Sylhet View 24 PRINT

স্বামীহারা শাহানারার তিন দশকের জীবন যুদ্ধ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৭-১২ ০০:০২:৫৫

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ :: 'আসমানিদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও..রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও'- পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের ‘আসমানি’ কবিতার চরিত্র এখনও গ্রামে প্রায়ই দেখা যায়। অনেকেই এভাবে বহু বছর ধরে শত কষ্ট নিয়ে ঝুঁপড়িতে বসোবাস করেন। কেউকেউ সাহায্য সহযোগিতা পেলেও অনেকের ভাগ্যে মানবিক সহায়তাটুকুও জুটে না। জীবন-যুদ্ধে পরাজিত হয়ে কেউকেউ বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি অথবা চুরির মতো কাজ।

তেমনি এক আসমানি ষাটোর্ধ বৃদ্ধা শাহানারা আক্তার। হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বাজার-হাটির শহীদ উল্লাহ্ হাজীর পুকুরের পাড়ে ছেঁড়া পলিথিন ও খড়কুটু দিয়ে তৈরী ঝুঁপড়িতে বসোবাস করেন তিনি। স্বামী-সন্তানহীন এই বৃদ্ধার ভাগ্যেও জুটেনি কোন সহযোগিতা। অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনরকমে বেঁচে আছেন তিনি।

কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার শরীফপুর গ্রামের আক্তার হোসেনের সাথে প্রায় ৩০ বছর আগে বিয়ে হয় শাহানারা আক্তারের। বিয়ের পর দাম্পত্য জীবনে তাদের ঘর আলো করে দুটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। ১০ বছরের মাথায় স্বামী মারা গেলে অনেক কষ্ট করে দুই সন্তানকে মানুষ করেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সেই সন্তানরা এখন আর তাঁর (শাহারা আক্তার) খোঁজ নেয়না। এমনকি দুই সন্তান কোথায় আছে তাও জানেন না তিনি। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তার আত্মীয়-স্বজনরাও।

স্বামী ও ছেলে সন্তান হারিয়ে নিঃস্ব এই বৃদ্ধা বাঁচার তাগিদে কয়েক বছর আগে শরীফপুর ছেড়ে লাখাই আসেন। সেখানে এসে বিভিন্ন বাড়িতে খাবারের বিনিময়ে কাজ শুরু করেন। উপজেলার বাজারহাটি গ্রামের শহীদ উল্লাহ্ দয়া করে পুকুর পাড়ে থাকার জায়গা দেন। সেখানে ছেঁড়া পলিথিন ও খড়কুটু দিয়ে তৈরী ঝুপড়ি ঘরে বসোবাস করেন তিনি। বৃষ্টি হলে সেই ঝুপড়িতে পানি পড়ে। ঝড়-তুফান এলেতো আর কথাই নেই।

এদিকে, কোন ধরণের সরকারি সহযোগিতা পাননা তিনি। সহযোগিতার আশায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও তার প্রতি দয়া হয়নি কারোরই। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা এবং ভোটারও না হওয়ার অজুহাতে বঞ্চিত করা হয়েছে পূণর্বাসন ও সহযোগিতা থেকে।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন- ‘আমি বয়স্ক মহিলা। ঠিকভাবে কোন কাজ করতা পারি না। বিভিন্ন রোগ বাসা বানছে শরীরে। এরপরও মানুষের বাড়িতে কাজ করন লাগতাছে (করতে হচ্ছে)। কাজ না করলে কে খাবার দিব।’

কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন- ‘স্বামী মারা যাওয়নের পর দুই পোলারে (ছেলেকে) অনেক কষ্ট করে মানুষ করছি। কিন্তু এখন আমার পুলারা কোন খবরই নেয়না। আল্লাহ্ও আমারে মরণ দেননা।’
 
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. শওকত আকবর বলেন- ‘তিনি এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা বা ভোটার না হওয়ায় বিধাবা ভাতা বা অন্যান্য সহযোগিতা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিভিন্ন সময় চাল-ডাল উত্যাদি দেয়া হয়।

তিনি খুবই গরীব, তাই যতটা সম্ভব আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ১২ জুলাই ২০১৯/কেএস/এক

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.