আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

রাজস্ব আদায়ের পরও সিলেটের বিভিন্ন সেতুর টোল আদায় চলছে!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০৭-১৫ ১০:৫২:৪৪

চৌধুরী মুমতাজ আহমদ, অতিথি প্রতিবেদক ::   বড় ধরনের নির্মাণ ব্যয় সামাল দিতেই সাধারণত সড়ক বা সেতু থেকে টোল আদায় করা হয়ে থাকে। টোল নীতিমালাতেও বলা আছে ২০০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যের সেতু থেকে টোল আদায় করা যাবে না। এর চেয়ে বড় দৈর্ঘ্যের সেতুর ক্ষেত্রেই সাধারণত, ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে টোল সংগ্রহের মাধ্যমে সরকার তুলে নেয় নির্মাণের খরচ। সহজ হিসেবে খরচ উঠে গেলে সেতুগুলো টোলমুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও একটি সেতুতে টোল চালু হলে তা থেকে যেন আর মুক্তি মিলে না। নির্মাণ ব্যয়ের ৪/৫ গুণ রাজস্ব আদায়ের পরও সিলেটের বিভিন্ন সেতু থেকে টোল আদায় চলছেই।

সিলেট সড়ক বিভাগে সব মিলিয়ে ৫টি সেতু থেকে টোল আদায় করা হয়ে থাকে। সেতুগুলো হচ্ছে- সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের বিশ্বনাথ উপজেলায় অবস্থিত লামাকাজি সেতু, সিলেট থেকে মৌলভীবাজার প্রবেশের পথে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় অবস্থিত শেরপুর সেতু, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় অবস্থিত শেওলা সেতু, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ফেঞ্চুগঞ্জ সেতু, সিলেট শহরতলির শাহপরান সেতু। এ ৫টি সেতুর মধ্যে দুটি সেতু থেকেই নির্মাণ ব্যয়ের কয়েক গুণ রাজস্ব জমা পড়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। তবে সেতুগুলো এখনও টোলমুক্ত হয়নি, আদৌ হবে কিনা সে ব্যাপারেও কোনো নিশ্চয়তা মেলেনি।

টোল আদায় করা হয় এমন সেতুর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো সেতু হচ্ছে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের বিশ্বনাথ উপজেলায় অবস্থিত লামাকাজি এম এ খান সেতু। ১৯৮৪ সালে নির্মিত সেতুতে ব্যয় হয় ৭ কোটি ৬১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। সিলেট সড়ক বিভাগের সরবরাহ করা তথ্য মতে, ১৯৯০ সালের ৩রা আগস্ট টোল আদায় শুরুর পর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রায় ২৭ বছরে এ সেতু থেকে টোল বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ২৯ কোটি ৮৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ ২১৭ মিটার দীর্ঘ এ সেতু থেকে সরকারের প্রাপ্তিযোগ হয়েছে প্রায় ৪ গুণ। তবে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে শেরপুর সেতু। ২৬৯ মিটার দীর্ঘ এ সেতু থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ৫ গুণ।

১৯৯০ সালে ১০ কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতু থেকে টোল আদায় শুরু হয় ১৯৯১ সালের ১লা এপ্রিল থেকে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ২৬ বছরে এ সেতু থেকে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ৪৯ কোটি ৪৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। বাকি সেতুগুলোর ক্ষেত্রেও নির্মাণ ব্যয়ের অর্ধেকের বেশিই টোল জমা পড়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। যে গতিতে টোল আদায় হচ্ছে দু’এক বছরের মধ্যে সেতুগুলোর নির্মাণ ব্যয় উঠে যাওয়ার কথা।

অভিযোগ আছে, টোল আদায়ে ফাঁকিঝুঁকির কারসাজি না থাকলে ইতিমধ্যে এ সেতুগুলো থেকেও নির্মাণব্যয় উঠে যাওয়ার কথা ছিল। সেতুগুলোকে টোল আদায়ের ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রায়ই অভিযোগ উঠে দরপত্র আহ্বানের মাঝের সময়ে খাস কালেকশনের নামে সেতু থেকে যে টাকা আদায় হয় তার বেশির ভাগই জমা পড়ে না সরকারি তহবিলে।

সম্প্রতি ফেঞ্চুগঞ্জ সেতুর ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ উঠেছে। খাস কালেকশনের প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়ে এ ব্যাপারে সড়ক বিভাগের বক্তব্য হচ্ছে, ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোনো কারণে পরবর্তী ইজারাদার নিয়োগে বিলম্ব হলে বিভাগীয় লোকবল দ্বারা সাময়িকভাবে টোল আদায় করা হয়ে থাকে।

সিলেট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্তের দেওয়া তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১৯৯৯ সালে ২২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত শেওলা সেতু থেকে নির্মাণ ব্যয়ের ৭৮ ভাগই টোলের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়েছে। ১৯৯৯ সালে টোল আদায় শুরুর পর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ২২৬ মিটার দীর্ঘ সেতু থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ৮২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। ২০০৫ সালে নির্মিত ফেঞ্চুগঞ্জ সেতুতে ব্যয় হয়েছিল ২৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ২০০৬ সালে টোল আদায় শুরুর পর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এ সেতু থেকে ১৯ কোটি ৮৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা জমা হয়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। অর্থাৎ ১০ বছরে নির্মাণ ব্যয়ের ৭৫ শতাংশই জমা পড়েছে সরকারের তহবিলে।

২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৬ সালে নির্মিত হওয়া শাহপরান সেতু থেকেও রাষ্ট্রীয় তহবিলে ব্যয়ের ৬০ ভাগ জমা পড়েছে। ৩৯২ মিটার দীর্ঘ এ সেতু থেকে ২০০৭ সাল থেকে টোল আদায় শুরু হয়। চলতি বছরের মার্চ পযন্ত সেতুটি থেকে পারাপারের বিনিময় হিসেবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা পড়েছে ১৪ কোটি ৩১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

সিলেট সড়ক বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, ৫ সেতুর মধ্যে লামাকাজি ও শেওলা সেতুই এখন ইজারা দেয়া আছে। বাকি ৩টি সেতুতে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায় করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে নিয়োজিত ঠিকাদারকে কেবল অপারেশন ফি পরিশোধ করা হয়। আল বোরাক ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানই লামাকাজি ও শেওলা সেতুর ইজারাদারের দায়িত্বে আছে জানানো হলেও কত টাকায় তারা সেতু দুটোর ইজারা পেয়েছে সিলেট সড়ক বিভাগের দেওয়া লিখিত জবাবে এ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বাকি তিনটি সেতু থেকে টোল আদায়কারী ঠিকাদার কারা এ বিষয়টিও। কত টাকাই বা তাদেরকে অপারেশন ফি বাবদ পরিশোধ করা হয় সে প্রশ্নেরও জবাব মেলেনি সড়ক বিভাগের কাছ থেকে।

সিলেটের সেতুগুলো কবে টোলমুক্ত হবে এ ব্যাপারেও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়নি সিলেটের সড়ক বিভাগ থেকে। সরকারি নির্দেশনার উপরই বিষয়টি নির্ভর করছে বলে লিখিতভাবে জানান সিলেট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত।-মানবজমিন

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৫ জুলাই ২০১৭/চৌমুআ/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন