আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

হবিগঞ্জে সুদের জালে সর্বশান্ত অনেকের দেশত্যাগ, দিচ্ছেন আত্মাহুতি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১২-১৪ ০৯:৪৩:৫১

নিজস্ব প্রতিবেদক :: শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ‘দাদন’ (সুদ) ব্যাবসার ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছেন অনেক পরিবার। জমি বাড়ি বিক্রি করে হয়েছে দেশান্তরিত। অন্যদিকে, দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে ‘দাদন’ ব্যবসায়িরা গড়ে তুলেছেন বিশাল সিন্ডিকেট। চড়াসুদে ঋণ দিয়ে অসহায়দের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। অল্পদিনেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছেন ‘দাদল’ ব্যবসায়িরা। ব্যাংক-ব্যাসন্স ও জমি-জমার মালিক হওয়ার পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন বিশাল অট্টালিকা।

তবে দাদন ব্যবসায়িদের শীর্ষে রয়েছেন জুয়েলার্সের মালিকরা। সোনা-গহনা বন্ধক রেখে অধিক সুদে ঋণ দিয়ে তারা নিজেদের আখের গোছিয়েছেন। দেনা পরিশোধ করতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার সুযোগে টাকার পাশাপাশি হাতিয়ে নিচ্ছে মূল্যবান সোনাও। অনেকে কাটি সোনা বন্ধক দিলেও টাকা পরিশোধ করার পর পেয়েছেন দুই নাম্বার সোনা।

ধর্মী রিতিনীতি ও বাংলাদেশ সরকারের আইন অনুযায়ি ‘দাদন’ ব্যবসা সম্পূর্ণ অবৈধ হলেও প্রকাশ্যেই চলছে রমরমা এই ব্যবসাটি। দাদান ব্যবসায়িদের জালে আটকে শুধু সর্বশান্তই নয়, অনেকে দিয়েছেন আত্মহুতি। কিন্তু এরপরও টনক নড়েনি প্রশাসনের। ‘দাদন’ ব্যবসায় প্রশাসনের নজরধারী না থাকায় প্রতিনিয়িত বাড়ছে অবৈধ এই ব্যবসাটির প্রসার।

অনুসন্ধানে জানা যায়- সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অল্প সুদে ঋণ প্রদান করলেও কাগজপত্রের জায়-ঝামেলা আর নিয়মনীতি না জানার কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চান না গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল মানুষরা। শুধু তাই নয়, একই কারণে শহরের অনেক সচেতন মানুষও ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে ছুটে চলেন মহাজনদের পেছনে। ঋণ গ্রহিতাদের অসহায়ত্বের সুযোগে মুছকি হাসি দিয়ে ব্যাংকের খালি চেকের পাতা আর দলিলে সাক্ষর রেখে টাকা ধার দিচ্ছেন। চক্রবৃদ্ধি হারে আদায় করছে টাকা। সময় মতো টাকা পরিশোধ করতে না পারলে খালি চেকের পাতায় ইচ্ছামতো টাকার অঙ্ক বসিয়ে চেক ডিজঅনার মামলা করে কারাভোগ করিয়েছেন অনেককে।

তবে গ্রামাঞ্চলের চিত্রটা ভিন্ন। সেখানে কেউ টাকা নিতে গেলে সোনার গহনা, জায়গা-জমির দলিলের মুল কাগজ বন্ধক রাখা হয়। সুদ নেয়া হয় অর্ধবার্ষিকী হারে মূল টাকার ৫০ শতাংশ। আর সময়মতো পরিশোধ না করতে পারলে চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পায় টাকার পরিমাণ। টাকার পরিমাণ পরিশোদের মাত্রা ছাড়ালেই দাদন ব্যবসায়িরা দখল করে নেয় বাড়ি-জমিসহ বিভিন্ন মালামাল। এভাবেই সর্বশান্ত হয়ে এলাকা ও দেশ ত্যাগ করেছেন অনেক পরিবার। আবার ঋণের জ্বাল সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার মতো পথও বেচেঁ নিয়েছেন অনেকে।

তথ্যমতে জানা গেছে- এ সুদের বেড়াজালে আটকা পড়ে সম্প্রতি হবিগঞ্জ জজ কোর্টে সেরেস্তাদার পিযুষ কান্তি দাস ও চীফ জুডিসিয়াল কোর্টের অফিস সহকারী অসীম কুমার দাস দেনা পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন।

এছাড়া জেলা প্রশাসক অফিসের পেশকার আব্দুল কদ্দুস, ডাক্তার আব্দুল ছালাম, তেঘরিয়া আবাসিক এলাকার ড্রাইভার মাসুক, জালাল মিয়া, যুবলীগ নেতা কবির আনসারিসহ আরও অনেকেই নিরুদ্দেশ হয়েছেন।

সুদের ব্যবসার জালে শুধু দরিদ্ররাই নয়, প্রভাবশালী অনেকেও সর্বশান্ত হয়েছে এই অভিশাপে। এদের একজন দৈনিক লোকালয় বার্তার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হাসনু ইকবাল। ঋণের কঠিন জালে আটকে শহরের পুরান মুন্সেফি এলাকার নিজস্ব বাসা-বাড়ি বিক্রি করে হয়েছেন দেশান্তরি। তাদের সাথে রয়েছে যুবলীগ নেতা কবির আনসারির নামও। তিনিও এক সময় শহরে অনেক প্রভাবশালী হলেও এখন শুন্য হয়ে পড়েছেন।

সচেতন মহল মনে করছেন- প্রতিটি এলাকায় কিছু অসাধু দাদন ব্যবসায়িরা বিভিন্ন চক্রান্ত করে ফাঁসিয়েছেন অনেক অসহায় পরিবারকে। এর একমাত্র কারণ দাদন ব্যবসায় আইনের নজরদারি না থাকা। আইনের সঠিক নজরদারি থাকলে এবং দাদন ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তারা এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠত না। এ ব্যাপারে দাদন ব্যবসার দিকে প্রশাসনের কঠোর নজরদারী বাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন সচেতন মহল।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৪ ডিসেম্বর ২০১৯/কেএস/মিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন