আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

করোনা প্রতিরোধে ছুটি নেই চা শ্রমিকদের, বাড়ছে ঝুঁকি-আতঙ্ক

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৩-২৯ ১৯:০২:১০

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশের সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে মাঠে কাজ করছে সেনাবাহীনিসহ স্থানীয় প্রশাসন। অথচ এখনও ছুটি মেলেনি হবিগঞ্জের চা শ্রমিকদের। সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণভাবেই প্রতিদিন উৎপাদন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন অবহেলিত এ শ্রমিকরা। শ্রমিক নেতাদের দাবি ছুটির জন্য বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার অনুরোধ জানালেও তারা কোন কর্ণাপাত করছেন না। আর স্থানীয় প্রশাসন বলছে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি নির্দেশনা না আসায় কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না তারা।

জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট, মাধবপুর, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলায় ২৪টি চা বাগান রয়েছে। সেখানে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় অর্ধলক্ষাধিক। আর শিশু-বৃদ্ধ মিলিয়ে এ জেলায় চা শ্রমিক পরিবারের সদস্য সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাবে। অবহেলিত এ শ্রমিকদের প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের মহামারি সময়েও মুক্তি মেলেনি। সারদেশ যখন অঘোষিত লকডাউনে তখনও তাদেরকে কাজ করতে হচ্ছে অন্যদিনের মতোই। স্বাস্থ্য সচেতনহীন এসব চা শ্রমিকদের নেই নুন্যতম নিরাপত্তা। শারীরিক দূরত্ব মানাতো দূরের কথা, মাস্ক ব্যবহারও করছেন না তারা।
শ্রমিকদের দাবি প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস ঠেকাতে সারাদেশে অঘোষিত ‘লকডাউন’ থাকার পর থেকে বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে তারা ছুটির জন্য আবেদন জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের কথায় কোন কর্ণপাত করছে না। বাধ্য হয়ে গত ২৭ মার্চ ছুটির দাবিতে অনশন কর্মসুচি পালন করে চুনারুঘাট উপজেলার নালুয়া ও আমু বাগানের শ্রমিকরা। অন্যদিকে, দেশের সকল চা বাগানের শ্রমিকদের স্ব-বেতনে ছুটির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন।
এ ব্যাপারে দেওয়ন্দি চা বাগানের শ্রমিক অরুণা সাওতাল বলেন, ‘শুনেছি করোনাবাইরাসে মানুষ মরে যায়। তাই আমরা বাগান মালিকের কাছে ছুটি চেয়েছি। কিন্তু ছুটি না দিলেতো কিছু করার নেই। বাগানে যদি কাজ করতে না আসি তাহলে না খেয়ে মরতে হবে।’
বাগান পঞ্চায়েক কমিটির নেতা স্বপন সাওতাল বলেন, ‘আমরা বাগান কর্তৃপক্ষকে স্ব-বেতনে শ্রমিকদের ছুটির জন্য অনুরোধ করে আসছি। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ আমাদের কথায় কান দিচ্ছে না। এ অবস্থা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে করোনা ঝুঁকি বেড়ে যায়।’
গত ২৭ মার্চ ‘বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন’ নেতারা শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে যে চিঠি পাঠিয়েছেন তাতে বলা হয়, ‘দেশের এই চরম সংকটময় পরিস্থিতিতে সবাইকে যখন নিজ গৃহে নিরাপদে অবস্থান করার কথা বলা হচ্ছে, তখন একই রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে চা শ্রমিকদের জন্য ভিন্ন আইন কিভাবে চালু থাকে?’
তবে বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে ছুটি না দিলেও শ্রমিকদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি বাগানে শ্রমিদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন দুই ঘন্টা করে কাজ কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলার চন্ডিছড়া চা বাগানের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন,  ‘আমরা শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য হাত ধুয়ার ব্যবস্থা রেখেছি। একই সাথে আগে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ডিউটি ছিল। কিন্তু এখন দুই ঘন্টা কমিয়ে বেলা ২টা করা হয়েছে। যেন শ্রমিকরা বাড়িতে গিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ার সময় পায় তারা।’
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সত্যজিৎ রায় বলেন, ‘চা বাগান বন্ধ রাখতে এখনও শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তবে শ্রমিকদের সুরক্ষা দিতে প্রতিটি বাগান কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। সেখানে শ্রমিকদের মধ্যে শারিরীক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি মাস্ক বিতরণ করার জন্য প্রতিটি বাগান কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। এছাড়া তাদের ছুটির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা চলছে।’
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৯ মার্চ ২০২০/কেএস/এসএইচ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন