আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

সুনামগঞ্জের হাওরপারে বাড়ছে চোরের উপদ্রব

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০৯-১৩ ১০:৪১:৪৫

সিলেটভিউ ডেস্ক :: সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলাই হাওরবেষ্টিত। এখানকার ৯০ ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর একের পর এক দুর্যোগের কবলে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে এখানকার কৃষকেরা। হাওরপারের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো অভাব অনটনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে এখনো। এর মধ্যে আবার বেড়েছে চোরের উপদ্রব। দিনের বেলা মাছ আহরণ করে কিছু টাকা উপার্জন করলেও রাতে এসব টাকা পয়সা, ঘরের আসবাবপত্র ও গরু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা। জানা যায়, এক ফসলি বোরো ধানের ওপর নির্ভশীল হাওরপারের কৃষক পরিবারগুলো গত এপ্রিলের আগাম বন্যায় শতভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এভাবেই বছরের পর বছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই বেঁচে থাকছে হচ্ছে হাওরবাসীকে।

জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক দোয়ারা বাজারসহ অন্যন্য উপজেলায় চোরের উপদ্রব না থাকলেও জেলার শাল্লা ও ধর্মপাশা দুটি উপজেলায় চোরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। এই দুই উপজেলার মধ্যনগর এলাকায় চোরের উপদ্রব দিন দিন বেড়ে উঠছে।

শাল্লা উপজেলার বাহাড়া ইউনিয়নের নওয়াগাঁও গ্রামে গত বুধবার রাতে বনমালী দাস, তাপস চন্দ ও রাজচরণ দাসের বাড়ি থেকে সাতটি গরু ও ঘরের আসবাব চুরি হয়। রাতে ঘরের বেড়া ভেঙে গরুগুলো চুরি করা হয়েছে বলে এলাকাবাসীর দাবি।

উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের মিহির কান্তি ঢাকাটাইমসকে জানান, উপজেলার কামারগাঁও, উজানগাঁও, চিকাডুবি ও জাতগাঁও চোরের গ্রাম হিসেবে পরিচিত। ওইসব গ্রামের  লোকদের পেশাই চুরি করা। তারা শাল্লা উপজেলা ছাড়াও পাশের জেলাসমূহের বিভিন্ন গ্রামে গরু, স্বর্ণালঙ্কারসহ ঘরের আসবাবপত্রও চুরি করে এলাকায় নিয়ে আসে। চুরি হওয়া এসব মালামাল আবার টাকার বিনিময়ে ফিরিয়ে দেয়া হতো। স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতায় বেশ কয়েক বছর ধরে চুরি বন্ধ হলেও এখন আবার চোরের উপদ্রব বেড়ে উঠেছে। চোরের উৎপাতে এলাকারবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এবিষয়ে শাল্লা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন  বলেন, নওয়াগাঁও গ্রামে গরু চুরির ঘটনার একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের সাথে সাথে পুলিশ গরুগুলো উদ্ধারে তৎপরতা রয়েছে। গরুগুলো উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এদিকে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর থানার চামারদানী ইউনিয়নে চিহ্নিত চোরের সর্দার রয়েছে। তার বাহিনীর উপদ্রবে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। প্রতিদিনই ইউনিয়নের কোনো কোনো গ্রামে গরু চুরি করে গোয়ালঘর শূন্য করে দিচ্ছে। এর প্রতিবাদ কেউ করলে পরদিন তার ঘরের আসবাবপত্র ও গরু চুরি করে নিয়ে যায়। ফলে এই এলাকার কেউ মুখ খুলতে না পেরে অনেক পরিবার এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। একাধিক বার অভিযোগ দেয়া হলেও ওই বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। এদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে দুর্গম হাওর এলাকার নিরীহ মানুষের, গরু, মাড়াইকল, সৌরবিদ্যুতের প্যানেল, সেল মেশিন অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে স্থানীয় আনোয়ার মিয়াসহ অনেকেই জানান, এরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরফেরা করলেও এদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে সাহস পায়নি। পুলিশকে খবর দিলেই পুলিশ আসার আগেই খবর জেনে আত্মগোপনে চলে যায়। এভাবে কয়েকবার পুলিশি অভিযান ব্যর্থ হয়েছে।

চামারদানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকেরুল আজাদ মান্না  বলেন, চোরের সর্দার ও তার বাহিনীর এমন অত্যাচারে ও চুরির উপদ্রবে ইউনিয়নবাসী অতিষ্ঠ। স্থানীয় জনগণের চাপে আমি একাধিক বার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে উপস্থাপন করেছি। কিন্তু কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

মধ্যন্যগর থানার অফিসার ইনচার্জ সেলিম নেওয়াজ  জানান, এদের অবস্থান সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে জানালে আমি নিজে ফোর্সসহ অভিযান চালিয়ে ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে এলাকাটি অত্যন্ত দুর্গম হওয়ায় কাজটি অনেকাংশেই কঠিন। তারপরও আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেজন্য জনসচেতনতা ও তাদের সহযোগিতা দরকার।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭/ঢাটা/এমকে-এম

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন