্ত প্রমুখ। বক্তারা বলেন শীতএলেই দিগন্তজোড়া প্রকৃতি হলুদ-সবুজ রঙে ছেয়ে যায়। পাকা ধানের পাশাপাশি প্রকৃতিকে রাঙিয়ে দেয় গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক, ছাতিম আর বকফুল। এই শোভা দেখে আনন্দে নেচে ওঠে কৃৃষকের মন।  নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি করা হয় পিঠা, পায়েস, ক্ষীরসহ হরেক রকম খাবার। সোনালি ধানের প্রাচুর্য আর বাঙালির বিশেষ অংশ নবান্ন  জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ফুটে ওঠেছে অনন্য মহিমায়।

কবি জীবনানন্দ দাশ তার কবিতায় লিখেছেন-  ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়/ মানুষ নয়- হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে/ কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়।’ করোনা কাল শেষে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে শীত চলে গেলেও তার পরশ এখনো রয়ে গেছে। মানুষ আবারো জেগে উঠছে শুদ্ধ সংস্কৃতির শুভ বারতায়। করোনাকে জয় করে আবারো এগিয়ে যাবে সমাজ এবং সংস্কৃতি।

দিনব্যাপী আয়োজনে সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, গীতবিতান বাংলাদেশ, ছন্দনৃত্যালয়, নৃত্যশৈলী,নৃত্যরথ,অন্বেষা, নগরনাট, গীতাঞ্জলি, চারুবাক, শ্রুতি আবৃত্তি বিভাগ, সুরসপ্তক, দীপ্তর্শী, সংগীত নিকেতন,অনির্বান, সুরের ভূবন, নৃত্যাঞ্জলী, থিয়েটার একদল ফিনিক্স প্রমুখ একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন দেওয়ান সাঈদুল হাসান, শামীমা চৌধুরী, সুকান্ত গুপ্ত সংগীত পরিবেশন করেন লোক সংগীতশিল্পী  শ্যামল পাল, বাউল আব্দুর রহমান,গৌতম চক্রবর্তী,প্রদীপ মল্লিক, পল্লবী দাশ মৌ,লিংকন দাশ প্রমুখ।


সিলেট ভিউ ২৪ ডটকম/পিটি-১৬


শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন