আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটের যতো বিমান দুর্ঘটনা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০৯-১৩ ০০:০৭:১৬

বিমানবন্দরের পুরাতন (বামে) ও নতুন ভবন (ডানে)

মিসবাহ উদ্দীন আহমদ :: দেশ-বিদেশের যেকোন স্থানেই বিমান দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিশাল। আকাশের উপর বিমান দুর্ঘটনা মানেই নিশ্চিত মৃত্যু। শত শত মানুষের প্রাণহানির নজির হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি দেশে ঘটেছে বিমান দুর্ঘটনা।

তবে বাংলাদেশে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা কমই বলা চলে। বৈমানিকদের দক্ষতার কারণে বেশিরভাগ সময়ই বড় রকমের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন বিমানযাত্রীরা।

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব কোণের জনপদ সিলেট বিভাগের সিলেট জেলাতে। বিভাগীয় শহর সিলেটে অবস্থিত একটি অন্যতম প্রধান ও তৃতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এটি । সিলেট নগরীর থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে ৫ মাইল (৮ কিলোমিটার) দূরে বড়শালা এলাকায় অবস্থিত।এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও বাংলাদেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি। ১৯৭১ সালে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর নামানুসারে নামকরণ করা হয়। এর আগে বিমানবন্দরটিকে ডাকা হতো সিলেট বিমানবন্দর হিসেবে। এখান থেকে লন্ডন যুক্তরাজ্য ও দুবাইসহ বিভিন্ন দেশের সাথে সরাসরি বিমান চলাচল করে। অভ্যন্তরীণ রুটে ঢাকা- সিলেট, সিলেট-চট্টগ্রাম ইত্যাদি রূটেও বিমান চলাচল করে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট-শিলচর ও সিলেট- কক্সবাজার রূটেও বিমান চলাচলের কথা রয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আবুধাবি, দোহা, দুবাই, লন্ডনের হিথ্রো ও জেদ্দা থেকে সিলেটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে। এছাড়া অন্যান্য বেসরকারি বিমান সংস্থা অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করে।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেশের জাতীয় এয়ারলাইন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর জন্যও ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ার, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স এবং ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সিলেট থেকে ঢাকায় অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করে। সুযোগ-সুবিধার কথা বাদ দিয়ে যদি দক্ষতার কথা প্রশ্ন আসে তবে যাত্রীরা দেশের সরকারী বিমানেই আস্থা রাখেন।

সিলেটের যতো বিমান দুর্ঘটনা:

দেশে ছোট বড় অনেক বিমান দুর্ঘটনায় পড়েছে বা নিশ্চিত দুর্ঘটনার হাত থেকে ফিরে এসেছে ঘটেছে। এরমধ্যে সিলেটের কয়েকটি ঘটনা আজো হৃদয়কে নাড়া দেয়। তবে ওলি আউলিয়ার পাদস্পর্শে ধন্য পূণ্যভূমি সিলেটে প্রায় প্রতিটি দুর্ঘটনায় বড়োরকমের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেঁচে গেছেন যাত্রীরা। সেগুলোর দিকেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে এই প্রতিবেদনটি।

সিলেটের বিমান সংশ্লিষ্ট ঘটনা প্রবাহের সাথে সালুটিকরের দুর্ঘটনাটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত। ১৯৯৭ সালের ২২ ডিসেম্বর ৮৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা একটি ফকার এফ২৮-৪০০০ মডেলের বিমানটি দুর্ঘটনার স্বীকার হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-৬০৯ ৮৫ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রু নিয়ে ঢাকা থেকে সিলেট আসছিল। সেদিন ছিলো ঘন কুয়াশা। সিলেট বিমানবন্দরে অবতরণ করার সময় কুয়াশার কারণে রানওয়ের পাদদেশ থেকে ৫ থেকে সাড়ে ৫ কিলোমিটার দূরে উমাইরগাঁও নামক স্থানে একটি ধানক্ষেতে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৭ জন যাত্রী অহত হন। আহতদের মধ্যে সিলেট পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান বাবরুল হোসেন বাবুলসহ তার পরিবারের কয়েকজন যাত্রী ছিলেন। এরপরে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। সিলেটের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন দলবেঁধে দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটিকে দেখতে যান। বেশ কয়েকদিন ধানক্ষেতে ফেলে রাখা ছিলো বিমানটি। পরে সেটি সরানো হয়।

এরপর ২০০৪ সালের ৮ অক্টোবর আবার সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনা ঘটে। এই বিমানটিও ১৯৯৭ সালে দুর্ঘটনার কবলে পড়া বিমানের মডেলের অনুরুপ ফকার এফ২৮-৪০০০ মডেল। সেদিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-৬০১ ৭৯ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রু নিয়ে ঢাকা থেকে সিলেট আসছিল। অবতরণের পর রানওয়ে ভেজা থাকার কারণে বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে খাঁদে পড়ে যায়। এতে ২ জন যাত্রী আহত হয়। জানাগেছে পরে দুর্ঘটনা কবলিত ওই বিমানটি নিলামের মাধ্যমে একটি রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। যা ঢাকার একটি বিনোদন পার্কে উড়োজাহাজ রেস্টুরেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

২০১৫ সালের আগস্ট মাসে সিলেট বিমানবন্দরের রানওয়েতে আরেকদফা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সেদিন দুবাই থেকে সরাসরি আসা উড়োজাহাজে ২২০ জন যাত্রী ছিলেন। বিজি-৫২ বিমানের ডানদিকের ইঞ্জিনের ভেতর পাখি ঢুকে পড়ে। তখন চারটি ব্লেড ভেঙে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। সেদিন সকাল ৭ টায় রানওয়েতে অবতরণের সময় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি সেদিনও। যাত্রীদের মধ্যে ২০৫ জন ছিলেন সিলেটের। বাকি ১৫ জন ছিলেন ঢাকার।

সর্বশেষ গত শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭ টায় ২ শতাধিক যাত্রী নিয়ে সিলেট থেকে ঢাকার পথে উড়াল দেয়া একটি বিমান বজ্রপাতের কবলে পড়ে। সাধারণত বিমান বজ্রপাত নিরোধক প্রযুক্তিতে তৈরি হলেও সেদিন বজ্রপাতের কারণে বিমানের একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। পরে বিকল্প ইঞ্জিনের ওপর ভর করেই সিলেট থেকে যাত্রীদের নিয়ে আকাশে উড়া এয়ারবাস এ-৩৩০ বিমানটি ঢাকায় পৌঁছে। বিমান সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে- ১০ হাজার ফুট ওপরে থাকাবস্থায় হঠাৎ বজ্রপাতের আঘাতে অচল হয়ে পড়ে উড়োজাহাজটির একটি ইঞ্জিন। পরে পাইলট এক ইঞ্জিনের উপর ভর করে হযরত শাহজালাল (র.) বিমানবন্দরে অবতরণ করাতে সক্ষম হন।

তবে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুরাণ রানওয়েতে দুর্ঘটনা এড়াতে সরকার আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। যা চলমান রয়েছে। আগামী ২০১৯ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭/ এমইউএ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন