আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

গোলাপগঞ্জে অসহায় জমির উদ্দিনের পরিবার

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০৭-১৭ ১৪:৩০:১২

মো. এনামুল কবীর ::   বাড়ির চারদিকে হাঁটুর উপরে পানি। ডুবে গেছে বিশুদ্ধ পানির উৎস টিউবওয়েল। এমনকি টয়লেটের উপরেও পানি প্রায় কোমর ছুঁইছুঁই। ক’দিন আগেই যে ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছিলো, তা আর মুখে বলতে হলোনা, দেখেই বুঝা যায়। স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও ৭/৮ বছরের দুই নাতি নিয়ে এমনই মানবেতর অবস্থায় দিন যাচ্ছে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ১০নং উত্তর বাদেপাশা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. জমির উদ্দিনের।

সত্তোরোর্ধ্ব এই দিনমজুরের জীবনটা কঠোর সংগ্রামেই যাচ্ছে। পরের বাড়িতে কাজ করেছেন সারাজীন। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোথাও মাথাগোঁজার ঠাঁই পর্যন্ত ছিলোনা তার। কয়েক বছর আগে তারই এক গৃহকর্তা দান করেছেন একটুকরো জমি। সেই জমিতে মাটির বেড়া আর টিনের চালা দিয়ে কোনমতে দাঁড় করিয়েছিলেন ৩টি ছোটখাটো ঘর। সেই ঘরেই কাটছিলো দিন। কিন্তু প্রকৃতির নিষ্ঠুর আঘাত, এবারের বৈশাখী ঝড়ে উড়েযায় ঘরের চালা, খসে পড়ে মাটির দেয়াল। সে গত এপ্রিলের ঘটনা। পুরো সংসার নিয়ে রাস্তায় তাবু খাটিয়ে কাটে তাদের কয়েকটি দিন।

এলাকাবাসীর সহায়তায় তার বড় ছেলে বিলাল উদ্দিন আবারও কোনমতে দাঁড় করান ঘরটি। এখন সেই নড়বড়ে কুঁড়ে ঘরেই কাটছে তাদের দিনরাত। তারপর এই জুলাইয়ের ভয়াবহ বন্যা! দিশেহারা অবস্থা পরিবারটির। বাড়ির চারদিকে কেবল পানি আর পানি।

‘ঘরোও উঠিছিলরে বাবা। খুব কষ্টে যার আমরার দিন।’ লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বললনে বৃদ্ধ জমির উদ্দিন। ‘টিপকল বুড়িগেছে, খাওয়ার পানি নাই, টয়লেটর অবস্থা আরও খারাপ’ প্রকৃতির ডাকে সাঁড়া দেয়ার তাড়া কিভাবে যে সামলাচ্ছে দুর্গত এই পরিবারের সদস্যরা, সে প্রশ্ন অবান্তর।

জমির উদ্দিনের ৪ ছেলে মেয়ে। দুই ছেলে আর দুই মেয়ে। পরিবারের ভার বড় ছেলে মো. বিলাল উদ্দিনের কাঁধে। সে দিনমজুর। কাজ করে অন্যের বাড়িতে। গৃহস্থালির কাজ। ছোট ছেলে বেকার। মাঝে মাঝে চেষ্টা করে বড় ভাইকে সাহায্য করার। কিন্তু খুব একটা পারেনা কাজের অভাবে।

বয়স্ক ভাতা/ভিজিএফ বা দরিদ্র মানুষের কল্যাণে সরকারের দেওয়া বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কোনটিতেই তালিকাভূক্ত হতে পারেননি জমির উদ্দিন। তার ছেলের অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড মেম্বার ললাই মিয়া তাদের কোন সুযোগ সুবিধা দেননা।

প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে ললাই মেম্বার জানান, বিলাল বা জমির উদ্দিন নামক কাউকে তিনি চিনেননা। তবু যোগাযোগ করলে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন। কয়েকদিন দিন আগে জমির উদ্দিনের ভাগ্যে জুটেছে ত্রাণের ১০কেজি চাল, সাথে ৫শ’ টাকা।

তবু খুশি অসহায় বিলাল উদ্দিন। এতবড় সংসার নিয়ে প্রায় কর্মহীন দিন যাচ্ছে তার। ধারকর্য করতে করতে আর চলার উপায় নেই। এই দুঃসময়ে এ সাহায্য তাদের জন্য অনেক বড় পাওনা।

বিলালদের আসল সমস্যাটা হচ্ছে ঘরের। মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকুর জন্য তাদের যতো হাপিত্যেশ। ঘরটি মেরামত ও পূণঃনির্মানের জন্য বেশ কিছু টাকা প্রয়োজন। কিন্তু কোন উপায় নেই।

বিলাল এলাকার সচেতন কয়েকজন মানুষের সাহায্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের সংগঠন, গোলাপগঞ্জ হেল্পিংহ্যান্ডস’র শরাণাপন্ন হয়েছিলেন। কিন্তু ঘর তৈরি করে দেয়ার মতো কোন প্রকল্প তাদের না থাকায় তারা তাকে গত ঈদুল ফিতরের সময় পাঁচ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন।

টাকাটা পেয়ে বিলালের পরিবার খুশি হলেও ঘরের সমস্যা তাদের থেকেই যায়। তাদের আশা গোলাপগঞ্জ হেল্পিংহ্যান্ডস নেতৃবৃন্দসহ প্রবাসী ও দেশীয় ব্যবসায়ী সমাজসেবীরা এগিয়ে এসে যদি স্থায়ীভাবে মাথাগোঁজার সমস্যাটার সমাধান করে দিতেন!

গোলাপগঞ্জ উপজেলার যুক্তরাষ্ট্র প্রাবসীদের সংগঠন গোলাপগঞ্জ হেল্পিংহ্যান্ডস ইউএসএ। এ সংগঠন দেশের দরিদ্র মানুষের কল্যাণে অনেক ভালো উদ্যোগ গ্রহন ও বাস্তবায়ন করেছে।

অতিসম্প্রতি তারা গোলাপগঞ্জের ৪২ জন প্রতিবন্ধিকে হুইল চেয়ার এবং ঈদুল ফিতরের আগে ৩৬ জন হতদরিদ্রকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে সিলেটের সচেতন মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছে।

এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ১০নং উত্তর বাদেপাশা ইউনিয়নেরই আমকুনার সন্তান আব্দুল বাসিত। আরেকজন উদ্যমী তরুন সমাজ সেবক, সংগঠনের সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার জাবেদ আহমদ।

বিলাল উদ্দিন, তার পিতা জমির উদ্দিন এবং আছিরগঞ্জ এলাকার সচেতন মানুষদের ধারণা, সংগঠনিকভাবে হোক বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে হোক, অসহায় এই পরিবারটির ঘরের সমস্যা প্রবাসীরা চাইলে সমাধান করে দিতে পারেন।

বিলালদের প্রতিবেশি, একই ইউনিয়নের খাগাইল গ্রামের ফয়েজুর রহমান বলেন, খুব করুণ অবস্থায় তাদের দিন যাচ্ছে। আমরা বাসিত-জাবেদসহ গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারের সকল প্রবাসী ও প্রবাসী সংগঠনসমুহের নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে হোক বা সাংগঠনিকভাবে হোক, এই পরিবারটির আবসন সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসুন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৭ জুলাই ২০১৭/এমএকে/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন