আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

কম্পিউটার-মোবাইল-ইন্টারনেটের ভিড়ে হারিয়ে গেছে রেডিও-টেপ রেকর্ডার

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৭-০৮ ১৩:১৪:৩৮

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :: হবিগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে প্রচলন আছে, একটি রেডিও বা টেপ রেকর্ডার যৌতুক না দেয়ার কারণে একাধিক বিয়ে ভেঙে গেছে! আবার কোন ব্যাক্তি বিয়েতে রেডিও বা টেপ রেকর্ডার উপহার পেলে আশ পাশের গ্রাম থেকে সেটি দেখতে অনেকে ছুটে আসতেন। আবার পড়ন্ত বিকেল কিংবা রাতে বাড়ির উঠনে টেপ রেকর্ডার বাজিয়ে সকলে একত্রিতভাবে গান, অনুষ্ঠান কিংবা খবর শুনতেন। প্রতি রাতেই গ্রামে যেন টেপ রেকর্ডারের মাধ্যমে গানের আসর বসত। বসবে না-বা কেন ? তখনকার সময়ে গ্রামের মানুষের তথ্য প্রবাহ ও বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিলো এই রেডিও এবং টেপ রেকর্ডার। এমনকি মহান মুক্তিযোদ্ধেও বিশাল অবদান রেখেছে রেডিও। কিন্তু আজ আর সেই রেডিও বা টেপ রেকর্ডার দেখা যায় না।

কম্পিউটার, মোবাইল, ইন্টারনেটের ভিড়ে রেডিও-টেপ রেকর্ডার হারিয়ে গেছে। মোবাইল, ইন্টারনেট কম্পিউটারে দক্ষ বর্তমান প্রজন্মের অনেকই হয়তো রেডিও-টেপ রেকর্ডার দু’চোখে দেখেওনি। ডিজিটাল যুগের ছোঁয়া পড়তে না পড়তে দ্রুত এগুলো হারিয়ে গেছে। জনগণের চাহিদা নেই বলে বাজারেও কিনতে মেলে না মান্ধাতা আমলের এই রেডিও-টেপ রেকর্ডার।

মূলত, বাংলাদেশে অতিথ বিনোদনের ডিজিটাল মাধ্যম বলতে ছিল রেডিও-টেপ রেকর্ডার, টেলিভিশন ও সিনেমা। কিন্তু অসচ্ছল গ্রামীণ সমাজে সকলেরই টেলিভিশন কেনা সাধ্যের বাহিরে ছিল। তাই সামান্য সচ্ছল পরিবারগুলো রেডিও-টেপ রেকর্ডার কিনতো বিনোদন উপভোগ ও খবর শুনার জন্য। পড়ন্ত বিকেল কিংবা রাতে গ্রামের বিনোদনপ্রেমী মানুষরা একত্রিত হয়ে গান, নাটকসহ বিভিন্ন ধরণের বিনোদন উপভোগ করতেন।

তবে মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে যাত্রাপালার আয়োজন করা হতো। যেটি ছিল গ্রামীণ সমাজের অন্যতম একটি বিনোদন। সারা রাত জেগে নারী-পুরুষ সকলেই দূর-দূরান্তে গিয়ে যাত্রাপালা দেখতেন।

ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদ মুরাদ বলেন- ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের একটি টেপ রেকর্ডার ছিল। আব্বা বাজার থেকে ‘অরুণ-বরুণ কিরণমালা’, ‘রূপবান’, ‘ঝিনুকমালা’, ‘শঙ্খমালা’, আপন-দুলালের কিচ্ছা’সহ বিভিন্ন যাত্রাপালার অডিও রেকর্ড নিয়ে আসতেন। আমরা সবাই মিলে শুনতাম। কিন্তু এখন আর সেই টেপ রেকর্ডার গ্রামে পাওয়া যাবে দুরের কথা বাজারেও কিনতে পাওয়া যায় না।’

বানিয়াচং উপজেলা সদরের নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. সাহেব মিয়া বলেন- ‘একটা সময় ছিল, যখন দল বেঁধে সন্ধার পর রেডিও-টেপ রেকর্ডারে অনুষ্ঠান উপভোগ করতাম। কিন্তু এখন আর দল বেঁধে গান, নাটক বা খবর শোনার জন্য কেউ অপেক্ষা করে না। এসব জায়গায় এখন দখল করে নিয়েছে ডিশ সংযোগে টিভি, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সবার হাতে এখন ভালো মানের মোবাইল ফোন আছে। যেখান থেকে তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো অনুষ্ঠান শুনতে পারে এবং দেখতেও পারে।’

একই উপজেলার ইকরাম বাজারের ব্যবসায়ি খলিলুর রহমান বলেন- ‘বেশি দিন আগের কথা না, কয়েক বছর আগেও ইকরাম বাজারে যে দোকানে রেডিও, টেপ বা টিভি ছিল সে দোকানগুলোতে বেশি বেচা-বিক্রি হতো। কিন্তু এখন আর কেউ দোকানে (বিশেষ করে চা স্টল বা খাবার হোটেল) রেডিও-টিভি দেখার জন্য কেউ আসে না। প্রত্যেক ঘরে ঘরে টিভি আছে। এছাড়া মোবাইলতো সবার হাতে আছেই।’

একই এলাকার বৃদ্ধ ফজলুল হক বলেন- ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন আমাদের গ্রামের এক বাড়িতে টেপ ছিল। সেখানে সন্ধার পরই আমরা বসে মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন গান, নাটক, পালা ও খবর শুনতাম।’

তিনি বলেন- ‘গেল কয়েক বছর ধরে রেডিও-টেপ শুনতাম দূরের কথা। চোখেও দেখিনি।’

মুক্তিযোদ্ধা জুয়েল চৌধুরী বলেন- ‘মুক্তিযোদ্ধে রেডিও’র অবদান বলে শেষ করা যাবে না। রেডিও শুনে শুনেই মূলত আমরা যুদ্ধ করতাম। কোথায় কি হচ্ছে তা জানার একমাত্র মাধ্যম ছিল রেডিও।’

তিনি বলেন- ‘শুধু তথ্য জানার বিষয়ই না। তখন রেডিওতে দেশাত্ববোধক যে গানগুলো দেয়া হতো সেগুলো শুনতে কেমন যেন দেশের জন্য ভালবাসার আরও ভেড়ে যেত। গান থেকে আমরা যুদ্ধের অনুপ্রেরণা পেতাম।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৮ জুলাই ২০১৯/কেএস/ডিজেএস

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন