Sylhet View 24 PRINT

সিলেটভিউর সংবাদ: স্কলারশিপ পেলো রিক্সাচালক শিক্ষার্থী আশরাফুল

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০২-২৪ ১০:৩৪:৫২

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :: কলেজছাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম। স্বপ্ন দেখেছিলেন মা-বাবা, ভাই-বোনকে নিয়ে সুখের একটি সংসার হবে। কিন্তু অভাগা আশরাফুলের স্বপ্ন আর পুরণ হলো না। বড় দুই ভাই বিয়ে করে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। মা-বাবাকে নিয়ে অভাব অনটনের সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। তার উপর আবার লেখাপড়ার খরচ। সব মিলিয়ে এক দূর্বিসহ জীবন কাটছে তার। কিন্তু কঠোর পরিশ্রমী এই যুবক হতাশ হননি। সারাদিন রাজমিস্ত্রীর সহকারি হিসেবে কাজ করার পর সারারাত আবার রিক্সা চালায় সে।

আশরাফুলকে নিয়ে গত কয়েক মাস আগে সিলেটভিউ২৪ডটকম-এ একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি অনলাইনে ব্যাপক সাড়া পেলে। পাঠকদের কমেন্ট বক্সে প্রশংসায় ভাসেন আশরাফুল। বিষয়টি নজরে আসে কানাডায় বসবাসরত বাঙালী প্রবাসিদেরও। পরে আশরাফুলের পরিশ্রমের প্রশংসা করে স্কলারশিপ দেয়ার উদ্যোগ নেয় কানাডিয়ান প্রবাসীদের সংগঠন সৈলী ফাউন্ডেশন।

শনিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আশরাফুলের হাতে স্কলারশিপের চেক ও ক্রেস্ট তুলে দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফজলুল জাহিদ পাভেল। এসময় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নুরুল ইসলাম, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাখাওয়াত হোসেন রুবেল, ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর মো. বশির আহমেদ, সোনালী ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখার প্রিন্সিপল অফিসার ও ট্রাস্টিয়ান সভাপতি তোফায়েল মোস্তফা তরফদার, সাংবাদিক কাজল সরকার, এএম শাহ্ আলমসহ আরও অনেকে।

এ সময় অতিথিবৃন্দ আশরাফুলের পরিশ্রম ও তার পাশে এগিয়ে আসার জন্য সৈলী ফাউন্ডেশনের প্রশংসা করেন। এভাবেই বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত লোকজনের পাশে এগিয়ে আসার জন্য প্রবাসীদের আহবান জানান। সেই সাথে এমন একটি প্রতিবেদন কারার জন্য সাংবাদিক কাজর সরকারকেও ধন্যবাদ জানান তারা।

স্কলারশিপ পাওয়ায় খুশি আশরাফুলও। সে জানায়- ‘মা-বাবা আমার জন্মদাতা। মা-বাবার সাথে একসঙ্গে বসবাস করতে চাই। কিন্তু আর্থিক অবস্থার কারণে বৃদ্ধ মা-বাবাকে গ্রামে রেখে আসতে হয়েছে। আমার মতো অসহায় ছেলের পাশে সৈলী ফাউন্ডেশন এগিয়ে আসায় আমি তাদের প্রাণভরে দোয়া করি। সেই সাথে আমার মতো অসাহয় মানুষের পাশে সব সময় প্রবাসীরা এগিয়ে আসবেন আমি সেই প্রত্যাশা করি। ’

উল্লেখ্য, মো. আশরাফুল ইসলাম হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বুল্লা ইউনিয়নের সিং গ্রামের বাসিন্দা মো. আছকির মিয়ার ছেলে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে ৪র্থ।

বর্তমানে আশরাফুল হবিগঞ্জ শহরের ফায়ার সার্ভিস রোড এলাকায় একটি বাসায় রাজমিস্ত্রীর সহকারি হিসেবে কাজ করছে। সেই সাথে শচীন্দ্র কলেজে ডিগ্রী ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত রয়েছে। মা-বাবাকে ভালো রাখতে একটি চাকরিতেই সে সন্তুষ্ট নয়। কঠোর পরিশ্রমি এই যুবক সারাদিন রাজমিস্ত্রীর সহকারি হিসেবে কাজ করার পর আবার রাতভর রিক্সা চালায়।

সকাল ১১টা থেকে রাজমিস্ত্রীর কাজে যেতে হয় তাকে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা কাজ করার পর বিকেল ৫টায় একটি টিউশন করায়। পরে কিছু সময় ঘুমিয়ে রাত ১২টার দিকে রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। নিরব রাতে সবাই যখন গভীর ঘুমে তখন গুরুত্বপূর্ণ কাজে রাস্তায় থাকা মানুষজনকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয় তার তিন চাকার রথটি দিয়ে। ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে তার রিক্সা চালানো।

দিনরাত পরিশ্রম করা এই যুবকটি মা-বাবাকে সাধ্যমতো ভালো রাখলেও নিজে থাকে একটি চাপ্টা ঘরে। যেখানে রাজমিস্ত্রীর সহকারি হিসেবে কাজ করছে, সেখানেই একটি এক চালার চ্যাপ্টা ঘরে বসবাস করছে সে। কঠোর পরিশ্রমী এই যুবক এখন স্বপ্ন দেখে একটি সরকারি চাকরি করে মা-বাবাকে নিয়ে একত্রে বসবাস করবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/কেএস/ডিজেএস

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.