আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

যেভাবে 'সন্ত্রাস' উপাধি লাভ করেন নবীগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতা মুসা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৯-১৪ ১০:০৪:৪৭

এস এম আমীর হামজা, নবীগঞ্জ  :: নবীগঞ্জ পৌর এলাকার ছালামতপুর গ্রামের খুর্শেদ মিয়ার পুত্র সোহানুর রহমান মুসা (২৫)। ছোট বেলায় মা ও বাবার সাথে জড়িত হয়ে সৎ ভাইকে হত্যার মাধ্যমে অল্প বয়সে হত্যার দায়ে প্রথম জেল কেটে এসেই এলাকায় বেপোয়ারা হয়ে উঠে।

সোহানুর রহমান মুসা নামটি শুনলেই যেন সাধরণ মানুষ আতঁকে উঠে। 

প্রতিনিয়তই  শহর এবং বিভিন্ন এলাকায়  গিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনা সাথে লিপ্ত হয়ে পড়ে সে ।

মুসা কোনরকম প্রাইমারি স্কুকের গন্ডি পেরিয়ে নবীগঞ্জে বর্তমান জে,কে মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় তৎকালীন (জে,কে মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে) ষষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি হন । এর পরে আর কোন দিন স্কুলের বারান্দায় যায়নি। 

পরে শহরে বসবাসের সুবাদে  অছাত্র হয়েও ২০১২ সালের দিকে  সরকার দলীয় ছাত্রলীগ রাজনীতির সাথে জড়িত হয়।

রাজনীতিতে জড়িত হয়ার পর পরই রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় জরিয়ে ২০১৪ সালে উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা হেভেন চৌধুরীকে শহরে দিবালোকে হামলা চালিয়ে হত্যার মাধ্যমে আবারো শহরসহ হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে আলোচনা চলে আসে।

এরপর থেকে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে নবীগঞ্জসহ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ভয়ে এবং বিভিন্ন হুমকি ধামকিতে তার সৎ ভাই হত্যা মামলা তুলে নেন তার সৎ মা।

এরপরে ২০১৫ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের সহ- সভাপতির দায়িত্বও পালন করে।

রাজনৈতিক প্রভাব খাঠিয়ে বিভিন্ন এলাকায় চাদাবাঁজি, রোড ডাকাতি, বিভিন্ন প্রকার মাধক ব্যবসা, অপহরন, মারামারি,  বোর্ডার পাস মোটর সাইকেল ও গাড়ির বিক্রি সহ বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়েপড়ে ।


এরপর থেকেই নবীগঞ্জে \\\'সন্ত্রাস\\\' মুসা নামের উপাদি লাভ করে । 

নবীগঞ্জ থানা পুলিশ সুত্রে জানাযায়, তার বিরোদ্ধে ১ টি হত্যা, মাধক, আপহরন, পুলিশ এসল্ট, মারামারিসহ ৯ টি মামলা রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ১২ (সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলার পরোয়ানা থাকায় তাকে গ্রেফতারের জন্য তার দোকানে অভিযান চালায় পুলিশ । তখন তার দোকান থেকে দাড়ালো রামদা বের করে পুলিশের উপর হামলা চালায়। হামলায় আহত হন নবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক উত্তম কুমার ও উপ-পরিদর্শক ফকরুজ্জামান।  পরে রাতে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় মুসার  বাড়িতে অভিযান চালিয়ে হামলায় জড়িত থাকার অপরাধে তার বোনসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেন নবীগঞ্জ থানা পুলিশ এবং একটি প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল জব্দ করেন ।

জানাযায়, গত ২০১৮ সালের পরে জানুয়ারি মাসের ২৮ তারিখ রাতে  পুলিশ ও র‌্যাবের যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করে  মুসার পুরো বাড়ি ঘিরে প্রায় ২ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে মুসাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় যৌথবাহিনী।
এ সময় তার স্বীকারোক্তিতে ৫৬৭ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয় নিজ সয়ন কক্ষ থেকে।

এর আগে একই বছর সে দিন-দুপুরে নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডের হীরা মিয়া গালর্স স্কুলের সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্র দেখিয়ে ৩টি দোকানে হামলা, ভাংচুর, লুটপাটসহ ৩টি মোটর সাইকেলসহ ৭ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

এর আগে ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর বিকালে  মুসা তার আপন চাচা শ্রমিক নেতা হেলাল আহমদের বাড়ির সীমানায় বেড়া দিয়ে ওই পরিবারের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়।

এ বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে নবীগঞ্জ থানার  তৎকালীন সেকেন্ড অফিসার সুজিত চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের তদন্ত করার সময় মুছা ও তার পরিবারের সদস্যদের রোষানলে পড়ে। এক পর্যায়ে মুসাকে গ্রেফতার না করে ফিরে আসতে বাধ্য হয় পুলিশ

মুছার সাম্প্রতিক সময়ের এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে নবীগঞ্জ শহরে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। তার ভয়ে সাংবাদিকসহ প্রশাসনের কাছে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলতে রাজি হন না।

নবীগঞ্জের সুশীল সমাজের মানুষ দাবী করছেন মুসা নবীগঞ্জের জন্য অবিশাপ্ত হয়ে বেঁচে আছে। 
 
নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের এক ছাত্রলীগ নেতার সাথে  সিলেটভিউ২৪ ডটকমের এ প্রতিবেদকের  কথা হলে তিনি নাম প্রকাশ না করার সর্থে বলেন মুসা যখন ছাত্রলীগ পরিচয় দেয় তখন নিজের কাছে নিজেকে সবচেয়ে নিম্ন ছাত্রলীগ কর্মী মনে হয়।  একজন সন্ত্রাস কখনো মুক্তিযুদ্ধে নায়ক জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনের হাতে গড়া ছাত্রলীগের কর্মী হতে পারেনা। আমি এই সন্ত্রাসের কঠোর শাস্তির  দাবী করছি

বৃহস্পতিবার রাতে মুসা পুলিশের উপর হামলা করার পরে যখন শহরে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে তখন অনেকে তার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন বর্তমানেতো বাংলাদেশে  ইয়াবা ব্যবসামীদের বিরুদ্ধে সরকার জিরো ট্রলারেন্স এবং ক্রসফায়ারের অনুমতি দিয়েছেন কিন্তু আমাদের নবীগঞ্জের এই ইয়াবা ব্যবসায়ী সন্ত্রাস মুসাকে কেন ক্রসফায়ার করে মেরেফেলা হচ্ছে না? এমন একটা সন্ত্রাস নবীগঞ্জ বাসীর জন্য কলঙ্ক  ।  

এ রিপোর্টটি লিখা পর্যন্ত পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের প্রস্ততি চলছে বলে জানিয়ে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইকবাল হোসেন বলেন পুলিশের উপর হামলার অপরাধে জড়ি থাকায় তার বোন সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোহানুর রহমা  মুসা যে জায়গাতেই থাকুক না কেন তাকে গ্রেফতার করেই ছাড়বে পুলিশ। মুসাকে কখন ছাড় দেওয়া হবেনা


সি‌লেট‌ভিউ২৪ডটকম/১৪‌সে‌প্টেম্বর২০১৯/মিআচৌ 

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন