Sylhet View 24 PRINT

রেমা-কালেঙ্গা, বন্যপ্রাণীর নিবিড় আশ্রয়স্থল

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-১৫ ১০:১৫:৫০



\\\\\\\"অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড় পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দোয়েল পাখি
চারদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম-বট-কাঠালের-অশ্বথের করে আছে চুপ
ফণীমনসার ঝুপে শটিবনে বনে  তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে।\\\\\\\" 

জসিম উদ্দিন, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) ::  হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে যখন প্রবেশ করছিলাম তখনই নিসর্গের কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার এই লাইনগুলো মনে পড়ছিল। মনোমুগ্ধকর এই বনের যতই গভীরে ঢুকছিলাম ততই নিজেকে অন্য এক সবুজ জগতে আবিষ্কার করছিলাম। সবুজের চাদরে মোড়ানো এই অভয়ারণ্যে রয়েছে প্রায় ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ, গাছপালা ও লতাপাতা। এখানকার উদ্ভিদগুলোর মধ্যে আওয়াল, সেগুন, কাঁকড়, নেউড়, হারগাজা, গন্ধরই, হরীতকী, বহেরা, জাম, ডুমুর, কাঁঠাল, চামকাঁঠাল, কাউ, কদম, রাতা, চিকরাশি, চাপালিশ, নিম, বনমালা ইত্যাদি অন্যতম। এছাড়াও ৭ প্রজাতির উভচর প্রাণি, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১৬৭ প্রজাতির পাখি। এর উল্লেখযোগ্য হল ভিমরাজ, পাহাড়ি ময়না, কাও ধনেশ, বনমোরগ, ফোটা কান্টি সাতভারলা, শ্যামা, শালিক, শামুক খাওরি, টুনটুনি ইত্যাদি। এছাড়াও আছে প্রায় ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- কালো বন্যশূকর, সাদা বন্যশূকর, বানর, হনুমান, মুখপোড়া হনুমান, খরগোশ, ছোট হরিন, মেছোবাঘ, মেছোবিড়াল প্রভৃতি। ভাগ্য ভালো থাকলে অনেকের সাথেই দেখা হয়ে যেতে পারে আপনার। বনের ভিতরে লেক এই অভয়ারণ্যকে করে তুলেছে আরও আকর্ষনীয়। 

এই অভয়ারণ্যে ঘুরে দেখতে পর্যটদের জন্য রয়েছে তিনটি ট্রেইল বা পায়ে হেঁটে যাওয়ার পথ। ত্রিশ মিনিট, এক ঘণ্টা, তিন ঘণ্টার ট্রেইলপর মধ্যে যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন আপনি। কিছুদূর এগিয়ে গেলে দেখতে পাবেন রেমা কালেঙ্গায় শাহাদাতবরণকারী বীর উত্তম আবদুল মান্নান সাহেবের কবর। তিনি এখানে সম্মুখ যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। গভীর বনে গিয়ে দেখা পাবেন অসম্ভব সুন্দর একটি লেকের। ভেবেছিলাম লেকটি প্রাকৃতিক। কিন্তু আমার ভুল ভেঙ্গে দিয়ে আমার গাইড পঞ্চাশোর্ধ মইন উদ্দিন জানালেন লেকটি আসলে কৃত্রিম। অথচ লেকের চারপাশের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মনেই হবে না যে লেকটি কৃত্রিম। বন্যপ্রাণীদের খাবার পানির চাহিদা মেটাতে নাকি এটি তৈরি করা হয়েছে জানান মইন উদ্দিন। লেকের পাশে রয়েছে একটা ওয়াচ টাওয়ার। ইচ্ছে করলে উঠে যেতে পারবেন টাওয়ারে। ওপর থেকে পুরো বনভূমি দেখার মজাই আলাদা। যত দূরে চোখ যাবে শুধুই প্রত্যক্ষ করবেন দুর্ভেদ্য জঙ্গল। তবে ওয়াচ টাওয়ারটি সংস্কারের অভাবে কিছুটা ঝুকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। সাবধানে উঠতে হবে টাওয়ারে।

১ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জঙ্গলের এই অভয়ারণ্যে শুধু গাছ-গাছালি আর পশুপাখিই নয়, এর ভিতরে রয়েছে ত্রিপুরা, সাওতাল ও উরং এই তিন উপজাতির বসবাস। যুগ যুগ ধরে মিলেমিশে এখানে বাস করছেন তারা।

যেভাবে যাবেন রেমা-কালেঙ্গা:      

ঢাকা থেকে রেমা-কালেঙ্গা যেতে হলে প্রথমে সিলেটগামী বাসে চড়ে শায়েস্তাগঞ্জ নামতে হবে। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে সিএনজি অটোরিক্সায় চুনারুঘাট বাজার। তারপর সেখান থেকে আবার সিএনজি অটোরিক্সা ভাড়া নিয়ে যেতে পারবেন রেমা-কালেঙ্গা। ভাড়া পরবে ২০০-২৫০ টাকা। তাছাড়া শায়েস্তাগঞ্জ থেকে সরাসরি সিএনজি অটোরিকসা ভাড়া নিয়ে চলে যেতে পারেন রেমা-কালেঙ্গা। ভাড়া পরবে ৩০০-৩৫০ টাকা। তাছাড়া সিলেটগামী ট্রেনে চড়ে শায়েস্তাগঞ্জ নেমে সেখান থেকে যেতে পারেন রেমা-কালেঙ্গা। সিলেট থেকে যারা রেম-কালেঙ্গা যাবেন তাদেরকে প্রথমে হবিগঞ্জ-মাধবপুরগামী বাসে অথবা যেকোনো বাসে চড়ে শায়েস্তাগঞ্জ নেমে সিএনজি অটোরিকশায় যেতে পারেন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ভূমি রেমা-কালেঙ্গা।  

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০/জেইউ/মিআচৌ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.