আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

দক্ষিণ সুরমায় ছিনতাইকারীর কললিস্টে পুলিশের নম্বর!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-১০-১১ ০০:০৭:৫৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :: দক্ষিণ সুরমায় চন্ডিপুলে সোমবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে একাধিক মোটরসাইকেল আরোহী একদল ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন সিলেট চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক হুমায়ূন আহমদ। পরে ঘটনাচক্রে ছিনতাইকারীদের মধ্যে তিনজনকে আটক করতে সক্ষম হন ব্যবসায়ী হুমায়ূন আহমদ ও স্থানীয় জনতা।

আটকের পর ছিনতাইকারীদের একজন আবু মিয়ার (২৫) মোবাইল ফোনের কল লিস্ট চেক করে এক পুলিশ সদস্যের সাথে কথোপকথনের প্রমাণ পাওয়া যায়। ব্যবসায়ী হুমায়ূন আহমদ ও স্থানীয়রা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ব্যবসায়ী হুমায়ূন জানিয়েছেন- মোটরসাইকেল আরোহী ছিনতাইকারীরা তাকে ‘ডাকাত’ বলে তাড়িয়ে নিয়ে আসে। পরে তিনি তাঁর নিজের মালিকানাধীন দিবা-রাত্রি ফিলিং স্টেশনের ঢুকে পড়েন। মোটরসাইকেল আরোহী ছিনতাইকারীরা ফিলিং স্টেশনে ঢুকে হুমায়ূনকে ‘ডাকাত’ বলে চিহ্নিত করতে চায়। এসময় তিনি এক ছিনতাইকারীকে ঝাপটে ধরেন। স্থানীয়  লোকজন এগিয়ে এসে আরোও ২ ছিনতাইকারীকে আটক করে। এসময় খুলনা মেট্রো নাম্বার প্লেইট লাগানো একটি মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়। তাদের সহযোগী অন্যরা পালিয়ে যায়।

আটককৃতরা হচ্ছেন দক্ষিণ সুরমা থানাধীন বলদী গ্রামের আবু মিয়া (২৫), আব্দুল হক (২৩) ও সানজিদ (২০)। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী হুমায়ুন আহমদ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেল (খুলনা মেট্রো ল -১১-২১৫৩) থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। এদিকে ওই ছিনতাইকারীদের সহযোগী হিসেবে এক পুলিশ সদস্যদের নাম আলোচিত হচ্ছে। ব্যবসায়ী হুমায়ূন আহমদ নিজে এই অভিযোগ করেছেন। মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। কোন পুলিশ সদস্য ছিনতাইকারীদের সহযোগিতা করে থাকলে অবশ্যই তাদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এমন মন্তব্য করেছেন মহানগর পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানাগেছে- ট্যাংক লরি এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় সভাপতি হুমায়ূন আহমদ প্রায় ৪ লাখ টাকা ছিনতায়ের চেষ্টা চালায় একটি ছিনতাইকারী দল। সোমবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয়রা ৩ ছিনতাইকারীকে আটক করে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ব্যবসায়ী হুমায়ুন আহমদ বলেন- ‘সোমবার রাতে ১ টার দিকে তেলিবাজার হাজী মনজু মিয়া সিএনজি ফিলিং  স্টেশন থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। হাইওয়ে রোডে উঠার পর তার গাড়ির পিছু নেয় ২টি  মোটরসাইকেল। তিনি দ্রুত চন্ডিপুল আসলে রাস্তার অপর দিক থেকে ২ জন যুবক ডাকাত বলে চিৎকার করে তার গাড়ির দিকে আসতে থাকে। এরপর তিনি দ্রুত পাম্পে প্রবেশ পেছনে ধাওয়া করা মোটরসেইকেল দিয়েও কয়েকজন ছিনতাইকারী পাম্পে এসে তার সাথে বাকবিতণ্ডা শুরু করে।’

তিনি আরও জানান- ‘ছিনতাইকারীদের সহযোগী হিসেবে এক পুলিশ সদস্য জড়িত থাকার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। আটক তিন জনের একজন আবু মিয়া এক পুলিশ সদস্যের সাথে রাত ১১টার পর থেকে অনেকবার কথা বলেছে। যা আটকের পর আবুর মোবাইল ফোনের কললিস্ট চেক করে ধরা পড়ে। এমনকি আবুর মোবাইল থেকে ওই সময় এক কনস্টেবলের ফোনে কল করেও সত্যতা পাওয়া যায়। পরে রাতেই ঘটনাস্থল থেকে মোটরসাইকেলসহ ৩ ছিনতাইকারীকে আটক করে থানায় নিয়ে যান।’

সিলেট সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি জুবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন- ‘পুলিশের সহযোগীতায় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ছিনতাইকারীরা টাকা নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি আটক ছিনতাইকারী আবুর সাথে এক পুলিশ কনস্টেবলের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। যা আটকের পর সত্যতা পাওয়া যায়। যদি পুলিশের বিরদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে আমরা আন্দোলনে নামবো।’

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মূসা বলেন- ‘ব্যবসায়ীদের দেয়া অভিযোগটি পুলিশ খতিয়ে দেখছে। যদি পুলিশ সদস্য জড়িত হয়ে থাকেন তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ১১ অক্টোবর ২০১৭/ টিকেআর/ এমইউএ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন