আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

কারাগার না পাঁচ তারকা হোটেল!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০৬-১৯ ০০:৪১:০০

নাবীল অনুসূর্য :: ছোট্ট সবুজ লনের পরেই এক সুদৃশ্য কংক্রিটের বিল্ডিং। সামনের পুরোটাই কাচ দিয়ে ঘেরা।

দেখলে মনে হবে নির্ঘাত বড় কোনো কম্পানির অফিস। কিংবা বড় কোনো লাইব্রেরিও মনে হতে পারে। কিন্তু ওটা একটা জেলখানা। নাম জাস্টিস সেন্টার লিবেন। অস্ট্রিয়ার স্টিরিয়া অঞ্চলের লিবেন শহরে অবস্থিত বলে নামের শেষে লিবেন জুড়ে গেছে। আসল নাম জাস্টিস সেন্টার, অস্ট্রিয়ান ভাষায় জাস্টিজ্জেনট্রাম। বাংলায় বলা যায়, ন্যায়বিচারকেন্দ্র। কিন্তু ওই কারাগারে আসলে কতটুকু ন্যায়বিচার হচ্ছে, সেটি এক প্রশ্ন বটে। কারাগারের বিষয়টিই তো হলো যে অপরাধ করেছে, তাকে শাস্তি হিসেবে আটকে রাখা। যাতে বন্দিদশায় থেকে উপলব্ধি করতে পারে, সে যেটা করেছিল ভুল করেছিল। কিন্তু লিবেনের এই জাস্টিস সেন্টারে গিয়ে উল্টো মনে হতে পারে, অপরাধ করে ভালোই হয়েছে। নইলে কি আর মুফতে এমন আরামদায়ক জায়গায় থাকা যেত!

হ্যাঁ, ঘটনাটি আসলেই সে রকম। লিবেনের এই জাস্টিস সেন্টারকে জেলখানা না বলে বলা উচিত একটা বিলাসবহুল হোটেল। কোন সুবিধাটি নেই এখানে! প্রত্যেক কয়েদির জন্য আলাদা আলাদা ঘর আছে। তাও ঘিঞ্জি ও স্যাঁতসেঁতে নয়। প্রতিটি ঘরে প্রচুর প্রাকৃতিক আলো আসার ব্যবস্থা আছে। সঙ্গে আছে লাগোয়া বারান্দা। প্রতিটি কামরায় নিজে নিজে রান্না করার সুবন্দোবস্ত আছে। এমনকি কয়েদিদের অতিথি এলে তাদের সঙ্গে গল্পগুজব করার জন্য বসার আলাদা জায়গাও আছে। প্রতিটি ঘরে টিভিও আছে। জেলখানাটিতে কয়েদিদের জন্য জিম আর স্পোর্টস সেন্টারও আছে।

জেলখানাটির নকশা করেন জোসেফ হোহেনসিন। বানানো শেষ হয় ২০০৪ সালের নভেম্বরে। বেশ বড় হলেও এখানে জায়গা হয় মাত্র ২০৫ জন কয়েদির। এত অল্পজনের জন্য এত বড় আর এত সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন কারাগার অস্ট্রিয়ার সরকার কেন বানাতে গেল, সেও এক প্রশ্ন বটে। তবে সেটা খুব বড় রহস্য মনে হবে না, যখন জানবেন পৃথিবীর সবচেয়ে কম অপরাধপ্রবণ দেশগুলোর একটি এই অস্ট্রিয়া। সরকারও তাই অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার বদলে তাদের শুধরে নেওয়ার সুযোগ দিতেই বেশি আগ্রহী। সে জন্যই এমন আরামদায়ক জেলখানার বন্দোবস্ত করা।

সব মিলিয়ে জেলখানাটিকে আগামী দিনের কারাগারের প্রতিনিধি বলেই মনে করা হয়। ধরে নেওয়া হয়, অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর সব কারাগারই জাস্টিস সেন্টার লিবেনের মতো করে গড়ে তোলা হবে। তবে বিপক্ষেও মত আছে। কারণটিও সহজ, অপরাধ করে যদি এমন আরামের জীবন যাপন করা যায়, তাহলে তো বরং মানুষ অপরাধ করতে আরো উৎসাহিতই হবে।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন