আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

নির্বাচনী হাওয়া জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০৮-২৪ ০০:০০:৩২

সানোয়ার হাসান সুনু, জগন্নাথপুর :: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ভিআইপি আসন হিসাবে খ্যাত সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নান। তিনি পর পর দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

এর আগে এ আসনে একাধিকবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্র্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধি হিসাবে এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখেন হাই প্রোপাইল নেতা সাবেক স্পিকার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্ষীয়ান কুটনীতিবিদ হুমায়ুর রশীদ চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুস সামাদ আজাদ, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ এডভোকেট আব্দুর রইছ, বিএনপি নেতা দেওয়ান সামছুল আবেদীন, সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী ফারুক রশীদ চৌধুরী, বিএনপি নেতা গুলজার আহমদ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নেতা মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসাবে এডভোকেট আব্দুর রইছ এম.পি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে এ আসন থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দেওয়ান শামছুল আবেদীন সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন। সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এর আমলে ১৯৮৬ সালে নির্বাচিত হন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। আর ১৯৮৮ সালে হুমায়ূন রশীদের ছোট ভাই ফারুক রশীদ চৌধুরী, এবং ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসাবে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আব্দুস সামাদ আজাদ, তার মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতি মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী নির্বাচিত হন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকায় ঘন ঘন সফর করে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান এম.পি ও অর্থ  পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নান। তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ছাড়াও সভা সমাবেশ ও এলাকাবাসীর সাথে গণসংযোগ  চালিয়ে যাচ্ছেন। মন্ত্রীর সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন এলাকার উন্নয়নে আমি আজীবন কাজ করে যেতে চাই। দল আমাকে মনোনয়ন দিবে বলে আমি আশাবাদি। তিনি বলেন আমি জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। আশাকরি এলাকাবাসী আগামীতে এটার মূল্যায়ন করবেন। ১৩০ কোটি  টাকা ব্যয়ে রানীগঞ্জ সেতু ও পাগলা জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ, আউশকান্দি, ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পুরাতন ৮টি স্টীল ব্রীজ ভেঙ্গে নতুন করে পাকা ব্রীজ নির্মানে ট্রেন্ডার গ্রহণসহ বড় বড় মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। ইতিমধ্যে সিলেটের সর্ব বৃহৎ সেতু জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ সেতুর কাজ চলছে। সুনামগঞ্জে ১টি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, এই অসম্পুর্ণ  কাজগুলো যাতে সম্পুর্ণ করতে পারি এ ব্যাপারে সকলের সার্বিক সহযোগিতা চাই। আমার বিশ্বাস ভোটাররা আগামীতে আমার পক্ষে রায় দিবেন।

এদিকে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ তনয় আজিজুস সামাদ আজাদ ডনও এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচনে অংশ নেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী এম এ মান্নানের সাথে তার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে নেয়ারও অভিযোগ তুলেছিলেন ডন।

আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী আজিজুস সামাদ ডন বলেন, আমার গণসংযোগ চলছে। দলীয় মনোনয়নের জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, আমার বিশ্বাস দল আমাকে মনোনয়ন দিবে। কারণ আমার বাবা বর্ষীয়ান নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি এ আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। আশা করি দল সেটা মূল্যায়ন করবে।

এছাড়া যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশে এসে তিনি বন্যা দূর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণসহ নানা সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে রাখছেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে সৈয়দ সাজিদুর রহমানও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

এদিকে ২০ দলীয় জোট নেতা সাবেক এম.পি মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী’র সাথে ফোনে আলাপ হলে তিনি বলেন, আমি কেন্দ্রের গ্রীণ সিগন্যাল পেয়ে এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। এক সপ্তাহ আগে আমার বাড়িতে বৈঠক করে মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার মাধ্যমে আমি আমার নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছি। মাওলানা পাশা বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে ও অত্যাচরে এমনিতেই দেশবাসী অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন। দেশে বর্তমানে বাক স্বাধীনতা নেই। মানুষ মিছিল মিটিং করতে পারে না। এ অবস্থায় জনগণ ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীকেই বিজয়ী করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন বিগত সময়ে আমি উপ-নির্বাচনে ১৩ মাসের জন্য এম.পি ছিলাম। এই সময়ে যতটুকু সম্ভব এলাকার উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করেছি। আল্লাহর রহমতে আমি যদি আগামীতে সুযোগ পাই তবে এলাকাবাসীর জন্য কাজ করে যাব ইনশাল্লাহ।

এছাড়া জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নেতা মাওলানা ইমরান আহমদও এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

এদিকে, সুনামগঞ্জ জেলা বি.এন.পি’র সাবেক সহ-সভাপতি শিক্ষাবিদ লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ আসনে দল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের চাপ রয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাবীরপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশে আসন্ন নির্বাচনে একজন প্রার্থী হিসাবে আমি কাজ করে যাচ্ছি, আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দিবেন। আগামীতে যদি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন হয় তাহলে আমি বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করব।   

এদিকে বি.এন.পি’র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত যুক্তরাজ্য বি.এন.পি’র সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করবেন বলে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানিয়েছেন। এছাড়াও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তারা হলেন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সুনামগঞ্জ জেলা বি.এন.পি’র সহ-সভাপতি ফারুক আহমদ ও সুনামগঞ্জ জেলা বি.এন.পি’র সহ-সভাপতি সাজু আহমদ প্রমুখ।

এদিকে, জাতীয় পার্টি যদি জোট ছাড়া এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেয় তবে, আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্য জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ হামজা। মুঠো ফোনে  আলাপ হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, কেন্দ্রের সাথে আমার যোগাযোগ চলছে, আসন্ন নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করব।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ২৪ আগস্ট ২০১৭/ এসএইচএস/ শাদিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন