Sylhet View 24 PRINT

পানির নিচে হবিগঞ্জ পৌরসভার এক তৃতীয়াংশ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৬-০৫ ১০:১৩:৩৩

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ :: জলাবদ্ধতা যেন হবিগঞ্জ পৌরবাসীর নিয়তি হয়ে দাড়িয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পৌর শহরের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। সচেতন মহলের দাবি টানা ৫ ঘন্টা বৃষ্টি হলে হবিগঞ্জ পৌরসভার এক এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় পৌরসভার অন্তত ৫০ হাজার জনসাধারণকে।

জানা যায়, ৯.০৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ১৮৮১ সালে হবিগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠা হয়। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও এখনো সেই পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা পাননি পৌরবাসী। জলাবদ্ধতা, যানজট আর ময়লা আবর্জনার সাথে যুদ্ধু করেই বসবাস করতে হচ্ছে হবিগঞ্জ পৌরসভার প্রায় দেড় লাখ মানুষকে।

পৌরবাসীর সব চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ঘন্টাখানেক বৃষ্টি দিলেই তলিয়ে যায় পৌর শহরের অনেক স্থান। আর ৪-৫ ঘন্টা বৃষ্টি হলেতো আর কথাই নেই। পানিতে তলিয়ে যায় পৌরসভার এক তৃতীয়াংশ এলাকা। অনেকের বাসা বাড়িতে পানি উঠে যায়। বন্ধ হয়ে পড়ে নি¤œ ও মধ্য আয়ের অনেক পরিবারের রান্না-বান্না ও খাওয়া-দাওয়া।

এদিকে, ঈদের মধ্যেই জলাবদ্ধতায় থাকতে হচ্ছে হবিগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দাদের। কারণ সোমবার রাতভর ও মঙ্গলবার (০৪ মে) দিনভর বৃষ্টির কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন পৌরসভার প্রায় এক তৃতীয়াংশ এলাকার মানুষ। একই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় কাদা জমে যায়। পানিতে তলিয়ে গেছে শহরের প্রধান সড়কসহ অধিকাংশ রাস্তা। ঈদ আনন্দ যেন মলিন করতে চলেছে জলাবদ্ধতা।

শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও বাস ভবন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পুলিশ সুপারের বাসভবন, সার্কিট হাউজ, ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়, শায়েস্তানগর, ইনাতাবাদ, চৌধুরীবাজার, সার্কিট হাউজ রোড, নোয়াহাটি, পুলিশ সুপারের বাস ভবন, ডাকঘর এলাকা, বগলবাজার, উত্তর শ্যামলী, নোয়াবাদ, মোহনপুর, শ্যামলী, পুরাতন হাসপাতাল সড়ক, কালিগাছ তলা, দিগন্তপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় আকস্মিক হাটু পরিমাণ পানি জমে যায়। একই সাথে ড্রেনের ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানিতে ভরে গেছে চারপাশ। ময়লা আবর্জনাযুক্ত পানির কারণে বাসা থেকে বের হতে পারছেন না কেউই। গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভের হতে হচ্ছে হাটু পরিমাণ ময়লা পানি মুড়িয়ে। অনেক বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান অনেকে।

পৌরবাসীর অভিযোগ, পানিনিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বছরের পর বছর পৌরবাসী জলাবদ্ধতার সঙ্গে যুদ্ধ করে আসলেও সমস্যা সমাধানে উদাসীন পৌর কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে শহরের শায়েস্তানগর এলাকার বাসিন্দা মো. ইমরান আহমেদ বলেন- ‘শায়েস্তানগর এলাকা পানিতে ডুবতে ভারি বর্ষণের প্রয়োজন হয় না। সামান্য বৃষ্টিই যতেষ্ট এই এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার জন্য।’

তিনি বলেন- ‘এখানে অনেক ব্যবসায়ি আছেন। তাদেরকে বর্ষা মৌসুমে নিয়মিত জলাবদ্ধতার সাথে সংগ্রাম করে চলতে হয়।’

ফায়ার সার্ভিস এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান বলেন- ‘পৌর কর্তৃপক্ষ কি করছে, তা বোঝার কোন উপায় নেই। বছরের পর বছর জলাবদ্ধতার মধ্যে বসবাস করলেও কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথাই নেই। শুধু দ্রুত সমস্যা সমাধান হবে বলে আশ্বাসই প্রদান করে যাচ্ছে।’

পুড়ান বাজার (বগলা বাজার) এলাকার ব্যবসায়ি আশোতুষ বণিক বলেন- ‘বগলা বাজার শহরের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে। অথচ এখানের সবগুলো রাস্তা একেবারে ভাঙা। আর সব সময়ই লেগে থাকে জলাবদ্ধতা।’

তিনি বলেন- ‘বিষয়টি নিয়ে অনেকবার ব্যবসায়িরা মেয়রের সাথে আলোচনা করেছি। কিন্তু ফলপ্রসু কিছুই হয়নি।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন- ‘পৌরসভার ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিস্কার করা হচ্ছে না। ফলে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় এভাবে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।’

তিনি বলেন- মাত্র ৩/৪ ঘন্টা বৃষ্টি হলে হবিগঞ্জ পৌরসভার এক তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। অথচ পৌর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।’

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র দিলীপ দাস জানান, হবিগঞ্জ পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পরিকল্পিত ভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে এ সমস্যার সমাধান করা হবে।

অভিযোগ করে তিনি বলেন- ‘পৌর সভার জলাবদ্ধতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে নাগরিকরাই দায়ি। কারণ তারা ড্রেনের মধ্যে ময়লা ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেললেই এ সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করতো না।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ০৫ জুন ২০১৯/ কেএস/ শাদিআচৌ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.