আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বিকাশে আসা ৩০ হাজার টাকা ফিরিয়ে দিলেন বানিয়াচংয়ের টাইলস মিস্ত্রি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৭-১৭ ০১:০৩:২৭

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :: হত্যা, ধর্ষণ, মাদকসহ দূর্নীতির একের পর এক সংবাদে দেশবাসী যখন উৎকণ্ঠিত তখন বিকাশের রং নম্বরে আসা ৩০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে সততার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের টাইলস মিস্ত্রি শিরফল মিয়া (৪০)।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে টাকার মূল মালিকের কাছে তুলে দেন শিরফল মিয়া। এ সময় উপস্থিত সকলে তাঁর প্রশংসা করেন।

শিরফল মিয়া উপজেলা সদরের বানেশ্বর বিশ্বাসের পাড়া গ্রামের ফকির চাঁন মিয়ার ছেলে। সে পেশায় একজন টাইলস মিস্ত্রি।

জানা যায়, গত ১১ জুলাই রাতে শিরপল মিয়ার ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরে (০১৭৪৬-৬১৬৪৬৭) ৩০ হাজার টাকা আসে। কিন্তু কোথায় থেকে টাকা আসল তা তিনি বুঝতে পারেননি। ভয়ে কারও সাথে বিষয়টি আলাপও করেননি তিনি। পরদিন (১২ জুলাই) তার নম্বরে পটুয়াখালি থেকে ফোন আসে। এ সময় পটুয়াখালি থেকে মো. আল আমিন নামে এক ব্যাক্তি টাকার কথা জানতে চাইলে তিনি টাকা প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেন। একই সাথে পৃথিবীর বিখ্যাত গ্রাম বানিয়াচং ঘুরে যাওয়ার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানান।

মঙ্গলবার টাকা ফেরত নিতে দুই বন্ধুকে সাথে নিয়ে বানিয়াচং আসেন আল আমিন (২৯)। আল আমিন পটুয়াখালি জেলার বাউফল উপজেলার মদনপুরা গ্রামের আব্দুস সাত্তার হাওলাদারের ছেলে। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানীতে কর্মরত আছেন।

পরে বিকেলে শিরফল মিয়া আল আমিনের কাছে তাঁর ৩০ হাজার টাকা ফেরত দেন। এ সময় টাকা ফেরত পেয়ে খুশি হয়ে শিরফল মিয়াকে ২ হাজার টাকা দিয়েছেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সাংবাদিক শিব্বির আহমদ আরজু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি শেখ সাগর আহমদ ও রেজাউল করিম।

এ টাকা ফেরত পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন আল আমিন মিয়া। তিনি বলেন- ‘যখন জানতে পারি ৩০ হাজার টাকা বিকাশের ভুল নম্বরে হবিগঞ্জের বানিয়াচং গিয়েছে তখন ফেরত পাব বলে বিশ্বাস স্থাপন হয়েছে। কারণ এখানকার মানুষ অনেক সৎ ও ভালো হিসেবে জানি। সে বিশ্বাসের প্রতিফলন আজ পেয়েছি।’

এ ব্যাপারে শিরফল মিয়া বলেন- ‘ভুল করে টাকা আসতেই পারে। তাই বলে অন্যেও টাকা আত্মসাৎ করব এমন শিক্ষা পেয়ে আমি বড় হইনি।’

এ ব্যাপারে বিশিষ্ট সমাজসেবক শেখ আজিজুর রহমান বলেন, ‘শিরফল মিয়া অতি দরিদ্রতার মাঝে থেকেও পটুয়াখালি থেকে আসা টাকা ফেরত দিয়ে বানিয়াচংয়ের সম্মান আরো বৃদ্ধি করেছেন। বর্তমান সমাজে শিরফল মিয়ার মতো নির্লোভ মানুষরা যে এখনও সততাকে আকড়ে ধরে বেঁচে আছেন সেটা এ সমাজে একটি বড় দৃষ্টান্ত।’

বানিয়াচং যাত্রাপাশা দারুল আরকাম মাদরাসার হেড ইনচার্জ মাওলানা মোশাহিদ আহমদ বলেন, ‘শিরফল মিয়ার মাঝে আল্লাহর ভয় আছে। হাদীসে বর্ণিত আছে, কেউ কারো টাকা বা অন্য কোন হক আত্মসাত করলে পরকালে তাকে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। হয়তো নিজের পুন্য তাকে দিয়ে দিতে হবে। পুন্য না থাকলে তার গুনাহ নিজের কাধে নিয়ে জাহান্নামে যেতে হবে।’

উল্লেখ্য, শিরফল মিয়া বিদেশ ফেরত এক যুবক। তিনি প্রবাস থেকে অর্থ-কড়ি খুইয়ে বাড়িতে এসেছেন প্রায় ৫ বছর। পেশা হিসেবে টাইলস মিস্ত্রি। কিন্তু ৫ সদস্যের সংসারে অর্থের টানাপোড়েন লেগেই আছে। এমতাবস্থা থেকেও শিরফল মিয়া সেই টাকার প্রতি বিন্দুমাত্র লোভ করেননি। এতে তিনি টাকা ফেরত দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৭ জুলাই ২০১৯/টিআই/ডিজেএস

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন