Sylhet View 24 PRINT

পানি নয়, নদীর নাব্যতা সঙ্কট ও দূর্বল বাঁধের কারণে বন্যা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৭-১৭ ১১:৫৫:৩৩

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ :: পানি বেশি হচ্ছে না। এরপরও ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এর একমাত্র কারণ হিসেবে নদীগুলোর নাব্যতা সঙ্কট ও দূর্বল প্রতিরক্ষা বাঁধকেই বন্যার কারণ হিসেবে দেখছেন পরিবেশবাদিরে।

তাদের মতে, ১০ বছর আগের তুলনায় এখন নদী ও হাওরে পানি অনেক কম হয়। কিন্তু এরপরও বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। সহজেই ভেঙে যায় নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ। এর একমাত্র কারণ নদীগুলোর নাব্যতা সঙ্কট ও দূর্বল প্রতিরক্ষা বাঁধ। আর এর থেকে মুক্তি পেতে নদীগুলো খনন ও প্রতিরক্ষা বাঁধ সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। একই সাথে পরিকল্পিত হাওর উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়।

পরিবেশবাদিরে ভাষ্য- শুধু নদী খনন আর বাঁধ নির্মাণ করলেই চলবে না। এমনভাবে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে যেন ১শ’ বছরের অধিক সময় ঠিকতে পারে। সেই সাথে আমজনতাসহ সার্থন্বেসী মহল যাতে বাঁধের কোন ক্ষতি করতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিয়মিত তদারকি থাকতে হবে।

এ বিষয়ে সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট শিব্বির আহমেদ আরজু বলেন- ‘আজ থেকে ১৫/২০ বছর আগে যে পরিমাণ পানি হতো এখন তার অর্ধেক পানিও হয় না। কিন্তু এরপরও বন্যা দেখা দেয়। এর একমাত্র কারণ হলো নদীর নাব্যতা কমে গেছে। আগে নদীগুলোর যে পরিমাণ পানি ধারণ ক্ষমতা ছিলো এখন এর অর্ধেকও ওই। যার ফলে অল্প পানিতেই নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যা দেখা দেয়।’

তিনি বলেন- ‘শুধু নদীর নাব্যতা সঙ্কটই নয়। প্রতিটি নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের করুণ অবস্থা। অল্প বৃষ্টিতেই নদীর বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। এই দূর্বল বাঁধগুলোকে সংস্কার করার কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। ফলে সাধারণ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হচ্ছে।’

সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন- ‘অল্প পানিতে বন্যার কবল থেকে বাঁচতে নদীগুলো খনন করতে হবে। একই সাথে শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। যা কমপক্ষে ১শ’ বছর ঠিকে। সেইসাথে বাঁধগুলোকে যেন সার্থন্বেসী মহল ক্ষতি না করতে পারে সেদিকে তদারকি থাকতে হবে।’

বাংলাদেশ পরিবশে আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন- ‘হাওর ও হাওরের মানুষ আমাদের অমূল্য সম্পদ। কিন্তু হাওর উন্নয়ন হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। যার ফলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হচ্ছে হাওরের মানুষদের। একই সাথে কমে যাচ্ছে হাওরের প্রাকৃতিক সম্পদ ও জলজ প্রাণী।’

তিনি বলেন- ‘হাওরের বুক দিয়ে যত্রতত্র রাস্তা করা হয়েছে। ফলে হাওর সম্পূর্ণভাবে বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় পানি আন্দোলিত হতে পারছে না। অথচ এখানে রাস্তাগুলো পরিকল্পতিভাবে করা হলে একদিকে যেমন হাওরের সম্পদ রক্ষা পেত, অন্যদিকে দর্শনীয় স্থান হিসেবেও পরিচিত পেত আমাদের হবিগঞ্জ।’

তোফাজ্জল সোহেল বলেন- ‘হাওর অঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করতে হবে, যেন আমাদের প্রাণী ও সম্পদের ক্ষতি না হয়। একই সাথে নদীগুলো খনন করতে হবে। তাহলেই বিভিন্ন প্রাকৃতি দূর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।’

দীর্ঘদিন ধরে নদী বাঁচাও আন্দোলনের সাথে জড়িত রয়েছে কবি ও সাহিত্যিক তাহমিনা বেগম গিনি। তাঁর মতে বন্যাসহ সব ধরণের প্রাকৃতিক দূর্যোগের জন্য দায়ি সাধারণ মানুষ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা। নদীগুলো প্রতিনিয়ত ভরাট হচ্ছে, কিন্তু খনন করা হচ্ছে না। এছাড়া দখল ও দুষণ করে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ। বিভিন্ন স্থানে দখল করা হয়েছে নদী ও প্রতিরক্ষা বাঁধ। যার ফলে অল্প বৃষ্টিতেই বন্যার দেখা দেয়।

তিনি বলেন- ‘এর থেকে বাঁচতে সাধারণ জনগণকে সচেতন হতে হবে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের নদী বাঁচাতে আরও সচেষ্ট হতে হবে। নদীগুলো খননে পাশাপশি বাঁধগুলো শক্তিশালী করতে হবে’।

এ ব্যাপারে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম বলেন- ‘ইতোমধ্যে হবিগঞ্জের অনেকগুলো নদী খনন করা হয়েছে। আমাগী বছরও আরও নদী খননের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া নদীর বাঁধগুলো সংস্কারের পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের।’

তিনি বলেন- ‘১৮শ’ ৭২ কোটি টাকা ব্যায়ে খোয়াই নদীর বাঁধ সংস্কারের প্রস্তাবনা রয়েছে মন্ত্রণালয়ে। আশা করা যাচ্ছ চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্পটি পাস হবে। আর এই কাজটি হলে আগামী একশ’ বছরের জন্য খোয়াই নদীর বাঁধ নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা করতে হবে।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৭ জুলাই ২০১৯/কেএস/ডিজেএস

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.