আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সুলতান মনসুরের সেকাল একাল

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৬-০৬-১৪ ০০:০৬:৩৯

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু, মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০১৬ :: ১৯৭৪ সালে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের সাথে আমার প্রথম পরিচয়। তখন তিনি সিলেট এম সি কলেজের ছাত্র। ঐসময় সুলতান মনসুর যখন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসতেন তখন কখনো কখনো দেখা হতো, কথা হতো। একবার সিলেট গেলে এম সি কলেজ প্রাঙ্গণেও দেখা হয়েছিল। আমরা দুইজনই একই বয়সের। সিলেট থাকার কারণে সুলতান মনসুরের সাথে রাজনীতি নিয়ে কখনো গভীরভাবে একান্তে আলোচনা করার সুযোগ হয়নি। ঐসময় তিনি ছিলেন সিলেট ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আর আমি ছিলাম ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগে সক্রিয়। তবে দেখা না হলেও দুজনের দেশের বাড়ি মৌলবীবাজার হওয়ায় একটা মনের টান সব সময়ই ছিল।

পচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলে সেদিন এই হত্যার বদলা নিতে যারা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন উল্লেখযোগ্য বেক্তি সুলতান মনসুর। কাদের সিদ্দিকীর প্রতিষ্ঠিত এই বাহিনীতে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। ঢাকা থেকে ঘনিষ্ট বন্ধু ও রাজনৈতিক সাথী যারা এই যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন তাদের সাথে আমার সব সময় একটা যোগাযোগ ছিল। এসকল বন্ধুদের পাঠানো সংবাদ থেকেই সুলতান মনসুরের যুদ্ধে অংশগ্রহনের কথা আমি প্রথম জানতে পারি। তিনি খুব সম্ভবত রনাঙ্গনে যুদ্ধের সাথে সাথে মিডিয়ার দায়িত্বও পালন করেছিলেন। সুলতান মনসুরের এই সসস্ত্র সগ্রামের কথা আজ হয়তো অনেকেরই জানা নেই। পরবর্তিতে জিয়ার সামরিক সরকার কর্তৃক হয়রানীর শিকার হওয়ার কারণে হটাত করেই আমি দেশ ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম। দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থানের কারণে সুলতান মনসুরের সাথে আমার আর কোন ধরনের যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়নি। তবে রাজনীতিতে তার সক্রিয়তা ও সফলতার কথা সবসময় অবগত ছিলাম।

শুনেছি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজন সাংবাদিক কোন এক অন্তরঙ্গ মুহুর্তে এক আলাপ আলোচনায় বলেছিলেন, বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা এই দু’জন দুই সময়ে তাদের নেতৃত্বে দুইজন মেধাবী, আদর্শবান ও পরিক্ষিত মেলিটেন্ট ছাত্র নেতা পেয়েছিলেন। এদের একজন হলেন ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের মহানায়ক তোফায়েল আহমদ(সাবেক ডাকসুর ভিপি এবং ছাত্রলীগ সভাপতি) ও অপরজন আশির দশকে সারা বাংলাদেশ কাপানো ছাত্র নেতা এবং পঁচাত্তরের পনেরোই আগষ্টের হত্যাকাণ্ডে পর প্রতিরোধ বা প্রতিশোধ যুদ্ধের অন্যতম অগ্র সেনানী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ(সাবেক ডাকসুর ভিপি এবং ছাত্রলীগ সভাপতি)। ঊনসত্তরের গণ আন্দোলনের মহানায়ক তোফায়েল ভাইয়ের বীরত্ব গাঁথা ভুমিকার জন্য পরবর্তিতে বঙ্গবন্ধু তার মন্ত্রী পরিষদে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। অথচ ৯৬ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সুলতান মনসুর শুধুমাত্র পেয়েছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। সুলতান মনসুরের মতো ছাত্র নেতার প্রতি অবহেলা মূলত এখান থেকেই শুরু হয়। কিন্তু তাতেও তিনি দল ও দলীয় নেত্রী ভ্রষ্ট হননি। সভানেত্রীর নেতৃত্বে ছিলেন সক্রিয়। পরবর্তিতে ক্ষমতায় আসা বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলনে তার জলন্ত প্রমান তিনি দিয়েছেন। এই সময় সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার ভূমিকা ও পরিশ্রম ছিল তুলনাহীন।

পরবর্তিতে সামরিক বাহিনী সমর্থিত ডক্টর ফখরুদ্দিন আহমেদের অস্থায়ী
সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন আরও অনেকের মতই তার রাজনৈতিক ভূমিকাকে সংস্কারপন্থী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। যদিও তোফায়েল ভাই, রাজ্জাক ভাই, মুকুল দা কিংবা বর্তমানে ঢাকার মেয়র যিনি সরাসরি কিঙ্গ্স পার্টিতে যোগদান করেছিলেন তাদের মতো কোনো কিছুই তিনি করেননি।  তবুও তিনি তার প্রানপ্রিয় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ থেকে অবহেলিতো।  শুধু তাই নয়  তোফায়েল ভাই, রাজ্জাক ভাই, খ ম জাহাঙ্গীর ভাই সহ আরো অনেককে দলে ফিরিয়ে  এনে  গুরত্বপূর্ণ  দায়িত্ব  দেওয়া হলেও  সুলতান  মনসুর ও মুকুল বোস থেকে  যান  দলের  বাহিরে।  এখন পর্যন্ত  সুলতান মনসুর ও মুকুল বোসকে (মুকুল দা) কেন দুরে সরিয়ে রাখা হয়েছে তার উত্তর একমাত্র আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বই বলতে পারবে।

শুনেছি  মুকুল বোসকে আসছে আওয়ামী  লীগের কাউন্সিলে দলের  গুরত্বপূর্ণ  পদে পুনরায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। বিলম্বে  হলেও  সংবাদটি আমার কাছে অত্যন্ত আনন্দজনক। কারণ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ঢাকায় ছাত্রলীগকে টিকিয়ে রাখা এবং ঐসময়ের সকল ধরনের গোপনীয় সাংগঠনিক কার্যকলাপে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মুকুল বোস। এখন সত্যি সত্যি যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে বলা যেতে পারে তারমত একজন পরীক্ষিত নেতার আওয়ামী লীগে নেতৃত্বে আগমন দলকে করবে আরো শক্তিশালী। এখন প্রশ্ন হলো এক্ষেত্রে সুলতান মসুরকে কেন দুরে সরিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র চলছে? সুলতান যিনি নিজের জীবন দিয়ে হলেও জাতির জনকের হত্যার বদলা নিতে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন, এরশাদ সরকারের সময় নানা প্রলোভনের ডাক আসা সত্বেও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে সংগ্রাম করেছেন, বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ছিলেন সামনের কাতারে তার আজ কেন হবে এমন পরিনতি? এধরনের একজন পরীক্ষিত রাজনৈতিক নেতাকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে দুরে সরিয়ে রাখা আদৌ সঠিক কি না তা দলের নেতৃত্বকে নুতন করে ভেবে দেখা উচিত। অনেকে বলেন সিলেটে আওয়ামী লীগের রাজনীতি বর্তমানে দুর্বল হওয়ার মূল কারণ সুলতান মনসুরের অভাব। বর্তমানে সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যারা নেতৃত্বে আছেন তাদের সাথে তুলনা করলে সুলতান মনসুরের প্রয়োজন ও উপস্থিতি এখানে অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ বলে অনেকে মনে করেন।  সুলতান মনসুর কি তাহলে বর্তমানে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে এক সুদূর প্রসারি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন?

সুলতান মনসুরের সেকাল আন্দোলনের এক ঐতিহাসিক ইতিহাস লেখা থাকলেও তার বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান দিন দিন তাকে অন্ধকারের পথে নিয়ে যাচ্ছে বললে হয়তো ভুল করা হবে না? তিনি ভুল করলেও করতে পারেন। এখন প্রশ্ন হলো আর দশজনের মত ক্ষমা পাওয়ার অধিকার থেকে তাকে কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে? বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ও পরীক্ষিত এই নেতাকে আসছে কাউন্সিলে দলের গুরত্বপূর্ণ দায়িত্বে কি দেওয়া যায় না? দীর্ঘদিন থেকে একরাশ  বঞ্চনা ও অবহেলায় থাকা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর  আসছে কাউন্সিল অধিবেশনে পাবেন কি একটি সুযোগ?

লেখক : সমাজকল্যান সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর কমিটি (১৯৭৪), সদস্য,জাতীয় ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক কমিটি (১৯৭৫), বর্তমানে সুইডিশ লেফট পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচন কমিশন সদস্য

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/শাদিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন